পরীমনির যে কাজে নাখোশ গ্রামবাসী

বিনোদন ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ১০:৪৯ এএম, ১২ আগস্ট ২০২১ বৃহস্পতিবার

পরীমনি

পরীমনি

উচ্ছৃঙ্খল ও বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত চিত্রনায়িকা পরীমনি ছিলেন গ্রামের নেহায়েত গরিব ঘরের মেয়ে। দামি ব্রান্ডের মদে বুঁদ হয়ে থাকা পরীমনির শৈশব কেটেছে গ্রামীণ সাদামাটা পরিবেশে। যেখানে পরিচ্ছন্ন ও সহজ-সরল মানুষের মাঝেই বড় হয়েছেন। এ নায়িকার দাদার বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলায়। কিন্তু সেখানে কখনোই থাকেননি। তিনি বড় হয়েছেন নানা বাড়ি পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় উপজেলার ইকড়ি ইউনিয়নের সিংহখালী গ্রামে।

সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেছেন পরীমনি। কলেজের ভর্তির রেজিস্টারের তথ্য অনুসারে, ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর জন্মগ্রহণ করেন পরীমনি। তার নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। গ্রামের মানুষেরা এখনও তাকে মা-বাবা হারা এতিম স্মৃতি বলেই চেনে। সেখানে গেলে স্থানীয়দের যদি জিজ্ঞেস করা হয় চিত্রনায়িকা পরীমনির বাড়িটা কোন দিকে? তখন তারা পাল্টা প্রশ্ন করেন, গাজী বাড়ির স্মৃতির কথা বলছেন তো?

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, স্কুল-জীবনে স্মৃতি ওরফে পরীমনি তুখোড় মেধাবী ছিলেন। তিনি প্রাইমারি পড়েছেন দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং মাধ্যমিক পড়েছেন তার নানা বাড়ির পার্শ্ববর্তী মঠবাড়িয়া উপজেলার ভগিরাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও পিরোজপুর জেলা পরিষদ সদস্য মো. আব্দুল হাই হাওলাদার জানান, পরীমনির বাড়ি এখানে না হলেও তিনি নানা মো. শামসুল হক গাজীর বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে বেড়ে উঠেছেন। তবে তার বাড়ি নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার সালাবাদ গ্রামে। তার বাবা মনিরুল ইসলাম ছিলেন একজন পুলিশ কনস্টেবল।

দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেলায়েত হোসেন বলেন, পরীমনির নানী মরহুমা ফাতিমা বেগম দক্ষিণ সিংহখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমি প্রধান শিক্ষক হই। ছোট থেকে স্মৃতি ভালো ছাত্রী ছিল। পঞ্চম শ্রেণিতে স্কুল থেকে একমাত্র সে ট্যালেন্ট পুলে বৃত্তি পায়। এখন পর্যন্ত এই স্কুল থেকে আর কেউ বৃত্তি পায়নি। দেখতে খুব সুন্দর ছিল স্মৃতি। মা হারানো এতিম শিশুটিকে এলাকার সবাই অনেক আদর করত।

মাদক মামলায় গ্রেফতার ও নিজের বাসাকে ‘মিনি বার’ বানিয়ে ফেলা এই নায়িকাকে নিয়ে এলাকাবাসী তেমন কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি। এলাকায় থাকাকালে তার কোনো ‘অপকর্ম’ নেই বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ড সিংহখালী গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, টিভিতে দেখেছি মাদকসহ স্মৃতি (পরীমনি) গ্রেফতার হয়েছে। আমাদের এলাকায় যতদিন থেকেছে পরীমনি, সে কোনো খারাপ কাজ-কর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল না। ভালো মেয়ে ছিল। গ্রামে তার কোনো অপকর্ম নেই।

তবে নায়িকা হওয়ার পর পরীমনির দুটি কাজে নাখোশ গ্রামবাসী। এলাকাবাসী জানায়, নায়িকা হওয়ার পরে নিজেকে অহংকারী হয়ে ওঠেন পরীমনি। এতিম সেই মেয়েটি ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যান। মাটিতে পা পড়ত না। ২০২০ সালে সিংহখালী গ্রামে পরীমনি বেড়াতে এসেছিলেন। খবর পেয়ে তার নিজের কলেজের কিছু ছাত্রী দেখা করতে গিয়েছিল তার নানা বাড়ি কিন্তু তাদের সঙ্গে দেখা করেননি পরীমনি। বিষয়টিতে কষ্ট পেয়েছেন কলেজের সহপাঠীরা।

গ্রামবাসীদের আরেকটি অভিযোগ, নায়িকা হওয়ার পরে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় এফডিসিতে ৫-৬টি গরু কোরবানি দেন পরীমনি কিন্তু গ্রামবাসীকে নিয়ে আজ পর্যন্ত কোনো কোরবানি দেননি। নিজের গ্রামের মানুষদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছেন সব সময়। গ্রামের মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে পায়নি পরীমনিকে।

উল্লেখ্য, অভিজাত এলাকা বনানীর ১৯/এ সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির পাঁচতলার একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন পরীমনি। বিলাসবহুল এ ফ্ল্যাটের দাম ১০ কোটি টাকারও অধিক বলে অনেকে বলছেন। এ ফ্ল্যাট পরীমনি কিভাবে কিনলেন এবং কোটি টাকা মূল্যের গাড়িতে চড়েন। কারণ, চলচ্চিত্রে তিনি যে কয়টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন এবং যেগুলো মুক্তি পেয়েছে সবগুলোতে তার অভিনয়ের পারিশ্রমিক মিলিয়েও তার গাড়ির মূল্যের সমান হবে না, ফ্ল্যাট কেনা অনেক পরের কথা। প্রায় অর্ধ-যুগের ক্যারিয়ারে এমন আলিশান ফ্ল্যাট ও গাড়িতে চড়ার কথা চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় অনেক নায়ক-নায়িকার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। ফলে চলচ্চিত্রাঙ্গণের লোকজনের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, পরীমনি কিভাবে এত ধন-সম্পদের মালিক হলেন?