ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নিষিদ্ধ করা হয়েছে চীনা রাষ্ট্রদূতকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ০৯:২৭ এএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

ঝেং জেগুয়াং

ঝেং জেগুয়াং

ব্রিটিশ পাঁচ এমপি ও তাদের দুই সহকর্মীর বিরুদ্ধে চীনের নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষিতে দেশটির পার্লামেন্টে নিষিদ্ধ করা হয়েছে চীনা রাষ্ট্রদূত ঝেং জেগুয়াংকে। ফলে তিনি আর কখনো ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে পারবেন না এবং সেখানে কোন আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে বা কথা বলতে পারবেন না।

এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় বলে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমে জানানো হয়েছে।

এর আগে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কথা বলার পর বেইজিং গত মার্চে ব্রিটিশ পাঁচজন এমপি’র ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এছাড়া তাদের সম্পদও জব্দ করা হয়।

তাদের ওপর আনা অভিযোগে বলা হয় যে, তারা উইঘুরদের অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মিথ্যা কথা ছড়িয়েছে।

এরই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ায় বুধবার এমপি’দের প্রতিবাদের মুখে হাউজ অব কমন্সে চীন ইস্যুতে সর্বদলীয় একটি সংবর্ধনায় যোগ দিতে দেওয়া হয়নি যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ঝেং-কে।

ব্রিটিশ পার্লামেন্টের হাউজ অব কমন্স স্পিকার লিন্ডসে হোয়েল এবং হাউজ অব লর্ড স্পিকার লর্ড ম্যাকফল বলেছেন, এমপি’দের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের নিষেধাজ্ঞা যতদিন বলবৎ থাকবে, ততদিন চীনা রাষ্ট্রদূতও পার্লামেন্টে নিষিদ্ধ থাকবেন।

স্পিকার হোয়েল বলেন, “আমি প্রতিনিয়তই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করি এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশ এবং পার্লামেন্টের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধন গড়ে তোলার জন্য। কিন্তু আমি মনে করি না যে, চীনের রাষ্ট্রদূতের হাউস অব কমন্স ও আমাদের কর্মস্থলে আসা উচিত, যখন তার দেশ আমাদের কয়েকজন সদস্যর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।”

যুক্তরাজ্যে অবস্থিত চীনা দূতাবাস রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত ‘নিন্দনীয়’ ও ‘কাপুরুষোচিত’ বলে বর্ণনা করেছে। তারা বলছে, এই সিদ্ধান্তের কারণে দু’দেশের স্বার্থই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পাল্টা-পাল্টি এ নিষেধাজ্ঞার ঘটনা দুই দেশের মধ্যকার চলমান উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসিলমদের ওপর সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে যুক্তরাজ্য প্রথমবারের মতো চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। চীন সঙ্গে সঙ্গেই এর জবাবে ৫ ব্রিটিশ এমপিসহ আরও ২ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া এই ব্রিটিশ এমপি’রা হলেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ইয়ান ডানকান স্মিথ, টম তুগেন্দাত, নুসরাত গণি, নীল ও’ব্রায়ান এবং টিম লাফটন।

এই নিষেধাজ্ঞার কোনও তোয়াক্কা না করে চীনের পার্লামেন্টারি গ্রুপ হাউজ অব কমন্স প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠেয় গ্রীষ্মকালীন পার্টিতে রাষ্ট্রদূত ঝেং কে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে কমন্স স্পিকার লিন্ডসে হোয়েল এবং লর্ড স্পিকার লর্ড ম্যাকফলকে গত সপ্তাহে চিঠিও দেন নিষেধাজ্ঞা কবলিতরা।

এমপি’দের ওপর চীন সরকারের নিষেধাজ্ঞা কেবল ব্যক্তিবিশেষের ওপরই নয় বরং গোটা পার্লামেন্টকেই আক্রমণ করার সামিল। তাই পার্লামেন্টকে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাকে উৎসাহিত করা বা বৈধতা দেওয়ার প্লাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার হতে দেওয়া কখনওই উচিত না, বলা হয় চিঠিতে।

চীনা রাষ্ট্রদূত ঝেং জেগুয়াংকে পার্লামেন্টে যেতে না দেওয়ার নজিরবিহীন পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে এমপি নুসরাত গনি বলেন, “এমপি’দের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মানে পার্লামেন্ট এবং আমাদের গণতন্ত্রকে সরাসরি হুমকি দেওয়া।”

“আমরা কোনও শাসকগোষ্ঠীর ভয়ে চুপ করে থাকব না, ভীতও হব না। আর আমাদের পার্লামেন্টও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির অযৌক্তিক এই নিষেধাজ্ঞার জন্য প্রচারের হাতিয়ার হবে না।”