মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেভাবে রোজা রাখে

ইসলাম ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ০৫:১৭ পিএম, ৮ এপ্রিল ২০২২ শুক্রবার

সংগৃহীত

সংগৃহীত

রোজার বিবরণসংবলিত যত হাদিস বর্ণিত হয়েছে, একযুগে সেগুলোর প্রতি চোখ রাখলে এ বিষয়টি প্রতীয়মান হয় যে নিছক পানাহার ও জৈবিক চাহিদা বর্জনের নাম রোজা নয়। প্রকৃত অর্থে রোজা আরো ব্যাপক, এর বিধি-নিষেধের আওতা আরো বিস্তৃত।

পেট ও লজ্জাস্থানের রোজা মৌলিক বিষয়। কিন্তু যথার্থ ও সার্থক রোজা পালনের জন্য মানবদেহের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত রাখা জরুরি।

রোজাদারের জিহ্বা রোজা রাখে পরচর্চা বা গিবত থেকে, চোগলখোরি থেকে, অশ্লীল ও মিথ্যা কথা থেকে। দূরে থাকে মূর্খামি ও বেয়াকুফি করা থেকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা এবং সে অনুসারে কাজ করা আর মূর্খতা পরিহার করল না, আল্লাহর তার পানাহার বর্জনের কোনো প্রয়োজন নেই। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৫৭)

রোজার দাবি হলো, রোজাদার অপ্রয়োজনীয় কথা ত্যাগ করবে। হৈ-হট্টগোল ও গালাগাল করা থেকে দূরে থাকবে এবং ভদ্রতা বজায় রাখবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তাঁর নিজের জন্য, কিন্তু রোজা আমার জন্য। তাই আমি এর প্রতিদান দেব। রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তাঁর সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজাদার। ’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০৪)

দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রাণকেন্দ্র হলো অন্তর। এই অন্তরকে যখন পাপমুক্ত রাখা যাবে, তখন সারা অঙ্গে রোজা কার্যকর হবে। অন্তরের পাপ হলো অজ্ঞতা, শিরক ও বিদআতি বিশ্বাস, নোংরা চিন্তা-ভাবনা, ষড়যন্ত্র ও হীন পরিকল্পনা। রোজাদারের অন্তরে মহান অন্তর্যামীর কথা সতত স্মরণে থাকে। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘চোখের অপব্যবহার ও অন্তরে যা গোপন আছে, সে সম্পর্কে তিনি (আল্লাহ) অবহিত। ’ (সুরা : মুমিন/গাফির, আয়াত : ১৯)

মুমিনের হূদয় রোজা রাখে অহংকার থেকে। অহংকার হলো সত্য প্রত্যাখ্যান করা এবং মানুষকে ঘৃণা করার নাম।

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘অহংকারবশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কোরো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না। ’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ১৮)

মুমিনের অন্তর রোজা রাখে হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণ করা থেকে। কেননা বিদ্বেষী মানুষের ক্ষমা নেই। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘প্রতি সপ্তাহে দুইবার—সোমবার ও বৃহস্পতিবার বান্দাদের কর্ম (আল্লাহর দরবারে) পেশ করা হয়। তখন সব মুমিন বান্দাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়, শুধু ওই ব্যক্তি ছাড়া, যার ও তার অন্য ভাইয়ের মধ্যে বিদ্বেষ ও শত্রুতা আছে। এদের বিষয়ে বলা হয়, এদের বিষয় স্থগিত রাখো, যতক্ষণ না এরা ফিরে আসে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ২৫৬৫)

মুমিনের অন্তর রোজা রাখে কৃপণতা থেকে। কেননা কৃপণতা কখনো কল্যাণ বয়ে আনে না। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা তাদের দান করেছেন, তা থেকে যারা কৃপণতা করে—তারা যেন কিছুতেই মনে না করে যে এটা তাদের জন্য মঙ্গল। বরং এটা তাদের জন্য অমঙ্গলজনক, যা নিয়ে তারা কৃপণতা করে কিয়ামতের দিন তা তাদের গলায় বেড়ি হবে। আসমান ও জমিনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহর। তোমরা যা করো আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবহিত। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০)

দান করা সব সময় পুণ্যের কাজ। আর রমজানে দানের সওয়াব বহু গুণ বৃদ্ধি পায়। রাসুল (সা.) সর্বদা দান করতেন। আর রমজানে দানের পরিমাণ আরো বেড়ে যেত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল ছিলেন। আর রমজান মাসে তা আরো বেড়ে যেত। এ সময় জিবরাইল (আ.) তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত্ করতেন।

রমজানের প্রতি রাতে জিবরাইল (আ.) মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে কোরআন পাঠ করতেন। এ সময় রাসুল (সা.) প্রবহমান বাতাসের চেয়েও বেশি দান করতেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬; মুসলিম, হাদিস : ২৩০৮)

রোজাদারের চোখ রোজা রাখে আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্তু দেখা থেকে। আল্লাহর নিষিদ্ধ কিছু চোখে পড়লে সে তার চোখ অবনত করে নেয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটি তাদের জন্য উত্তম...। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩০)

রোজাদারের কানও রোজা রাখে গিবত শোনা থেকে, অশ্লীল কথা শোনা থেকে, গান-বাজনা শোনা থেকে এবং অবৈধ প্রেমালাপ থেকে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘...কান, চোখ ও অন্তর—এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে। ’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)

রোজাদারের পেটও রোজা রাখে। রোজা রাখে হারাম খাদ্য থেকে। তার খাবারে সুদ, ঘুষ ও অবৈধ উপার্জনের অর্থ থাকে না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা, আমি তোমাদের যেসব পবিত্র বস্তু দান করেছি, তা থেকে আহার করো এবং আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো—যদি তোমরা শুধু তাঁরই ইবাদত করো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)

মহান আল্লাহ আমাদের সর্বোত্তম পন্থায় রোজা রাখার তাওফিক দান করুন।