করোনার নতুন ধরন শনাক্তে দেশে দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ০৯:০২ এএম, ২৭ নভেম্বর ২০২১ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের (কোভিড ১৯) নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় নতুন এই ধরন শনাক্ত হয়। এতে আক্রান্ত হন ২২ জন। শনাক্ত হলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এর কোনো নাম দেওয়া হয়নি। একে আপাতত বি.১.১.৫২৯ বলা হচ্ছে।

করোনার নতুন এই ধরনের মধ্যে যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে, তা করোনার অন্য ধরনগুলো থেকে একেবারে আলাদা। ব্রিটিশ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থার দাবি- আজ পর্যন্ত যত ধরনের করোনা শনাক্ত হয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ ধরনটি বারবার জিনগত রূপ বদলাতে সক্ষম। কেউ কেউ বলছেন, এটিই এখন পর্যন্ত দেখা করোনার সবচেয়ে বিপজ্জনক ধরন। এর বিরুদ্ধে টিকা কাজ করবে কি না, কত দ্রুত এটি ছড়াবে, উপসর্গ কতটা ভয়াবহ হবে- এখন এসব নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন গবেষকরা।

এদিকে, করোনার নতুন এই ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ। যুক্তরাজ্য, ইসরায়েল, সিঙ্গাপুর এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ ওই অঞ্চলের দেশগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

নতুন এই ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে আফ্রিকার ছয়টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যবিষয়ক সেক্রেটারি সাজিদ জাভিদ বলেন, করোনার নতুন ধরন সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় উদ্বিগ্ন দেশটির বিজ্ঞানীরা।

সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন পর্যাপ্ত তথ্য জানি না, কত সংখ্যক মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকায় সংক্রমিত হয়েছেন। তবে এটি অবশ্যই উদ্বেগের কারণ ও সতর্ক হওয়ার সঠিক সময়।

জোহানসবার্গ থেকে আল-জাজিরার প্রতিনিধি ফাহমিদা মিলার বলেছেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার দেশগুলো পর্যটন ও বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল’ এবং ছুটির মৌসুমে নতুন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা তাদের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।

তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকাকে সম্প্রতি লাল তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে যুক্তরাজ্য। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা সরকারের পক্ষ থেকে উদ্বেগ জানানো হয়েছে। তারা এ নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তকে তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তাদের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবে।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী নালেদি পান্দর আল-জাজিরাকে বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো- নিষেধাজ্ঞার এ সিদ্ধান্ত উভয় দেশের পর্যটন-শিল্প ও ব্যবসা উভয়েরই ক্ষতির কারণ হবে।’

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নও নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপের ব্যাপারে বিবেচনা করছে। বিশেষ করে বর্তমানে ইউরোপে করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউ চলছে।

ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আফ্রিকা অঞ্চল থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করতে জরুরিভাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।’

গত দুই সপ্তাহ আফ্রিকার সাত দেশ—দক্ষিণ আফ্রিকা, লেসোথো, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, মোজাম্বিক, নামিবিয়া ও এসওয়াতিনি দেশে ভ্রমণ করা কোনো ব্যক্তিকে ইতালিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

নেদারল্যান্ডসও একই ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে পরিকল্পনা করছে বলে আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পান বলেন, এয়ারলাইন্সগুলো দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শুধু জার্মান নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে এবং এছাড়া ভ্রমণকারীদের অবশ্যই ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, মালাবি থেকে আসা ইসরায়েলের এক যাত্রীর মধ্যে করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে। যেটা ইসরায়েলেই প্রথম। শনাক্ত হওয়া ব্যক্তি ও তার সঙ্গে ভ্রমণকারী দুই সন্দেহভাজনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তারা তিনজনই করোনার পূর্ণ ডোজ নিয়েছিলেন।

নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সতর্ক করলো ডব্লিউএইচও

অন্যদিকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে দেশগুলোকে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

শুক্রবার জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিশ্চিয়ান লিন্ডমেয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডব্লিউএইচও সুপারিশ করছে যে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ যেন ঝুঁকি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের ব্যাপারে সচেষ্ট হয়।পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য ঝুঁকি মূল্যায়ন না করে সরাসরি ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে দেশগুলোকে সতর্ক করছে।’

সংস্থাটি বলছে, করোনার নতুন ধরনটি ঠিক কতটা সংক্রামক তা নির্ধারণ করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।

লিন্ডমেয়ার বলেন, ‘গবেষকরা এর মিউটেশন সম্পর্কে আরও বোঝার জন্য কাজ করছেন ও এটি কতটা সংক্রামক তার সম্ভাব্যতা পরীক্ষা করছে।’

নতুন ধরনের বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করছে বায়োএনটেক

বায়োটেক কোম্পানি বায়োএনটেক শুক্রবার জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনের বিরুদ্ধে তারা (বায়োএনটেক) ফাইজারের সঙ্গে তৈরি করা টিকা কতটা কার্যকর তা পরীক্ষা করছে।

বায়োএনটেকের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘গবেষণাগারে পরীক্ষার জন্য আমরা সবশেষ দুই সপ্তাহের ডেটা আশা করছি। এই ডেটাগুলো থেকে বি.১.১.৫২৯ ধরন সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া যাবে। এছাড়া এটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে আমাদের টিকাগুলো সমন্বয়ের প্রয়োজন হতে পারে।’

দক্ষিণ আফ্রিকা, হংকং ও বতসোয়ানায় এখন পর্যন্ত ৫০ জনের মধ্যে এই ধরন শনাক্ত হয়েছে। বতসোয়ানা ও হংকংয়ে শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিরাও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রী।