দুপচাঁচিয়ার চিহ্নিত ভূমি দস্যু ওমর ফারুক গ্রেফতার সিন্ডিকেটের অন্যান্যরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে
রুপক বর্মন, দুপচাচিয়া (বগুড়া)
সময় একাত্তর
প্রকাশিত : ১২:৩৮ এএম, ৩০ জুলাই ২০২২ শনিবার | আপডেট: ০১:০৭ এএম, ৩০ জুলাই ২০২২ শনিবার
প্রতীক ছবি
দুপচাচিয়া (বগুড়া): দীর্ঘদিন ধরে দুপচাচিয়া উপজেলায় ভূমি দস্যুদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বিদ্যমান রয়েছে। সেই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য ওমর ফারুক পিতা শেখ দশের আলী সাং, সরদার পাড়া, উপজেলা সদর কে, গত ২৪ জুলাই ২০২২ তারিখে দুপচাচিয়া থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে।
দুপচাচিয়া সদর ও পৌরসভা এলাকায় বিভিন্ন সরকারি খাস জমি /পুকুর ,অর্পিত সম্পত্তি, প্রবাসীর জায়গা জমি, স্বল্প শিক্ষিত লোকজনের জমি উপজেলা ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীর সহযোগিতায় ভূয়া মালিকানা তৈরী করে জমির মালিক কে জুলুম হয়রানি ও দূর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে জমি দখল এবং অর্থ আদায় করে থাকে ভূমি দস্যু সিন্ডিকেটটি।
এ বিষয়ে উপজেলার বিভিন্ন ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় যে, দুপচাচিয়া পৌরসভা ও সদরের জায়গা জমি ক্রয় করা এবং ভোগ দখলের ক্ষেত্রে একটা চক্র/সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা সর্বত্র বিরাজমান। এই সিন্ডিকেটের অন্যান্য সদস্যরা হলো প্রভাষক শহিদুল ইসলাম, রায়হান, মুছা, হাফিজার মাষ্টার এবং উপজেলা ভূমি অফিসের মতিজার রহমান টাকলা মতি এবং প্রসেস সার্ভার হুমায়ুন ওরফে ফিস হুমায়ুন।
এই চক্র বা সিন্ডিকেটের কাজ হলো, একজনের ক্রয় করা জমি জবর দখল করে নেয়া, ভোগদখলীয় সম্পত্তি/ জমিতে মালিক সেজে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া, মিস কেস, একজনের রেকর্ডে নাম ডুকিয়ে জটিলতা তৈরী করা সরকারি জায়গা লিজ নিয়ে বিক্রি করে দেওয়া। এই চক্র মূল্যবান জমি টার্গেট করে একাধিক ভুয়া দলিল তৈরী করে মূল মালিক কে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতে সচেষ্ট থাকে । আর এই চক্রের মূল হোতা উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত অফিস সহকারী (নাজির) আব্দুল মতিজার রহমান টাকলা মতি এবং প্রসেস সার্ভার হুমায়ুন ওরফে ফিস হুমায়ুন। মূলত উপজেলা ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারিদের যোগসাজসে এই অপরাধ গুলো সংঘটিত করে যাচ্ছে একের পর এক।
উপজেলা বিভিন্ন সচেতন মহলের অভিযোগ, এ্যসিল্যান্ড অফিসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারিদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এসকল ভূমি দস্যুরা তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত অফিস সহকারী (নাজির) আব্দুল মতিজার রহমান টাকলা মতি এবং প্রসেস সার্ভার হুমায়ুন ওরফে ফিস হুমায়ুন এর দূর্নীতি বিষয়ে দুঁপচাচিয়া উপজেলা ভূমি অফিসে সেবা নিতে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের সেবা গ্ৰহীতাদের সঙ্গে কথা বলে ও খোঁজ নিলে বেরিয়ে আসে ঘুষ, দুর্নীতি আর বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র। নামজারির আবেদন থেকে শুরু করে নামজারির প্রস্তাব, সার্ভে রিপোর্ট, নামজারি, ডিসি আর সংগ্রহ করে নামজারি সম্পন্ন করাসহ সব কিছুতেই ঘুষ আর ঘুষ)। মিস কেসের ক্ষেত্রে মিলেছে ভিন্ন রকম তথ্য, কেউ মিস কেস করে চার-পাঁচ বছর ধরে ধরনা দিচ্ছেন এসি ল্যান্ড অফিসে; কিন্তু কোনো সুরহা পাচ্ছেন না। উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই নামজারি সম্পর্কিত তথ্যবহুল বড় বড় ব্যানার বা লিফলেট চোখে ভেসে উঠবে। সেখানে লিখা রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সেবা দেয়ার কথা।লিফলেটে লেখা রয়েছে, আবেদনের জন্য কোর্ট ফি ২০ টাকা, নোটিশ জারি ফি ৫০ টাকা, রেকর্ড সংশোধন বা হালকরণ ফি ১০০০ টাকা ও প্রতি কপি মিউটেশন খতিয়ান ফি ১০০ টাকা। সব মিলিয়ে এক হাজার ১৭০ টাকা। কিন্তু ব্যানার বা লিফলেটে দেয়া নির্দেশাবলি ব্যানার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ।
খোঁজ নিয়ে মিলেছে ভিন্ন রকম তথ্য। ‘খ’ তফসিল জমির ক্ষেত্রে সরকার ২০১৩ সালে এক প্রজ্ঞাপনে অবমুক্তির একটি আদেশ দেন। সেই ‘খ’ তফসিল জমি এক থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত খারিজ করতে এসি ল্যান্ড ঘুষ নেন ২৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা, এক থেকে ১৫ শতাংশ খারিজ করতে নেন ৩৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা, এক থেকে ৩০ শতাংশ নেন ৪৫ থেকে ৬৫ হাজার টাকা, এক থেকে ৫০ শতাংশ নেন ৭৫ থেকে এক লাখ টাকা, এক থেকে ৭৫ শতাংশ নেন এক থেকে দেড় লাখ টাকা ও এক থেকে ১০০ শতাংশ নেন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। কাগজপত্রের একটু গরমিল হলে এক বিঘা খারিজ করতেই নেন দুই থেকে তিন লাখ টাকা। পার্ট ভিপি নামজারির ক্ষেত্রে একই হারে নেয়া হয় ঘুষ।
দর কষাকষির মাধ্যমে এ ঘুষের টাকা মতি এবং হুমায়ূন আদায় করে থাকেন যার ভাগ অফিসার পর্যন্ত পেয়ে থাকেন। ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে
'‘ভূমি অফিসে না এসে ভূমি সেবা গ্রহণ করুন’' প্রতিপাদ্যে গত ১৯ মে হতে ২৩ মে পর্যন্ত ভূমি সেবা সপ্তাহ পালন করা হয়। কিন্তু দেশের বিভিন্ন জেলা/ উপজেলায় সেবার পরিবর্তন হলেও দুপচাঁচিয়া উপজেলা ভূমি অফিসের কোনো আমূল পরিবর্তন হয় নি।