ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

অবশেষে সাংবাদিকদের ওপর হেফাজতের হামলার দায় স্বীকার মামুনুলের!

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ৩ এপ্রিল ২০২১  

মামুনুল হক

মামুনুল হক

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতার নামে দেশব্যাপী তাণ্ডব চালানোর সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানোর দায় স্বীকার করেছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শুক্রবার (২ এপ্রিল) জুমার নামাজ শেষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এক সমাবেশে মামুনুল হক বলেন,‘ভুলক্রমে সাংবাদিকদের ওপর হেফাজতের কিছু কর্মী হামলা করে থাকতে পারে। আমরা এজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।’ তার এই স্বীকারোক্তির মাধ্যমে সাংবাদিকদের ওপর হেফাজতের নিপীড়নের বিষয়টির সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হল বলে জানান সাংবাদিকরা। সেইসাথে তারা এই ঘটনার জন্য হেফাজতের কর্মীদের বিচার দাবি করে বলেছেন, সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার দায় স্বীকারের মাধ্যমে প্রমাণ হল, হেফাজত একটি উগ্র সংগঠন।

জানা গেছে, স্বাধীনতা দিবসের দিন ২৬ মার্চ রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভের নামে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে হেফাজত কর্মীরা। এসময় তারা পুলিশের ওপর হামলা করে। তাদের হামলার ছবি তুলতে গেলে পেশাগত দায়িত্বপালনকারী সাংবাদিকদের ওপরও হামলা চালায় তারা। এসময় অন্তত ১৭ জন সাংবাদিক আহত হন। হামলার শিকার অধিকাংশ ফটো সাংবাদিক। হেফাজত কর্মীদের ওপর হামলার পর দেশব্যাপী সাংবাদিকরা এর নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছিলেন। কিন্তু এতদিন হেফাজত বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিলো।

সাংবাদিকরা জানান, শুধু ২৬ মার্চ নয়, টানা তিনদিন ধরে আন্দোলনের নামে ভাংচুরের সময় আরও অনেক সাংবাদিকদের নির্যাতন করে হেফাজতের কর্মীরা। গত ২৮ মার্চ হরতালের দিনে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শিমরাইল, সানারপাড় এলাকায় অবরোধ করে হেফাজতের কর্মীরা। এসময় সংবাদ সংগ্রহে গিয়ে দৈনিক সংবাদের নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি সৌরভ হোসেন সিয়াম মারধরের শিকার হন। শুধু মারধর নয়, হেফাজত কর্মীরা তাকে চার কালেমা পাঠ করিয়ে মুসলিম ধর্মীয় পরিচয় নিশ্চিত করে। ওইদিন রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সিয়াম পোস্ট করেন,‘রোববার দিনভর সংবাদকর্মীদের প্রতি হিংস্রতা দেখিয়েছে হেফাজতের হরতালে থাকা পিকেটাররা। হেফাজতের হামলার শিকার আমি সৌরভ হোসেন সিয়াম নিজে। তাদের কাছে আমার পরিচয় নিশ্চিত করতে হয়েছে। চার কালেমার দুই কালেমা মুখস্থ বলতে হয়েছে। কয়টা সুরা মুখস্থ তা জানাতে হয়েছে। নামের একটা অংশে সিয়াম (তাদের মতে সৌরভ হিন্দুয়ানী নাম) থাকাতে তাদের স্বস্তি হয়েছে… বিশ থেকে বাইশ মিনিট একটা গাছ কাটার করাত কলে অবরুদ্ধ ছিলাম। চারদিকে ঘিরে ছিল দাড়ি-টুপিওয়ালা তৌহিদি জনতা (হ্যাঁ, আমি তাদেরকে এভাবেই চিহ্নিত করতে চাই) প্রাণ নিয়ে বেঁচে ফিরতে পেরেছি এটাই অনেক।’

মামুনুল হকের দায় স্বীকারের বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানান, ২০১৩ সালেও হেফাজত শাপলা চত্বরে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছিলো। তাদের কর্মীরা নারী সাংবাদিককেও শ্লীলতাহানি করেছিল সেসময়। সংগঠনটি শুধু সাম্প্রদায়িকই নয়, তারা নারীর প্রগতিবিরোধী। এবারেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং কালেমা পড়ে মুসলমান প্রমাণ দেওয়াতে বাধ্য করার ঘটনাই প্রমাণ করে এরা দেশকে আফগানিস্থানে পরিণত করতে চায়। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি সচল রাখতে হলে এই জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীকে কঠোর হাতে দমন করার বিকল্প নাই বলেও জানান বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়