নড়াইলে এমপি মাশরাফির যে বক্তব্য স্পর্শ করেছে সবাইকে

নিউজ ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ১১:২৭ এএম, ২০ মে ২০২১ বৃহস্পতিবার

সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা

সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা

গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে কাইজ্যা-বিবাদ মীমাংসায় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা নেতাদের ও গ্রাম্য মাতব্বরদের উদ্দেশ করে যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা সবার মাঝে আলোড়ন ফেলছে।

বুধবার (১৯ মে) দুপুরে সদরের বাঁশগ্রাম ইউনিয়নের গোপালপুর, হোগলাডাঙ্গা, কামাল প্রতাপ ও হবখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মানুষের সঙ্গে দেখা করে কাইজ্যা-বিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। পাশাপাশি এলাকার অবহেলিত রাস্তা, কালভার্ট, স্কুল, মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ঈদের পর তার নির্বাচনী এলাকায় এসেছেন। তিন-চারদিন ধরে কাঠফাটা রোদ ও বৃষ্টিতে ভিজে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়, সাধারণ মানুষের সমস্যা ও সমাধানের প্রাণপণ চেষ্টা, রাস্তাঘাটের উন্নয়নে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে কি-না তা সরেজমিনে পরিদর্শন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো ও মানুষের প্রত্যাশা জানতে ছুটে চলেছেন।

বিভিন্ন এলাকার বিবাদ মীমাংসার চেষ্টাও করতে দেখা গেছে তাকে। ইতোমধ্যে লোহাগড়া উপজেলার ইটনা ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের একটি বিবাদ মীমাংসা করেছেন। সেখানে দীর্ঘদিন পরে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার (১৮ মে) বিকেলে ইটনা এসপিএল প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ওই বিবাদ মীমাংসায় সবার উদ্দেশে দেয়া একটি বক্তব্য মানুষের হৃদয় স্পর্শ করেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ যাতে বুঝতে পারে এমন সাবলীল ভাষায় দেয়া বক্তব্যটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

মাশরাফি তার বক্তব্যে বলেন, ‘ঈদের নামাজ আপনারা ৩০টা রোজা রেখেও পড়তে পারেননি! অমুক নেতা ঢাকায় বসে বলছেন মাইরে দিয়ে আয়, আপনি মেরে দিলেন! মাইরে দিয়ে এসে আপনার কী হলো আপনি বুঝলেন না। সে কি আপনার মামলা লড়ে? কোনো দিন লড়েছে? জেল যা খাটার তা তো আপনারাই খাটছেন, নাকি? খাটছেন না? তারা আপনাদের কী দেয়? খাইতে দেয়? এই ধরেন আমার কথায় আপনারা এইগুলা করতেছেন, ধইরে নিলাম! আমি আপনাকে খাইতে দি? পরতে দি? ছেলেমেয়ের পড়াশোনা করাই? হাসপাতালে ভর্তি করাই? তাহলে আমি কিসের নেতা! আমার কথায় আপনি আরেকজনকে মেরে ফেলবেন!’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কেউ মারামারি করবেন না। মারামারি করবেন তো খবর আছে। এবার কিন্তু কোনো পিরিত হবে না!’

বিবাদ নিরসনে বিভিন্ন পরামর্শ দেন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এই অধিনায়ক।

এসময় লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আশিকুর রহমানসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও এলাকার প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন।

লোহাগড়া থানার ওসি সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, ‘ইটনা ইউনিয়নের পাংখারচর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। এই গ্রামবাসীর নামে হত্যাসহ ২২টি মামলা ছিল। দেড় বছর আগে উভয় পক্ষ সম্মিলিতভাবে মামলাগুলো মীমাংসা করে ফেলে। পরে পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সবাইকে মিলিয়ে দেয়া হয়। মীমাংসার দেড় মাস পর থেকে আবার বিরোধের সৃষ্টি হয়। এবার নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজার উপস্থিতিতে মীমাংসা করা হলো। আশা করি, এখন থেকে এলাকাবাসী শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করবে।’

মাশরাফি বিন মর্তুজার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) জামিল আহম্মেদ সানি বলেন, ‘সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা ১৬ মে ঢাকা থেকে নড়াইলে আসেন। তিনদিন ধরে নির্বাচনী এলাকা লোহাগড়া উপজেলা ও নড়াইল সদর উপজেলার আট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রখর রোদ উপেক্ষা করে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঘুরে বেড়ান। প্রতিদিন সকালে বাসা ও অফিসে আগত সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে এলাকার উন্নয়নে মতবিনিময়, বিভিন্ন সড়কের চলমান উন্নয়নমূলক কাজের গুণগত মান দেখতে সরেজমিনে পরিদর্শন, নদীভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন, বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন, সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনছেন। এসবের পাশাপাশি মঙ্গলবার ইটনা ইউনিয়নের একটি গ্রামের দীর্ঘদিন ধরে বিরাজমান একটি বিবাদের মীমাংসা করেছেন।’