চাষাবাদে সৌরবিদ্যুতের অবদান
নিউজ ডেস্ক

চাষাবাদে সৌরবিদ্যুতের অবদান
একমাত্র সেচভিত্তিক উচ্চফলনশীল জাতের খাদ্যশস্যের বদৌলতে এখন প্রায় ১৭ কোটি মানুষের খাদ্য চাহিদা পুরণ করা অনেকাংশেই সম্ভব হয়েছে। স্বাধীনতা উত্তর গত ৫২ বছরে শুধু ঘরবাড়ি নির্মাণে প্রায় ৭২ হাজার একর জমি ব্যবহার করা হয়েছে।
এমনকি নগরায়ন, হাটবাজার, রাস্তাঘাটে প্রতিদিন ২২০ হেক্টরের বেশি কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে। সবমিলে গত ৫২ বছরে কৃষি জমি কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। অথচ জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এরপরও দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে।
কৃষি উন্নয়নে সরকারের গবেষণা খাতে ব্যয় বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন উচ্চফলনশীল জাতের ধান, গম উদ্ভাবনের কারণে কৃষি উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ। এ প্রসঙ্গে ব্রির মহাপরিচালক বলেন, দেশে এ পর্যন্ত চারটি হাইব্রিডসহ ৭২টি উফশী ধানের জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে।
বর্তমান সরকারের আমলেই অনুমোদন পেয়েছে ২৪টি নতুন জাতের ধান। কৃষিক্ষেত্রে এ সাফল্য এসেছে ধান গবেষণায় বিজ্ঞানীদের নিরলস শ্রম আর কৃষকের নিরন্তর প্রচেষ্টার ফলে। ব্রির তথ্যমতে, উন্নত জাতের ধানের মধ্যে ৫টি জাতের ধানে ৮ থেকে ৯ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
যার কারণে ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিকট ভবিষ্যতে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৪ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট বা ব্রির কর্মকর্তারা। মূলত উচ্চফলনশীল ধানের চাষাবাদ সেচনির্ভর।
ইতিমধ্যেই সেচভিত্তিক চাষাবাদের প্রায় পাঁচ দশক অতিবাহিত হয়েছে। শুরুর দিকে সেচের অধিকাংশ জমিতে বিএডিসির সরবরাহকৃত ডিজেল চালিত লো লিফ পাম্প দিয়ে নদী থেকে পানি তুলে চাষাবাদের পাশাপাশি ইঞ্জিন চালিত অগভীর নলকূপের সাহায্যেও পানি উত্তোলন করে চাষাবাদ হতো।
সেচভিত্তিক চাষাবাদে ধানের ফলন বেশি হওয়ায় চাষীরা এই চাষাবাদের দিকে ঝুঁকে পড়ায় চাহিদা পূরণে তখন পায়ে চালিত ঢেঁকিকলের বেশ প্রচলন ছিল। এক সময় কুড়িগ্রাম জেলার পশ্চাৎপদ উপজেলা রৌমারী ও রাজিবপুরের চরাঞ্চলে মানুষের তীব্র খাদ্য সংকট ছিল।
জেলা শহর কুড়িগ্রামের চাল আটায় ঐ অঞ্চলের মানুষের খাদ্য চাহিদা পূরণ হতো। সেচভিত্তিক চাষাবাদ শুরু হলে রৌমারী উপজেলার কৃষকরা পেট্রল পাম্প বা ঢেঁকিকলের সাহায্যে মহিলা-পুরুষ মিলেই পায়ের সাহায্যে পানি তুলে চাষাবাদ করতো। দেখা গেছে, বোরো চাষাবাদের মৌসুমের শুরুতে কৃষকরা ঢেঁকিকলের পার্শ্বে খড়ের ঘর উঠিয়ে ধান কাঁটা মাড়াই পর্যন্ত সেখানেই বসবাস করতো।
ঢেঁকিকলের চাষাবাদের বদৌলতে রীতিমতো উপজেলা দু’টিতে ধান, গম চাষাবাদে এক অভাবনীয় পরিবর্তন আসে। বর্তমানে চরাঞ্চলের ঐ দুই উপজেলাসহ কুড়িগ্রাম জেলার নয় উপজেলায় ব্যাপকভাবে সেচভিত্তিক চাষাবাদ হওয়ায় মঙ্গার জেলা নামে খ্যাত কুড়িগ্রাম এখন ধানে উদ্ধৃত জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
বিশেষ করে রৌমারী, রাজিবপুর উপজেলার সহিত বৃহত্তর ময়মনসিংহ ও রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হওয়ায় এই অঞ্চলের ধানের ওপর নির্ভর করে শেরপুর, ময়মনসিংহ, জামালপুর, টাঙ্গাইল জেলায় গড়ে ওঠা চালকল শিল্পে চাহিদার সিংহভাগ ধান দিয়েই পূরণ হচ্ছে। যা শুধু সম্ভব হয়েছে সেচভিত্তিক উচ্চফলনশীল জাতের ধান উৎপাদনের কারণে।
এখন রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার চরাঞ্চলের দোঁআশ মাটিতে ধানের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে গম ও ভুট্টার চাষাবাদ হচ্ছে। অনেক সময়ই বাড়তি উৎপাদনের কারণে ক্রেতার অভাবে গম ও ভুট্টার উপযুক্ত মূল্য কৃষক পাচ্ছে না। যদি এই সব চরাঞ্চলে উৎপাদিত গম ও ভুট্টার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা সম্ভব হতো, তাহলে আরো ব্যাপকভাবে গম, ভুট্টার ও ধানের চাষাবাদ বৃদ্ধি পেত, যা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
সময় বাড়ার সাথে সাথে গোটাদেশে পেটেল পাম্প বা ঢেঁকিকলের জায়গা দখল করে নেয় ডিজেল ও বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প। দেশব্যাপী অগভীর নলকূপের পাশাপাশি গভীর নলকূপও স্থাপিত হয়। বর্তমানে বোরো মৌসুমে প্রায় ৮০ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচভিত্তিক চাষাবাদ হচ্ছে।
সূত্র মতে, গোটা দেশে ফসলের জমিতে সেচ দিতে প্রায় ১৭ লাখ পাম্প স্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে ৮৩ শতাংশ ডিজেল চালিত এবং অবশিষ্ট ১৭ শতাংশ বিদ্যুৎ চালিত। সেচ মৌসুমে সেচের পাম্প চালু রাখতে বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট পরিমাণ বিদ্যুৎ ও প্রায় ৯ লাখ টন ডিজেলের প্রয়োজন হয়। জনসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ঘরবাড়ী, শিল্প কারখানার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদাও অনেক বেড়ে গেছে।
আবার বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদনও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরও এখনও চাহিদার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ সুবিধা মানুষের কর্মের ও অর্থনীতির গতি বাড়ায়। বিদ্যুৎ মানুষের ব্যক্তি জীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন ও অর্থনৈতিক জীবনেও সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখে। এরপরও দেশের সকল মানুষকে এখনও বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
তারপরও সরকার পরিবেশ বিধ্বংসী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প সমূহ বন্ধ করে দিয়েছে ইতিমধ্যেই। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি।
এই খাতের উন্নয়নে তিন বছর আগে অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রদূত বের্নহার্ড ওয়াবেতজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে তার দেশের সহায়তারও প্রতিশ্র“তি দেন। বাস্তবিকই নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের দিকেই সরকারকে নজর দেয়া জরুরী।
অবশ্য ইতিমধ্যেই বিষয়টি অনুধাবন করে সরকারও বসতবাড়ী, শিল্পকারখানায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে সৌরবিদ্যুতের সংযোগ নেয়াকে বাধ্যতামূলক করেছে। আমরাও সৌরবিদ্যুতের সংযোগ নেয়াকে বাধ্যতামূলক রাখা যৌক্তিক বলে মনে করি।
কিন্তু যেখানে বিদ্যুতের সংযোগ হবে, সেখানে তো বিদ্যুৎ পাওয়াই যাবে। সে স্থানে সৌরবিদ্যুতের সংযোগ বাধ্যতামূলক করে লাভ কি? বরং সৌরবিদ্যুৎ খাতে সরকারিভাবে প্রণোদনা দিয়ে নাম মাত্র সুদে দীর্ঘমেয়াদি কিস্তিতে সেচ, শিল্প স্থাপনে এবং অনগ্রসরমান অঞ্চলে সৌরবিদ্যুতের সংযোগ দেয়া এখন সময়ের দাবী।
সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ‘সাসটেইনেবল রিনিউএবল এনার্জি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ বা সেড্রা কাজ করছে। সেড্রা ২০২০ সালের মধ্যে সারাদেশে পাঁচ লাখ ‘সোলার পাম্প’ স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে কাজ শেষ করেছে। সরকারও দেশে বিদ্যুৎ চালিত ও ডিজেল চালিত প্রায় ১৭ লাখ পাম্প পর্যায়ক্রমে সোলার পাম্প দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে চায়।
ইতিমধ্যেই সারাদেশে প্রায় ২৫০টির বেশি সৌরশক্তি চালিত সেচপাম্প বা সোলার পাম্প স্থাপিত হয়েছে। এখানে সুবিধা হচ্ছে, একবার কোন সেচপাম্পে সৌরবিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হলে সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত সারাদিন নিরবিচ্ছিন্নভাবে পানি উত্তোলন করা যাবে। সেখানে বিদ্যুতের লোড শেডিং এর মতো যন্ত্রণায় পড়তে হবে না।
এমনকি মাস শেষে বিদ্যুৎ বিলও পরিশোধ করতে হবে না। আবার ডিজেল চালিত পাম্পগুলোতেও ডিজেলের প্রয়োজনও পড়বে না। অর্থাৎ প্রতি বছর সেচ মৌসুমে ৯ লাখ টন ডিজেল সাশ্রয় হবে।
সংগত কারণেই সরকারকে প্রতি অর্থবছরের বাজেটে থোক বরাদ্দ রেখে পর্যায়ক্রমে গোটা দেশে সেচ পাম্পগুলোকে সৌরশক্তির আওতায় আনা উচিৎ বলে আমরা মনে করি।
যেখানে কৃষিই আমাদের মূল চালিকা শক্তি, সেখানে কৃষির উন্নতি হওয়া মানে দেশের উন্নতি হওয়া। সরকার শিল্পখাতে প্রতি অর্থ বছরেই কিছু কিছু করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তা দিয়ে আসছে। অবশ্য কৃষি খাতেও নানাভাবে সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
আমরা চাই, কৃষি খাতের সহায়তা আরো বৃদ্ধি করে সেচ পাম্পগুলোকে সৌরবিদ্যুতের আওতায় আনা হোক। যেখানে কৃষি জাতীয় প্রবৃদ্ধি বা জিডিপিতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ৫৬ শতাংশ অবদান রাখছে, সেখানে কৃষি খাতকে সমৃদ্ধ করেই দেশের গোটা অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে হবে, যার কোন বিকল্প নেই।
ইতিমধ্যেই গোটাদেশে গ্রিড এলাকার বাইরে ‘সোলার হোম সিস্টেম’ স্থাপন করে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে বাংলাদেশ। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ লাখ সোলার হোম সিস্টেম দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাম, হাট-বাজার, দোকানপাট, বসতবাড়ী, কুটির শিল্পে এমনকি নৌকায় রাতের আঁধার সরিয়ে বিদ্যুতের আলো ছড়াচ্ছে। শুধু রাতের বেলায় নয়, যেখানে গ্রিডের বিদ্যুৎ নেই, সেসব অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টা টিভি দেখা, মোবাইল ফোনে চার্জ দেয়া এখন অনেক সহজ হয়েছে।
একটু লক্ষ্য করলেই চোখে পড়ে, এখন হাটবাজারের পাশাপাশি প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে ২/৪টি কিম্বা কোথাও আরো বেশি সংখ্যক দোকানপাট গড়ে ওঠেছে। আবার প্রতিটি দোকানে রঙ্গিন টিভিও ব্যবহৃত হচ্ছে। যা শুধু সম্ভব হয়েছে, সোলার হোম সিস্টেমের বদৌলতে।
সৌরশক্তির বিদ্যুতের আলোর ঝলকানি এখন টিভি এবং বাড়ীঘরের আলোর সীমানা অতিক্রম করে নিতে হবে কৃষি চাষাবাদে উপযোগী সেচপাম্পে। অবশ্য এ কাজে বিভিন্ন এনজিও, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও বড় মাপের অবদান রাখছে।
বাস্তবে বিদ্যুৎ ও ডিজেল চালিত গভীর-অগভীর সেচ পাম্পগুলোকে পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুতের আওতায় পর্যায়ক্রমে আনা সম্ভব হলে বিপুল পরিমাণ ডিজেল সাশ্রয়ের পাশাপাশি গ্রিড বিদ্যুৎও সাশ্রয় হবে।
ফলশ্রুতিতে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্বন-ডাই-অক্সাইডের উদগীরন বন্ধের পাশাপাশি স্বল্প ব্যয়ে নানামুখী কৃষি চাষাবাদ করে দেশের বৃহৎজনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পর উদ্বৃত্ত খাদ্য রফতানি করাও সম্ভব হবে।
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- PM vows to make leprosy free Bangladesh by 2030
- Bangladesh joins `50-in-5` campaign as first-mover country to implement DPI
- রাজধানীতে আজ চালু হলো ১০টি ইউটার্ন
- কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর ন্যাশন’ উদ্বোধন করে
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ রাষ্ট্র বনাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
- ২৫তম পর্ব: কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই
- প্রতিমন্ত্রী জানালেন বাড়তি বিদ্যুত বিল এলে যা করবেন