যেভাবে বুঝবেন প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে

স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক

সময় একাত্তর

প্রকাশিত : ১১:২২ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২ শনিবার

যেভাবে বুঝবেন প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে

যেভাবে বুঝবেন প্যানিক অ্যাটাক হয়েছে

হঠাৎ বুকে ব্যথা, পেটে মোচড় দিয়ে বমি হওয়ার উপক্রম হওয়া- এসব প্যানিক অ্যাটাকের লক্ষণ। এই অ্যাটাকের আরো লক্ষণ হলো, তীব্র গরম লাগা, হাত-পা অবশ হয়ে আসা এবং মাথা ঘোরা। চারপাশের সবকিছু অবাস্তব লাগতে থাকে। এই ঘটনা যে কারো ক্ষেত্রেই ঘটতে পারে। এটা মূলত প্যানিক অ্যাটাক।

এর ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কর্মক্ষমতাও হ্রাস পায়। যদি মনে করেন যে প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে, তাহলে কিছু পদক্ষেপ নিয়ে তা থামানো যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্যানিক অ্যাটাক একধরনের মানসিক সমস্যা। অধিক দুশ্চিন্তা-ভয়-আতঙ্কে হঠাৎ করে শারীরিক প্রতিক্রিয়া ঘটলে বা উপসর্গ প্রকাশ পেলে তাকে প্যানিক অ্যাটাক বলা হয়। এর পেছনে যুক্তিসংগত কারণ বা প্রকৃত বিপদের উপস্থিতি থাকে না। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউটের সাইকিয়াট্রিস্ট ডেভিড এ. মেরিল বলেন, ‘ প্যানিক অ্যাটাক সবার ক্ষেত্রে একরকম আচরণ করে না। কারো একবার প্যানিক অ্যাটাক হলে পরবর্তীতে আর হয় না। আবার অন্যদের ক্ষেত্রে বারবার প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।’

প্যানিক অ্যাটাকের উপসর্গ সম্পর্কে জানা থাকলে এটা সামাল দিতে পদক্ষেপ নেয়া যায়। অ্যানজাইটি অ্যান্ড ডিপ্রেশন অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকার মতে, প্যানিক অ্যাটাকের উল্লেখযোগ্য উপসর্গ হলো- বুক ধড়ফড় বা দ্রুত হৃদস্পন্দন, ঘেমে যাওয়া, শরীর কাঁপা, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসরোধ অনুভব হয়। বমিভাব, পেট কামড়ানো বা টাইট হওয়া, মাথাঘোরানো বা চেতনা হারাচ্ছে মনে হওয়া, অসাড়তা বা শরীর ঝিনঝিন করা, ঠান্ডা বা গরম লাগা, আশপাশের সবকিছুকে অবাস্তব মনে হওয়া। এই অ্যাটাক হলে মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অনেক ক্ষেত্রে মনে হয়, মৃত্যু হতে যাচ্ছে। এসব উপসর্গের মধ্যে চারটি বা ততোধিক উপসর্গে ভুগলে ধরে নিতে পারেন যে প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছে। তবে এর চেয়ে কম উপসর্গ নিয়েও প্যানিক অ্যাটাক হতে পারে।

চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, প্যানিক অ্যাটাকের ক্ষেত্রে শরীরের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম বেশি সক্রিয় হয়ে যায়।আপনার মন কিছু একটাকে কেন্দ্র করে আতঙ্কিত হয়ে পড়লে এবং আপনি সেটাকে এড়িয়ে না চললে দ্রুত প্যানিক অ্যাটাক হবে এবং এর স্থায়িত্ব দীর্ঘ হবে।

সাধারণত প্যানিক অ্যাটাকের স্থায়িত ১০ মিনিট। এরপর শারীরিক প্রতিক্রিয়া কমতে থাকে। চিকিৎসকেরা জানান, প্যানিক অ্যাটাককে ভয়াবহ মনে হলেও শরীরের ক্ষতি হয় না। যেকারো জন্য প্যানিক অ্যাটাক একটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। 

গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসে মনোযোগ দিন

প্যানিক অ্যাটাকের সময় এমনকিছু করতে হবে যা শরীরে শিথিল অনুভূতি সৃষ্টি করে। যেমন ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিতে পারেন। গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসকে নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাস বলতে পারেন। গবেষণা বলছে, নিয়ন্ত্রিত শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত শরীরের শিথিলায়ন প্রক্রিয়াকে উদ্দীপ্ত করতে পারে এবং হৃদস্পন্দন কমাতে পারে। প্যানিক অ্যাটাক থামাতে এভাবে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস চর্চা করতে পারেন-

স্বস্তিদায়ক স্থানে দাঁড়ান, বসুন বা শুয়ে থাকুন।

>>একটি হাত পেটের ওপর রাখুন।

>>নাকের মাধ্যমে গভীর শ্বাস নিয়ে পেটকে বাতাসে পূর্ণ করুন।

>> ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। ফুসফুস থেকে সব বাতাস বের করে দিন। হাত দিয়ে পেটের প্রসারণ ও সংকোচন খেয়াল করুন।

বর্তমানে মনোনিবেশ করুন

প্যানিক অ্যাটাকের সময় মাইন্ডফুলনেস চর্চা করলেও কাজে আসতে পারে। মাইন্ডফুলনেস মানে হলো বর্তমান মুহূর্তে বাস করা। যখন যেখানেই প্যানিক অ্যাটাক হোক না কেন, ওই মুহূর্তে আশপাশের বিষয়বস্তুতে গভীর মনঃসংযোগ করলে দুশ্চিন্তা বা আতঙ্ক দূর হবে।

মাইন্ডফুলনেসের কিছু উদাহরণ হলো- খাবারে মনোনিবেশ করা, তাপমাত্রা অনুভব করা, প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলি উপভোগ করা, শব্দ শোনা, ঘ্রাণ নেওয়া, গণনা করা ও প্যাটার্ন বা গঠনপ্রকৃতি লক্ষ্য করা। কিছু একটা করার সময় নিজ শরীরকে পর্যবেক্ষণ করাও মাইন্ডফুলনেসের অন্তর্ভুক্ত, যেমন- গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের সময় পেটের ওঠানামা অনুভব করা।

এসময় কোনোকিছু বিচার করতে যাবেন না। নিজের মতাদর্শের সঙ্গে মেলাতে যাবেন না। করণীয় কি- সেটা নিয়েও মাথা ঘামাবেন না। শুধু দেখবেন বা পর্যবেক্ষণ করবেন। অথবা অনুভব করবেন।

যখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

ডা. মেরিলের মতে, ‘প্রথমবারের প্যানিক অ্যাটাক বিপজ্জনক নয়। এমনকি এরপরেও মাঝেমধ্যে প্যানিক অ্যাটাক হলেও ভয়ের কিছু নেই।’ কিন্তু সমস্যাটা হয় তখন, যদি কেউ প্যানিক অ্যাটাক এড়াতে আচার-আচরণে বা জীবনযাপনে অস্বাভাবিক পরিবর্তন আনেন।

ঘনঘন প্যানিক অ্যাটাক হলেও চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।