কয়েকটি দেশকে নিয়ে হতে যাচ্ছে নতুন মহাদেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ০৯:২৫ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০২২ সোমবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বদলে যাবে মহাদেশের মানচিত্র। ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশকে নিয়ে হতে পারে নতুন মহাদেশ। সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে তেমনই এক তথ্য। 

আমেরিকান জার্নাল অব সায়েন্সে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে একটি সমীক্ষা। তাতে দেখা গেছে, পূর্ব আফ্রিকার সোমালিয়া, কেনিয়া, তানজানিয়া মোজাম্বিক এবং মাদাগাস্কার ২০০ মিলিয়ন বছরে ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন মহাদেশ গড়ে তুলতে পারে।

ভারতের পশ্চিম উপকূল বরাবর একটি দীর্ঘ পর্বতশ্রেণি গঠন হবে। তার ফলে ‘সোমালয়’ নামে একটি নতুন মহাদেশ গড়ে উঠতে পারে। ভূতাত্ত্বিক অধ্যাপক ডুয়ে ভ্যান হিন্সবার্গেন এই গবেষক দলের নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে ভবিষ্যতে পর্বত এবং মহাদেশগুলো কেমন হবে।

তিনি বলেন, আমি অতীতের পুনর্গঠন করেছি। একটি মহাদেশ যা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে অদৃশ্য হয়ে গেছে। আরেকটি প্রধান মহাদেশ যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। যার ধ্বংসাবশেষ আমরা সমগ্র ইন্দোনেশিয়াজুড়ে দেখতে পাই। কিন্তু আমি কোনো ভবিষ্যৎ সিমুলেশন তৈরি করিনি। আমি আমার ছাত্রের সঙ্গে এটি নিয়ে আলোচনা করেছি।

গবেষণা দলটির তরফে জানানো হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সেশেলস এবং মরিশাস দ্বীপপুঞ্জে বিরাট ধাক্কা নেমে আসবে। মুম্বাই সোমালয় রেঞ্জের পাদদেশে থাকবে, ঠিক যেমন আজ হিমালয়ের পাদদেশে নতুন দিল্লি রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতের ত্রিভান্দ্রম থেকে পকিস্তানের করাচি পর্যন্ত একটি বিষণ্ণতার চিত্র ধরা পড়বে।

হর্ন অফ আফ্রিকা, যার মধ্যে রয়েছে সোমালিয়াও, তা দক্ষিণ-পশ্চিম ভারতকে অতিক্রম করবে এবং একটি বিশাল পর্বতমালা তৈরি করবে বলে ড. ভ্যান হিন্সবার্গেন ব্যাখ্যা করেছেন। কীভাবে তারা এই উপসংহারে পৌঁছেছেন, তাও জানিয়েছেন সুইজারল্যান্ডের ইটিএইচ জুরিখের পিএইচডি ছাত্র থমাস শুটেন এবং লেখকদের একজন। তারা ব্যাখ্যা করেছেন, আমাদের অনেক গবেষণা রয়েছে যা অতীতকে পুনর্গঠন করেছে।

কীভাবে টেকটোনিক প্লেটগুলো সরানো হয়েছে, তা কত দ্রুত, কোন পথে গেছে, ইত্যাদি। আমাদের গবেষণায় আমরা ধরে নিয়েছি যে, আফ্রিকা মহাদেশের মধ্য দিয়ে যাওয়া এবং পূর্ব আফ্রিকান হ্রদের নীচে যে ফাটল রয়েছে তা আফ্রিকার দুটি অংশকে বিভক্ত করতে থাকবে এবং তার ফলে পরবর্তী ২০০ মিলিয়ন বছরে একটি মহাদেশ তৈরি হবে।

তিনি আরো বলেন- আফ্রিকায় যখন এই মহাদেশ তৈরি হবে, তখন আমাদের অবশ্যই ভারত মহাসাগর অপসারিত হবে। সুতরাং মূলত মালাবারের সৈকতগুলি এবং প্রবাল প্রাচীর, সমুদ্র সৈকত এবং নিচু অঞ্চলগুলি ভাঁজ হয়ে উচ্চ শিখরে পরিণত হবে। সেশেলসও লাক্ষাদ্বীপের পাশে স্থাপিত হবে এবং মালাবার পর্বত হিমালয়ের মতো আট হাজার কিলোমিটার উঁচু একটি পর্বতশ্রেণিতে পরিণত হতে পারে, যেখানে আমরা এভারেস্টের মতো পাহাড়ের চূড়ায় পুরানো প্রবাল প্রাচীর খুঁজে পেতে পারি।

কিন্তু আফ্রিকা কেন ভাঙবে?
গবেষক দলটি ব্যাখ্যা করেছে যে, অতীতে দুটি প্রাচীন মহাদেশের যে ফল্ট লাইনগুলির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল তা দুর্বল রয়ে গেছে। সুতরাং, আফ্রিকার মতো মহাদেশগুলো সেই পুরনো ফল্ট লাইনগুলিকে ভেঙে ফেলতে পারে। এ প্রসঙ্গে ৯০ মিলিয়ন বছর আগে ভারত কীভাবে মাদাগাস্কার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছিল, ডক্টর ভ্যান হিন্সবার্গেন তা ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন- সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মহাদেশগুলো চিরকালের জন্য বিদ্যমান নয়। আমরা আজকে জানি মাত্র গত কয়েক মিলিয়ন বছর ধরে ভারতের অস্তিত্ব রয়েছে। তার আগে এটি একটি দ্বীপ ছিল। ভারত মহাসাগর একদিন অবশ্যই স্তব্ধ হয়ে যাবে। তারপর একটি মহাদেশের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে ভারতকে। এটি হয় আফ্রিকা বা অ্যান্টার্কটিকা অথবা এটি অস্ট্রেলিয়া হতে পারে।

ভবিষ্যতের মানচিত্র নির্মাণে গবেষক দলটি তাকিয়েছিল আফ্রিকার দিকে। তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সম্ভবত পূর্ব ভারতের সঙ্গে জুড়ে যাবে। ভবিষ্যতে ভারত মঙ্গোলিয়ার মতো দেখতেও হতে পারে। উচ্চ পর্বতশ্রেণি দ্বারা বেষ্টিত একটি বিশাল মহাদেশের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত, যার নাম হতে পারে সোমালয়।

গবেষক দলটি বলেছে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল আধুনিক ভারত মহাসাগরের কোন বৈশিষ্ট্যগুলো পর্বত বেল্টে সংরক্ষণ করা হবে এবং কোনটি নাও হতে পারে তা ভাবা। এটি ভূতাত্ত্বিক অতীতের পৃথিবীর প্লেট এবং পৃষ্ঠতলের ইতিহাসকে আরও ভালোভাবে পুনর্গঠন করতে সাহায্য করে, যা জলবায়ু, জীবন এবং সম্পদের বিবর্তন বুঝতে সাহায্য করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।