যেসব ছোট আমলে বেশি নেকি

ধর্ম ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ০১:০৩ পিএম, ১২ জুন ২০২১ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মহান আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাকে ভালোবাসেন। মুমিন বান্দাদেরকে বেশি বেশি পূণ্য দান করতে চান। কখনো বান্দার ছোট আমলকে বেশি সওয়াব দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন। কোরআন ও হাদিসে সেসব আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। তাই ছোট ছোট আমলকেও গুরুত্ব সহকারে আদায় করতে হবে। তার মধ্যে কিছু আমল ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো।

আমল : ১
প্রত্যেক অযুর পর কালেমা শাহাদত পাঠ করুণ (আশহাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ) । এতে জান্নাতের ৮টি দরজার যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৩৪।
আমল : ২
প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে আয়াতুল কুরসি পাঠ করুণ এতে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতে যেতে পারবেন। সহিহ নাসাই, সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস নং- ৯৭২।
আমল : ৩
প্রত্যেক ফরজ সালাত শেষে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ৩৩ বার আল্লাহু আকবার এবং ১ বার (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর) পাঠ করুণ এতে আপনার অতীতের সব পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ১২২৮। সেই সঙ্গে জাহান্নাম থেকেও মুক্তি পেয়ে যাবেন কেননা দিনে ৩৬০ বার এই তাসবিহগুলো পড়লেই জাহান্নাম থেকে মুক্ত রাখা হয় আর এভাবে ৫ ওয়াক্তে ৫০০ বার পড়া হচ্ছে। সহিহ মুসলিম, মিশকাত হাদিস নং- ১৮০৩) ।
আমল : ৪
প্রতিরাতে সুরা মুলক পাঠ করুণ এতে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। সহিহ নাসাই, সহিহ তারগিব, হাকিম হাদিস নং- ৩৮৩৯, সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস নং- ১১৪০।
আমল : ৫
রাসূল (সা.)-এর উপর সকালে ১০ বার ও সন্ধ্যায় ১০ বার দরুদ পড়ুন এতে আপনি নিশ্চিত রাসূল (সা.)-এর সুপারিশ পাবেন। তবরানি, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৬৫৬ ।
আমল : ৬
সকালে ১০০ বার ও বিকালে ১০০ বার ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পড়লে সৃষ্টিকুলের সমস্ত মানুষ থেকে বেশী মর্যাদা দেয়া হবে। সহিহ আবু দাউদ, হাদিস নং- ৫০৯১। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়। (তিরমিজি : ৩৪৬৪)
আমল : ৭
সকালে ১০০ বার ও সন্ধ্যায় ১০০ বার সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পাঠ করলে কিয়ামতের দিন তার চেয়ে বেশী সওয়াব আর কারো হবে না। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং- ২৬৯২।
আমল : ৮
সকালে ও বিকালে ১০০ বার সুবহানাল্লাহ, ১০০ বার আলহামদুলিল্লাহ্, ১০০ বার আল্লাহু আকবার এবং ১০০ বার লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর পাঠ করলে অগণিত সওয়াব হবে। নাসাই, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৬৫১।
আমল : ৯
বাজারে প্রবেশ করে- (লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়্যুহয়ী ওয়া য়্যুমীতু ওয়া হুয়া হাইয়ুল লা য়্যামূত, বিয়াদিহিল খাইরু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন কাদীর)পাঠ করুণ এতে ১০ লাখ পুণ্য হবে, ১০ লাখ পাপ মোচন হবে, ১০ লাখ মর্যাদা বৃদ্ধি হবে এবং জান্নাতে আপনার জন্য ১ টি গৃহ নির্মাণ করা হবে। তিরমিজি, হাদিস নং- ৩৪২৮,৩৪২৯।
আমল : ১০
বাড়িতে সালাম দিয়ে প্রবেশ করুণ এতে আল্লাহ তা’লা নিজ জিম্মাদারিতে আপনাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ৪৯৯, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৩১৬।
আমল : ১১
জামাতে ইমামের প্রথম তাকবীরের সঙ্গে ৪০ দিন সলাত আদায় করুন এতে আপনি নিশ্চিত জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন। তিরমিজি, সিলসিলাহ সহিহাহ, হাদিস নং- ৭৪৭, সহিহ তারগিব, হাদিস নং- ৪০৪)।
আমল : ১২
প্রতিমাসের আয়ের একটা অংশ এতিমখানা বা মসজিদ মাদ্রাসা বা গরিব-দুখি, বিধবা ও দুস্থদের মাঝে দান করবেন হোক সেটা অতি অল্প এতে আপনি আল্লাহ তা’লার কাছে জিহাদকারির সমতুল্য হবেন। সহিহ বুখারি, হাদিস নং- ৬০০৭।
আমল : ১৩
মহিলারা ৪টি কাজ করবেন, ১- ৫ ওয়াক্ত সলাত ২- রমজানের সিয়াম, ৩- লজ্জাস্থানের হেফাজত, ৪- স্বামীর আনুগত্য করুণ এতে জান্নাতের যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন। সহিহ ইবনু হিব্বান, হাদিস নং- ৪১৬৩ ।
আমল : ১৪
মসজিদে ফজরের সালাত আদায় করে বসে দোয়া জিকির পাঠ করুণ এবং সূর্য উঠে গেলে ২ রাকাত চাস্তের সালাত আদায় করুণ এতে প্রতিদিন নিশ্চিত কবুল ১ টি হজ্জ ও উমরার সওয়াব পাবেন। তিরমিজি, তারগিব হাদিস নং- ৪৬১।
আমল : ১৫
প্রতিটি ভালো কাজ ডান দিক দিয়ে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা।
আমল : ১৬
ঘুম থেকে উঠে ঘুমের দোয়া পড়া।
আমল : ১৭
বাথরুমে যেতে দোয়া পড়ে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা, বের হওয়ার সময় ডান পা দিয়ে বের হয়ে দোয়া পড়া। (বাথরুমে কোন দোয়া পড়া যাবে না)
আমল : ১৮
-অযুর পূর্বে মিসওয়াক করার অভ্যাস করা। -অযুর শুরুতে এবং শেষে হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়া।
আমল : ১৯
ঘর থেকে বের হওয়ার সময় ডান পা দিয়ে দোয়া পড়ে বের হওয়া এবং প্রবেশের সময়ও ডান পা দিয়ে প্রবেশ করে সালাম দেয়া। যদিও ঘরে কেউ না থাকুক না কেন সালাম দেয়া সুন্নাহ, আল্লাহর হুকুম। যদি ঘরে কেউ না থাকে তবে এই সালাম ঘরের ফিরিশতাদের জন্য।
আমল : ২০
মসজিদে ডান পা দিয়ে দরুদ ও দোয়া পড়ে ঢুকা এবং বাম পা দিয়ে দরুদ ও দোয়া পড়ে বের হওয়া।
আমল : ২১
রাস্তার ডানপাশে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা। না পারলে ভিন্ন কথা।
আমল : ২২
ফরজ সালাত শেষে হাদিসে বর্ণিত যিকির ও দোয়ার আমল করা। ফজর ও মাগরিবের পর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়া, তিন কবুল পড়ে শরীর দম করা, ইত্যাদি হাদিসে বর্ণিত আমল করা।
আমল : ২৩
আযানের জবাব দেয়া, আযানের পর হাদিসে বর্ণিত দোয়া পড়া। (হাত উত্তোলন না করে) -চলতে ফিরতে ছোট বড় সকলকে সালাম দেয়া। সালাম দিয়ে কথা শুরু ও শেষ করা। শুদ্ধভাবে সালাম দেয়া।
আমল : ২৪
জামা ও জুতা পরার সময় ডান দিক থেকে পড়া এবং খুলার সময় বামদিকে আগে খুলা। সম্ভব হলে হাদিসে বর্ণিত দুয়া মুখস্থ করে আমলের অভ্যাস করা।
আমল : ২৫
পানি খাওয়ার সময় ৬টি সুন্নত ভালোভাবে মেনে খাওয়ার চেষ্টা করা।
আমল : ২৬
ভাত বা যে কোনো খাবার খাওয়ার সময় সমতল জায়গায় বসে দস্তরখানা বিছিয়ে বিসমিল্লাহ বলে দোয়া পড়ে খাওয়া, কিছু পরে গেলে তুলে ধুয়ে খাওয়া, খাওয়া শেষে আলহামদুলিল্লাহ্ পড়া।
আমল : ২৭
ঘুমানোর আগে সুরা মূলক তিলাওয়াত করা, তিন ক্বুল(ইখলাস,ফালাক্ব,নাস) পড়ে তিনবার শরীর দম করা, ঘুমের দুয়া পড়া, আয়াতুল কুরসী পড়া, সুরা কাফিরুন পড়ে ডান কাত হয়ে শোয়া।
আমল : ২৮
ঘুমের মাঝখানে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখলে উঠে বামপাশে তিনবার থু থু ফেলা এবং আউযুবিল্লাহি মিনাশ শাইত্বনির রজিম পড়ে আল্লাহর কাছে শয়তানের হাত থেকে পানাহ চাওয়া।
আমল : ২৯
আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা :-
‘‘কেউ যদি চায় যে তার মূলধন বৃদ্ধি করা হোক এবং বয়স দীর্ঘ করা হোক, তবে তাকে বল সে যেন আত্নীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’’ (বুখারী, মুসলিম)
আমল : ৩০
২টি পবিত্র হারামে (মক্কা ও মাদীনা) সলাত পড়া :-
‘আমার এই মাসজিদে সালাত পড়া অন্য কোথাও ১ হাজার বার সালাত পড়ার চেয়েও উত্তম, শুধুমাত্র মাসজিদুল হারাম ছাড়া এবং মসজিদুল হারাম এ সালাত পড়া অন্য কোথাও একশ হাজার বার সালাত পড়ার চেয়ে উত্তম।’ [আহমাদ, ইবনে মাজাহ]
আমল : ৩১
জামা’আতে সালাত পড়া :-
‘জামা’আতে সালাত পড়া একাকী সালাত পড়ার চাইতে ২৭ গুন বেশী মর্যাদার।’’ [বুখারী, মুসলিম]
আমল : ৩২
ইশা এবং ফজর জামা’আতে পড়া :-
‘যে ব্যক্তি ইশার সালাত জামা’আতে পড়ল সে যেন অর্ধেক রাত ইবাদাত করল। আর যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা’আতে পড়ল সে যেন পুরো রাত ইবাদাত করল।’ (মুসলিম)
আমল : ৩৩
নফল সালাত বাসায় পড়া :
‘ফরজ সালাত ছাড়া মানুষের সালাতের মধ্যে সেই সালাত উৎকৃষ্ট, যা সে ঘরে পড়ে।’’ [বুখারী , মুসলিম]
আমল : ৩৪
জুম’আহ র দিনের ইবাদাত গুলো পালন করা :
‘যে জুমু’আহর দিনে গোসল করে , তারপর প্রথম খুৎবার পূর্বেই উপস্থিত থাকে, পায়ে হেঁটে আসে, ইমামের কাছে বসে এবং মনোযোগ দিয়ে খুৎবা শুনে ও কোনো কথা না বলে — তাহলে প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময়ে একবছর সালাত পড়া ও রোজা রাখার সমান সওয়াব পাবে।’ (আহল-আস-সুনান) হজরত আউস ইবনে আউস আস্সাকাফি (রা.) বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন উত্তমরূপে গোসল করবে, অতঃপর কোনো রকম যানবাহনে না চড়ে হেঁটে আগে আগে মসজিদে যাবে, ইমামের নিকটবর্তী বসবে, চুপ থাকবে এবং অনর্থক কথা বলা থেকে বিরত থাকবে, তবে তার জন্য বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত প্রতি কদমে এক বছরের রোজা ও কিয়ামুল লাইলের সওয়াব লেখা হবে। (আবু দাউদ : ৩৪৫)
আমল : ৩৫
দোহার (ইশরাক) সালাত পড়া :
‘যে ব্যক্তি ফজরের সালাত জামা’আতের সঙ্গে পড়ে, তারপর সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত আল্লাহর যিকির করে, তারপর দু’ রাকাআত সালাত পড়ে, সে যেন হজ্জ এবং ওমরাহর সওয়াব পূর্ণ করল। রাসূলুল্লাহ (সা.) একথাটি ৩বার জোড়ে জোড়ে পুনরাবৃত্তি করলেন। (আত-তিরমিজি)