ওমিক্রন মোকাবিলায় বিধিনিষেধ আরোপের বিষয়ে যা জানালেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ০৯:১৩ এএম, ৪ জানুয়ারি ২০২২ মঙ্গলবার

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক

করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে নতুনভাবে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ওমিক্রন মোকাবিলায় ইতোমধ্যেই প্রস্ততি নিচ্ছে বাংলাদেশ। লকডাউনের চিন্তা না থাকলেও বিভিন্ন বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপের দিকে যাচ্ছে সরকার।

করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার সনদ ছাড়া হোটেলে খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান সীমিত করার।

গণপরিবহনে আসন সংখ্যার চেয়ে কমিয়ে যাত্রী পরিবহনের বিষয়েও সিদ্ধান্ত আসতে পারে। মাস্ক পরার বিষয়েও আসছে কঠোরতা, মাস্ক না পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দেওয়া হবে শাস্তি। তবে আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কোনো চিন্তা সরকারের নেই।

সোমবার (৩ জানুয়ারি) রাতে সচিবালয়ে ওমিক্রন নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

সংক্রমণ বাড়ছে, মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, সভায় অনেক আলোচনা হয়েছে। ওমিক্রনের বিষয় নিয়ে, সার্বিক প্রস্তুতির বিষয় নিয়ে। সিদ্ধান্তগুলো এখনই বলে দেওয়া যাবে না। সিদ্ধান্তগুলো ক্যাবিনেটে থেকেই জানিয়ে দেওয়া হবে। আমাদের যখন আলোচনায় যেতে বলা হলো আমরা বলেছি, হাসপাতালগুলো প্রস্তুত আছে। অক্সিজেন আছে এখন। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন ১২০টি স্থাপন করা আছে। আমাদের টিকা কার্যক্রম চলমান আছে। ২০ বেড, আমরা সবই রেখে দিয়েছি। এখন ডাক্তাররা প্রশিক্ষিত। তারা জানে কীভাবে করোনা চিকিৎসা করতে হয়। তারা অনেক অভিজ্ঞ দেশবাসীও এ বিষয়টি জানে।

তিনি আরো বলেন, তবে আশঙ্কার বিষয় হলো করোনা বেড়ে যাচ্ছে। আজকের কথাই যদি বলি, আজকে সংক্রমণ ৩ দশমিক ৪ শতাংশ হয়েছে, যেটা একের নিচে নেমে গিয়েছিল, এটা আশঙ্কাজনক। মৃত্যুহার যদিও এখন কম আছে। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকলে মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই।

জাহিদ মালেক বলেন, আপনারা জানেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে আবারও সেই লকডাউনের কথা চলে আসবে। আবারও স্কুল-কলেজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা হবে। আবারও পরিবহনের বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা থাকবে। কীভাবে পরিবহনটাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সব কিছুর ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাবে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যেটা আমরা চাই না।

সভায় করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের স্থল, সমুদ্র ও বিমানবন্দর যেগুলো আছে, সেখানে স্ক্রিনিংয়ের সংখ্যা বাড়ানো এবং আরও মজবুত করা। যেটা আমরা ইতোমধ্যে করেছি। আমরা ওখানে এন্টিজেন টেস্টও করছি, পিসিআর টেস্টও করছি।

পুলিশ পাহারায় কোয়ারেন্টাইন চান মন্ত্রী

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোয়ারেন্টাইনের আরো বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কেউ সংক্রমিত থাকলে তাদের যথাযথভাবে কোয়ারেন্টাইনের মধ্যে রাখা হোক পুলিশ প্রহরায়। যাতে কি না কোয়ারেন্টাইন থেকে লোক বেরিয়ে না যায়। ঢিলেঢালা কোয়ারেন্টাইন আমরা চাচ্ছি না।

সীমিত হচ্ছে অনুষ্ঠান

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, যত অনুষ্ঠান আছে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয়- এই অনুষ্ঠানগুলোর সংখ্যা যাতে সীমিত করা হয়, এ বিষয়ে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। নীতিগতভাবে কিছুটা এ বিষয়ে আমাদের পজিটিভ আলোচনাই হয়েছে যে, হ্যাঁ এটা করা হবে।

গণপরিবহনে আসন সংখ্যার চেয়ে কম যাত্রী পরিবহন

জাহিদ মালেক বলেন, পরিবহন সেক্টর নিয়ে বলা হচ্ছে, যে সিট ক্যাপাসিটি আছে, সেটা কমিয়ে যাতে চালানো হয়, এ বিষয়ে একটা আলোচনা হয়েছে। একটা সিদ্ধান্ত আশা করি আমরা পারবো।

মাস্ক না পরলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তি

জাহিদ মালেক বলেন, সব ক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে। বাস-ট্রেনে উঠলে মাস্ক পরতে হবে। মসজিদে গেলে পরতে হবে। অর্থাৎ সব জায়গায় মাস্ক পরতেই হবে। না পরলে জরিমানা করা হবে। সিদ্ধান্ত হয়েছে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে।

টিকার সনদ ছাড়া হোটেলে খাওয়া যাবে না

মন্ত্রী বলেন, আরেকটি তাগিদ দেওয়া হয়েছে- মানুষ টিকা যাতে গ্রহণ করে। টিকা যারা নিয়েছে তারা রেস্টুরেন্টে খেতে পারবে, অফিসে যেতে পারবে বিভিন্ন কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে মাস্ক পরা অবস্থায়। টিকা যারা না নেবে, তারা কিন্তু রেস্টুরেন্টে (হোটেল) গিয়ে খেতে পারবে না। টিকার সার্টিফিকেট (সনদ) দেখাতে হবে। তবেই সেই রেস্টুরেন্ট তাকে এন্টারটেইন করবে।

তিনি বলেন, যদি কোনো রেস্টুরেন্ট কাউকে (টিকার সনদ না থাকার পরও খেতে দেয়) তাহলে সেই রেস্টুরেন্টকেও জরিমানা করা হবে।

এই সিদ্ধান্ত কবে থেকে বাস্তবায়ন হবে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ১৫ দিন সময় দেওয়া হবে। ক্যাবিনেট থেকে একটা সার্কুলার ইস্যু হবে। ১৫ দিন পর সার্কুলার ইস্যু হবে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নয়, জোরদার হবে টিকাদান

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কি না- জানতে চাইলে জাহিদ মালেক বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু থাকবে। বলা হয়েছে টিকাটা যাতে তারা গ্রহণ করে। যারা ছাত্র-ছাত্রী আছেন স্কুল-কলেজে, টিকা নেওয়ার বিষয়ে তাদের মধ্যে ঢিলেঢালা ভাব আছে। আমরা চাচ্ছি এটাকে যেন জোরদার করা হয়। আমরাও সহযোগিতা করবো। আমাদের পক্ষে যতটুকু দরকার সহযোগিতা করে আসছি। আমরা আহ্বান করছি, যাতে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের তাড়াতাড়ি করে টিকা দেওয়া হয়।

লকডাউনে কথা ভাবছে না সরকার

সভায় লকডাউন দেয়ার বিষয়ে কোনো কথাবার্তা হয়েছে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, না, লকডাউনের সুপারিশ আমরা এখনও করিনি। লকডাউনের পরিস্থিতি এখনও হয়নি। আমাদের যাতে লকডাউনর পর্যায়ে যেতে না হয়, সেজন্যই তো আজকের এই প্রস্তুতি সভা। যা যা স্টেপ নেওয়ার আমরা তা নিই, তারপর দেখা যায় কী দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে আমরা লকডাউনের কথা ভাবছি না। এখন আমরা জোর দেবো প্রতিরোধের বিষয়ে। যে সব কার্যকলাপগুলো করা প্রয়োজন, যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন ওমিক্রন ও করোনা নিয়ন্ত্রণের জন্য, সেগুলোর ওপর জোর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে কি না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, বিমানে যারা উঠেন, তারা তো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উঠেন। তাদের ভ্যাকসিনেশন থাকতে হয়, আরটিপিসিআর টেস্ট করতে হয়, এন্টিজেন টেস্ট করতে হয়। কাজেই, মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার যারা তাদের ৬-৭ ঘণ্টা আগেও আসতে হয়। কাজেই এই বিষয়ে নতুন কোনো সিদ্ধান্তের কথা আমরা বলিনি। তারা যাতে মাস্ক পরে আসা-যাওয়া করে, টেস্টের বিষয়টি নিচ্ছিদ্র হয়, ভুলভ্রান্তি না থাকে- এই বিষয়গুলো জোরদার করার জন্য বলা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে বৈঠকে জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব লোকমান হোসেন মিয়া, তথ্য সচিব মো. মকবুল হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া মাঠ পর্যায় থেকে জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি), বিভাগীয় কমিশনার, স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, সিভিল সার্জনরা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন বৈঠকে।

এদিকে প্রথমে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জিম্বাবুয়েফেরত বাংলাদেশি দুই নারী ক্রিকেটার ওমিক্রনে আক্রান্ত হন বলে জানা যায়। পরে ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) জানায়, ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়া নারী ক্রিকেট দলের দুই খেলোয়াড় ভালো আছেন এবং তারা করোনা নেগেটিভ হয়েছেন।

একই সঙ্গে দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রয়েছে। সোমবার করোনা শনাক্ত হয়েছে ৬৭৪ জনের। দৈনিক শনাক্তের হার আবার তিন শতাংশ ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন চারজন।