মু’আয বিন জাবাল (রা.)কে মহানবী (সা.)-এর ১০ উপদেশ

ধর্ম ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ১০:২৪ এএম, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

মু’আয বিন জাবাল (রা.)কে মহানবী (সা.)-এর ১০ উপদেশ

মু’আয বিন জাবাল (রা.)কে মহানবী (সা.)-এর ১০ উপদেশ

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ১০ উপদেশ মুমিনের জীবন চলার পাথেয়। মু’আয বিন জাবাল রাদিআল্লাহু আনহুকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১০টি উপদেশ দিয়েছেলেন যা মানবজীবনের আমূল পরিবর্তনের একটি পূর্ণাঙ্গ প্রেসক্রিপশন।

মানুষের চরিত্রকে পূর্ণতাদানের জন্য শেষ নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হয়েছেন। তিনি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ে ইসলামের রীতি অনুযায়ী তাঁর সাহাবিদের শিখিয়েছেন, আর তাদের ধারাবাহিকতায় আজ আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ শিখছি।

একদা মু’আয বিন জাবাল রাদিআল্লাহু আনহুকে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত ১০টি উপদেশ প্রদান করেছিলেন; যা মুসনাদে আহমাদের ২২০৭৪ নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। 

আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না: শিরক তথা আল্লাহর অংশীদারত্ব শিকার করা কবিরা গুনাহ। আল্লাহ রোজ হাশরের মাঠে শিরকের গুনাহ কিছুতেই ক্ষমা করবেন না। এ বিষয়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করে বলেছেন, ‘আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, যদিও তোমাকে হত্যা করা হয় অথবা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়’।

পিতামাতার অবাধ্য হবে না: পিতামাতার অবাধ্য হওয়ার বিষয়ে পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিস শরিফেও কঠোর শব্দচয়ন করে বলেন-‘পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না যদি তারা তোমাকে তোমার পরিবার পরিজন এবং তোমার সম্পত্তি ছেড়েও যেতে বলেন’।

ফরজ সালাত ত্যাগ করবে না: ফরজ নামাজ ত্যাগ করা ব্যক্তি আল্লাহর রহমত এবং নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘ইচ্ছে করে কখনো ফরজ নামাজ ত্যাগ করবে না। কেননা যে ইচ্ছে করে ফরজ নামাজ ছেড়ে দেবে তার (নিরাপত্তার) বিষয়ে আল্লাহর দায়িত্ব উঠে যাবে’।

পাপাচার থেকে বেঁচে থাকবে: অন্যায় কাজ থেকে বেঁচে থাকা মুমিনের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য। মানুষ যখন গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহর ক্রোধ তার দিকে ত্বরান্বিত হয়। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-‘সর্বদা গুনাহ থেকে দূরে থাকবে। কেননা গুনাহের মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হয়’।

জিহাদ থেকে পলায়ন করবে না: আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধে বের হওয়ার পর যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি বুঝে পলায়ন করা ইসলামের সঙ্গে গাদ্দারি করার শামিল। এমন পলায়ন করার ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোষণা হচ্ছে-খবরদার!! জিহাদ থেকে পলায়ন করবে না। যদিও সব লোক ধ্বংস হয়ে যায় (অর্থাৎ শাহাদতবরণ করেন)।

মহামারির সময় স্থান ত্যাগ করবে না: মানুষ যে স্থানে বসবাস করে, সেখানে যদি কোনো মহামারি দেখা দেয়, তাহলে সে যেন সেখানেই অবস্থান করে। মৃত্যুর ভয়ে পলায়ন করে সব স্থানে মহামারির বিষ যেন ছড়িয়ে না দেয়। 

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-‘যদি কোথাও মহামারি দেখা দেয়, এ অবস্থায় তুমি যদি সেখানে থাক, তাহলে তুমি সেখানে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে’।

পরিবারের সদস্যদের প্রতি কৃপণতা করো না: আল্লাহ প্রিয় বান্দাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবারের জন্য তার অর্জিত সম্পদ থেকে ব্যয় করার নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ব্যয়ের ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হতে বলেছেন, তবে কৃপণতা নয়। আর খরচ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে, নিজ পরিবারের সদস্যদের জন্য উত্তম বিষয়ে খরচ করা। এ ক্ষেত্রে কৃপণতা করা অন্যায়। 

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে’।

উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেবে: পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতি ভালোবাসা ও স্নেহের পাশাপাশি শাসনের একটি প্রভাব পরিবারের কর্তাব্যক্তির থাকা আবশ্যক। কেননা শাসনহীন ভালোবাসা পরিবারকে খুব সহজেই অধঃপতনের দিকে ধাবিত করে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের কর্তাব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বড়  ‍ভূমিকা পালন করে। 

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তাদের ওপর থেকে শাসনের লাঠি তুলে নেবে না’ (অর্থাৎ, শিষ্টাচার শিক্ষাদানের ব্যাপারে শাসন থেকে কখনো বিরত থাকবে না)।

মদ পান করবে না: মদ পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে; কারণ, নেশাজাতীয় দ্রব্য সব অন্যায়ের চাবিকাঠি হিসাবে পরিগণিত হয়। রাসূল (সা.) বলেন-‘কখনো শরাব পান করবে না। কেননা তা সব অশ্লীলতার মূল’।

আল্লাহর ভয় প্রদর্শন করবে: সন্তান বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিতামাতার কর্তব্য হচ্ছে সন্তানকে স্রষ্টা তথা এক আল্লাহর পরিচয় প্রদান করা। এবং তাঁর অসীম ক্ষমতা ও তাকে ভয় করা সম্পর্কে ছোট থেকেই সন্তানদের অবহিত করা। কারণ, আল্লাহর ভয় একজন মানুষকে পরিপূর্ণ মুত্তাকি হতে সাহায্য করে। 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ সম্পর্কে তাদের ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে’। আলোচ্য ১০টি উপদেশ হোক প্রতি মুমিনের জীবন চলার পাথেয়। ব্যক্তি জীবনে মানুষ সুখী হোক এবং পরিবারে ধর্মচর্চার মাধ্যমে দুনিয়া এবং পরকাল আনন্দময় হোক- এটি এ প্রবন্ধের মূল দাবি।