পিলখানা হত্যা মামলার আপিল শুনানি এ বছরই
নিউজ ডেস্ক

পিলখানা হত্যা মামলার আপিল শুনানি এ বছরই
বহুল আলোচিত ও নৃশংসতম পিলখানা হত্যা মামলার সর্বোচ্চ আদালতে আপিল শুনানি চলতি বছরেই শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেছেন, আপিল বিভাগ যেদিন শুনানি শুরু করবে সেদিনই চূড়ান্ত শুনানি শুরু হবে। আমরা আদালতকে শুনানির আর্জি জানাতে পারবো। চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই শুনানি হতে পারে।
পিলখানা বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনায় করা মামলা ১৩ বছর পরও সর্বোচ্চ আদালতে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে। দেশের ইতিহাসে নৃশংসতম এই হত্যাযজ্ঞে বিস্ফোরক আইনে করা অন্য মামলার বিচার এখনো বিচারিক আদালতেই শেষ হয়নি। আসামির সংখ্যার দিক থেকে দেশের ইতিহাসে বৃহত্তর পিলখানা হত্যা মামলা।
এ মামলায় বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হবে কি না- জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘নিয়মিত যে আপিল বিভাগ বেঞ্চ আছে সেখানেই এর বিচার হবে।’
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা জানান, আলোচিত এ মামলার চলতি বছরেই শুনানি হতে পারে। আপিলের সারসংক্ষেপ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জমা দিতে হবে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষকে। সেটি চার সপ্তাহ থেকে ছয় সপ্তাহ সময়ের মধ্যে হতে পারে, এর বেশি কোনোভাবেই হবে না।
এরই মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ আপিলের সারসংক্ষেপ জমা দিয়েছেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেছেন, আমরা সারসংক্ষেপ জমা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।
পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহ ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের এক মামলার বিচারের দুই ধাপ শেষ হয়েছে বিচারিক আদালত ও হাইকোর্টে। রায় কার্যকর করতে হলে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর রিভিউ এবং রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে হবে।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, শেষ ধাপটি চলতি বছরই হতে পারে। হত্যা মামলায় হাইকোর্টে খালাসপ্রাপ্ত এবং যাদের সাজা কমানো হয়েছে, তাদের সাজা বাড়াতে আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিল শেষ করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের খালাস চেয়ে আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিলও শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রথমে উভয়পক্ষের লিভ টু আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি হবে। তারপর আপিলের শুনানি ও মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে।
তবে কিছুদিনের মধ্যেই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আপিল শুনানির উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ৩৩টি আপিল দাখিল করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছর আপিল শুনানি হতে পারে।
২০০৯ সালের ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদরদপ্তরকে (বর্তমানে বিজিবি) রক্তাক্ত করে বাহিনীর কিছু সদস্য। তাদের হাতে প্রাণ হারান ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন। এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করা হয়। হত্যা মামলার দুই ধাপ বিচার শেষ হয়েছে। আর বিস্ফোরক মামলায় এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
পিলখানা হত্যার ঘটনায় হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিপক্ষ থেকে এরই মধ্যে বেশ কিছু আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিল করা হয়েছে। আইনজীবী আমিনুল ইসলাম ২০৩ আসামির পক্ষে আপিল ও লিভ টু আপিল দাখিল করেছেন। এরমধ্যে ৮২ জনের পক্ষে আপিল এবং বাকিদের পক্ষে লিভ টু আপিল করা হয়েছে। আসামিদের পক্ষে একাধিক আইনজীবী বিলম্ব মওকুফের আবেদনসহ আপিল দাখিল করেছেন এবং করছেন বলে জানা গেছে।
আদালতের নিয়ম অনুযায়ী, রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আপিল দাখিল করতে হয়। ২০১৭ সালের নভেম্বরে রায়ের পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ১১ দফা পর্যবেক্ষণসহ ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় (ডেথ রেফারেন্স ও আপিল) প্রকাশিত হয়। কিন্তু করোনার কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। এ কারণে উভয়পক্ষের আপিল দাখিল করতে দেরি হয়। তাই প্রধান বিচারপতির অনুমতি নিয়ে বিলম্ব মওকুফের আবেদনসহ আপিল বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখায় অন রেকর্ডের মাধ্যমে আপিল দাখিল করা হয়েছে।
প্রথম আপিল দাখিলের ব্যয় ১৮ লাখ টাকা: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে প্রথম আপিল দাখিল করতে ১৮ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রথম আপিলটি করা হয়। এটি ছিল ৬৬ হাজার পৃষ্ঠার। বই বাইন্ডিং, রায়ের সার্টিফায়েড কপি, প্রতিটি চারশ পাতার ভলিয়ম তৈরি, প্রতিটি আপিল ১৪টি সেট প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখায় আনুষঙ্গিক নথিপত্রসহ দাখিল করা হয়েছে। এরপর পেপারবুক ছাড়াই মেমো নম্বর দিয়ে পরবর্তী সময়ে আরও ৪৭টি আপিল দাখিল করা হয়েছে।
বিস্ফোরক মামলার বিচার: ঢাকার বিশেষ জজ আদালতে প্রতি মাসে দুইদিন করে বিস্ম্ফোরক মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সাক্ষ্যের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিস্ফোরক আইনে করা অন্য মামলার কার্যক্রম ১৩ বছর ধরে চলছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৩৪৫ সাক্ষীর মধ্যে ১৮৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আসামিপক্ষের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, আসামিরা ১২ বছর ধরে কারাগারে আছে। ২৫৬ আসামির ১০ বছর করে সাজার মেয়াদ ছিলো। তাদের সাজা ভোগ শেষ হয়েছে। কিন্তু বিস্ফোরক মামলা বিচারাধীন থাকায় তারা মুক্তি পাচ্ছে না। ন্যায়বিচারের স্বার্থে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
মামলার মোট আসামি ৮৩৪ জন। এরমধ্যে ২৪ জন মারা গেছে এবং পলাতক ২০ জন। দুটি মামলার একই আসামি হওয়ায় তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রতি মাসে দুই থেকে তিন দিন মামলার কার্যক্রম চালানো হয়।
২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ডের (ফাঁসি) রায় বহাল রাখেন। ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেন হাইকোর্ট। খালাস পান ৪৯ আসামি।
- কর্নেল (অবঃ) শহীদ উদ্দিন খানের যত অপকর্ম
- দুর্নীতিবাজ (অবঃ) কর্নেল শহীদকে সাধু বানানোর চেষ্টা কনক সারোয়ারের
- স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বেতন আদায় স্থগিত চেয়ে রিট
- হাইকোর্টে স্থায়ী নিয়োগ পেলেন ১৮ বিচারপতি
- ভার্চুয়াল আদালতে শুনানিতে হাইকোর্টে তিন বেঞ্চ গঠন
- আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত বাংলাদেশের শিশু আদালত
- মুক্তি পেলেন ১৭০ কারাবন্দী
- সব জেলায় পিসিআর ল্যাব স্থাপনে রিট
- জনসমাগম দেখে মনে হয় না দেশে মহামারি আছে: হাইকোর্ট
- জঙ্গি সালেহীনের ফাঁসি বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ