ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অজুতে ব্যবহৃত পানি দিয়ে কাপড় ধোয়া যাবে?

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৩৪, ২৬ অক্টোবর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহ তায়ালার যতগুলো নেয়ামত উপভোগ করে তার অন্যতম ও প্রধান একটি হলো পানি। পানি ছাড়া মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন কল্পনা করা সম্ভব নয়। কেননা পৃথিবীর সকল প্রাণের উৎস পানি এবং সবাই পানির উপর নির্ভরশীল।

আল্লাহ তায়ালা পানিকে শুধুমাত্র মানুষের পান করার চাহিদা মিটানোর জন্যই তৈরি করেননি। পানিকে করেছেন সৃষ্টির বিভিন্ন কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ।

আল্লাহ বলেন, ‘যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুতঃ এসব তোমরা জান।’ (সুরা বাক্বারা : আয়াত ২২)

আল্লাহ অন্যত্র বলেন,

‘আমি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে থাকি পরিমাণ মতো, অতপর আমি তা জমিনে সংরক্ষণ করি এবং আমি তা অপসারণও করে থাকি। অতপর আমি তা দ্বারা তোমাদের জন্য খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান সৃষ্টি করেছি। তোমাদের জন্য এতে প্রচুর ফল আছে এবং তোমরা তা থেকে আহার করে থাক।’ (সুরা মুমিনুন : আয়াত ১৮-১৯)

আল্লাহ মানুষের পিপাসা নিবারণের জন্য সুস্বাদু পানির ব্যবস্থা করেছেন। যা ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকা সম্ভব হতো না। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যে পানি পান কর, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা কি তা মেঘ থেকে নামিয়ে আন? না আমি বর্ষন করি? আমি ইচ্ছা করলে তাকে লোনা করে দিতে পারি, অতঃপর তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না?’ (সুরা ওয়াকিয়া : আয়াত ৬৮-৭০)

পানি স্বভাবত পবিত্র। শুধু পান করার জন্য নয় বরং বিভিন্ন কাজ ও পবিত্রতা অর্জনের কাজেও পানি ব্যবহার করা হয়। মানুষ পেশাব-পায়খানা এবং শারিরীকভাবে অপবিত্র হলে পানির মাধ্যমেই পবিত্র হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তিনিই স্বীয় রহমতের প্রাক্কালে বাতাসকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্যে পানি বর্ষণ করি।’ -(সুরা ফুরকান : আয়াত ৪৮)

বর্তমানে মানুষের জীবনে নানামাত্রিক সংকটের সময়ে কখনো কখনো পানিরও তীব্র সংকট দেখা দেয়, জরুরি প্রয়োজন পূরণের কাজটুকু করাও দুষ্কর হয়ে পড়ে। অনেক সময় পবিত্রতা অর্জনের পানিও পাওয়া যায় না। এমন সংকটের মুহুর্তে অনেকে ব্যবহৃত পানি দিয়েই জরুরি কাজ সেরে নেন। তা কতটুকু শরীয়ত সম্মত এ বিষয়ে প্রশ্ন জাগে অনেকের মনে। যেমন, একজন জানতে চেয়েছেন-

‘একবার পানি স্বল্পতার কারণে আমি অজুর ব্যবহৃত পানি দ্বারা নাপাক কাপড় ধৌত করি। জানার বিষয় হল, অজুর ব্যবহৃত পানি কি পাক না নাপাক? আর পাক হলে তা দ্বারা কি নাপাক ধৌত করা যাবে?’

এ বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদরা বলেন, অজুর ব্যবহৃত পানি নাপাক নয়। এই পানি দ্বারা নাপাক কাপড় বা নাপাক বস্তু ধোয়া এবং পবিত্র করা জায়েজ। তবে এই পানি দিয়ে অজু করা কিংবা ফরজ গোসল করা যাবে না; করলে পবিত্রতা অর্জন হবে না। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৪১; আদ্দুররুল মুখতার ১/২০১; মারাকিল ফালাহ ৮৭

পবিত্র পানির ব্যাখ্যায় হাদিসে এসেছে, ‘যে পানির মৌলিক গুণাবলি (রঙ, স্বাদ, ঘ্রাণ) বহাল থাকে, কোনো নাপাকির সংমিশ্রণ না হয় এবং অন্য কোনো বস্তু তার ওপর প্রাধান্য বিস্তার না করে।’ (ইবনে মাজা : ৫১৪)। 

আর ব্যবহৃত পানি বলা হয় এমন পানিকে, যা অপবিত্রতা দূর করা বা সওয়াব অর্জনের জন্য অজু ও গোসলে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যবহারকারীর শরীর থেকে আলাদা হওয়ার পর সেই পানি ব্যবহৃত পানি বলে গণ্য হবে। হাদিসের স্পষ্ট বর্ণনার কারণে ব্যবহৃত পানি পবিত্র। তবে হাদিসের ভাষ্য মতে, এই পানি দ্বারা অজু হবে না। (বুখারি : ৫২৪৪)

সর্বশেষ
জনপ্রিয়