কর্নেল (অবঃ) শহীদ উদ্দিন খানের যত অপকর্ম

নিউজ ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ০৮:৫৭ পিএম, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সোমবার

অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানের বিশাল সম্পত্তির মালিক হওয়া, লন্ডনে স্ত্রী কন্যাসহ বিলাসবহুল জীবন যাপন এবং সম্প্রতি তার ও তার স্ত্রী ও কন্যাদের বাংলাদেশের বিচার বিভাগ কর্তৃক কারাদণ্ড প্রদান ও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছে।

কর্নেল (অবঃ) মোঃ শহীদ উদ্দিন খান ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালের ১৫ মার্চ জাতিসংঘ মিশন মনুক্কো কঙ্গোতে যান। ২ মাস পর মিথ্যা শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে মিশন হতে নাম প্রত্যাহার করে দেশে আসেন। অধিনায়ক হিসেবে ৩০ রাইফেল ব্যাটালিয়নে বদলী হন।

পরবর্তীতে, তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬ রাইফেল ব্যাটালিয়নে আন্তঃ বদলি করা হয়। ৬ রাইফেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কর্মরত থাকাকালে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসে।

২০০৪ সালের ২৮ নভেম্বর হতে ১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৫ পর্যন্ত তৎকালীন ঢাকায় বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় কোর্ট মার্শালে তার বিরুদ্ধে সর্বমোট ২৮টি অভিযোগ প্রমাণ হলে তাকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সেনানিবাসে অবাঞ্চিত হন।

মাল্টি লেভেল মার্কেটিং কোম্পানী ডেসটিনি-২০০০ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল আমিন এর সাথে অবৈধ মানিলন্ডারিং ব্যবসার সাথে জড়িত থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া কোটি কোটি টাকা যুক্তরাজ্যে বিনিয়োগ করেন।

তিনি কুমিল্লায় তার শ্বশুরের মালিকানাধীন বন্দিশাহী কোল্ড স্টোরেজ নামে নাম সর্বস্ব একটি প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েকশগুন উচ্চ মূল্যে বিক্রয় করে প্রাপ্ত টাকা লন্ডনে পাচার করেন।

২০০৯ সালে প্রচ্ছায়া লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে স্ত্রী ফারজানা আনজুম, কন্যা- শেহতাজ মুনাসি খানসহ মোট ৫ জনের বোর্ড অব ডাইরেক্টরস এর মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচলনা করেন। কোম্পানীটিতে নিজস্ব সেটআপের মাধ্যমে অগোচরে বেনামী, মামলাযুক্ত, ঝামেলাপূর্ণ, বিবাদমান এবং অবৈধ জমি নিজ/বেনামে ক্রয়-বিক্রয় এর মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন।

পরবর্তীতে ২০১৬ সালে ফাউন্ডেশনের নাম পরিবর্তন করে সিতারা সালেহা ফাউন্ডেশন রাখেন। সিতারা-সালেহা ফাউন্ডেশনটি তার স্ত্রী ফারজানা আনজুম, কন্যা-শেহতাজ মুনাসি খান ও পারিসা পিনাজ খানসহ পরিবারের মোট ০৭ জন সদস্যর এক্সিকিউটিভ কমিটির মাধ্যমে পুনরায় চালু করেন।

শ্বশুর বাড়িতে গাজিপুর হাউস কমপ্লেক্স নামে ৫ তলা বিল্ডিং তৈরী করেন তিনি। ২০১৩ সালে কুমিল্লার কাপ্তান বাজারে শ্যালক মশিউর রহমানের নামে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন হতে অনুমোদন নিয়ে ০৫ কোটি টাকা খরচ করে ০৫ তলা তার শ্যালক কাজী মশিউর রহমান ও তার শ্বাশুড়িকে বঞ্চিত করে নিজ স্ত্রী-সন্তানদের নামে ভাগ বাটোয়ারা করে প্রতারণা করেন।

২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে নাগরিকত্ব লাভের জন্য লাখ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করেন। তার স্ত্রী ফারজানা আনজুমের নামে শহীদ ওই অর্থ বিনিয়োগের নামে বিদেশে পাচার করে। মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেয়নি। দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের উইম্বলডনে পরিবারসহ বসবাস এর মাধ্যমে শহীদ এই অঞ্চলের ক্ষমতাসীন এমপি এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ডকে ২০ হাজার পাউন্ড তসরপ দেন।

কর্নেল (অবঃ) শহীদ লন্ডনের ইলিনর স্ট্রিট এ যমুনা ইনভেস্টমেন্ট এন্ড প্রোপার্টিজ লিমিটেড নাম নামক মাল্টি মিলিয়ন ডলার বিজনেস এন্টারপ্রাইজ গড়ে তুলেছেন, যার ঠিকানা- ইউনিট-২৯, বো ট্রাইয়েঙ্গেল সেন্টার,ইলিনর স্ট্রিট, ই৩৪, লন্ডন, যুক্তরাজ্য। ওই ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তিনি ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করেন।

এছাড়া তিনি গত ২০১৯ সালের ১৪ মে আস্থা নাউ লিমিটেড নামে আরও একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। যার ঠিকানা ইন্টারন্যাশনাল হাউস, ৬৪ নীল স্ট্রিট, লন্ডন।

কর্নেল (অবঃ) শহীদ লন্ডনের অভিজাত এলাকা ফ্লিট স্টিটস্থ এপেক্স ট্যাম্পেল কোর্ট হোটেল সংলগ্ন স্ত্রীর নামে ক্রয়কৃত একটি বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে বসবাস করেন।

তিনি মিলিনিয়াম বিজ সংলগ্ন এলাকায় বিশাল অংকের টাকায় আরো একটি এপার্টমেন্ট কিনেছেন। তিনি লন্ডনে প্রায় ১২,৫০,০০০ পাউন্ড খরচ করে ২৩৯ ওয়েস্ট বার্নিস লেন, নিউ মালডেন, লন্ডনে আরও একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন।

কর্নেল (অবঃ) শহীদ যুক্তরাজ্যে স্ত্রী এবং মেয়েদের নিয়ে রাজকীয় স্টাইলে জীবনযাপন এবং চলা ফেরা করছেন। তিনি তার ব্যবসার আড়ালে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার করেছেন।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাদরাসা ও ইসলামি শিক্ষার প্রসারের আড়ালে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ তার ৫৪টি ব্যাংক আকাউন্টের খোঁজ পেয়েছে।

আয়কর ফাঁকির দায়ে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানকে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত এ সাজা দেয়।

আসামি শহীদ উদ্দিন খান একজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা হওয়া সত্ত্বেও তার প্রকৃত আয়-ব্যয় ও সম্পদের তথ্য গোপন করায় তাকে নয় বছরের সাজা দেয়া হয়। ।

তিনি আয়কর রিটার্ন দাখিলে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিন অর্থবছরে ১৭ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ১০৭ টাকা আয়কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে আসামিকে তিনটি ধারায় মোট ৯ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে একটি ধারায় এক বছর, আরেকটি ধারায় তিন বছর এবং অন্য আরও একটি ধারায় পাঁচ বছর কারা ভোগ করতে হবে তাকে। আসামি গ্রেফতার হওয়ার অথবা আত্মসমর্পণ করার পরে পর্যায়ক্রমে এ দণ্ড কার্যকর হবে।

এর আগে অস্ত্র মামলায় ১০ নভেম্বর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল শহীদ উদ্দিন খানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। গত বছর ১৭ জানুয়ারি রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আসামির বাসায় অভিযান চালিয়ে দুটি পিস্তল, ছয়টি গুলি ও দুটি শটগান উদ্ধার করা হয়।

নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে সরকার ও রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি ও জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আসামি শহীদ।

কর্নেল (অবঃ) শহীদ গত ১০ বছরে ভূমি জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা আয় করেছেন। এ পর্যন্ত কোন মামলায় স্বশরীরে হাজির না হয়ে লন্ডনে অপরাধের কারণে ইন্টারপোল থেকে তার বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে।