ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

অভিনেতা আবদুল কাদের পরিচিত ছিলেন ‘বদি’ নামেই

বিনোদন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৭, ২৬ ডিসেম্বর ২০২০  

অভিনেতা আবদুল কাদের ( বা থেকে প্রথম)

অভিনেতা আবদুল কাদের ( বা থেকে প্রথম)

‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের চরিত্র ‘বদি’ খ্যাত অভিনেতা আবদুল কাদের অগ্ন্যাশয় ক্যান্সারে ভুগে মারা গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন। শনিবার সকালে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

আবদুল কাদেরের ছেলের বউ জাহিদা ইসলাম জেমি জানান, ভারতের চেন্নাইয়ের ক্রিস্টিয়ান মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে কয়েকদিন আগে দেশে ফিরেন তিনি।

আবদুল কাদেরের জন্ম মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী থানার সোনারং গ্রামে। স্কুলজীবন থেকেই অভিনয়ের সঙ্গে তার সখ্য। আবদুল কাদের সোনারং হাইস্কুল ও বন্দর হাইস্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে বিএ অনার্স ও এমএ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ডাকঘর’ নাটকে অমল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে তার প্রথম নাটকে অভিনয় শুরু। ১৯৭২-৭৪ পরপর তিন বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মহসিন হল ছাত্র সংসদের নাট্য সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। 

১৯৭২ সালে আন্তঃহল নাট্য প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন মহসিন হলের নাটক সেলিম আল দীন রচিত ও নাসিরউদ্দিন ইউসুফ নির্দেশিত ‘জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন’-এ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কারও লাভ করেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ জ্ঞানের অনুষ্ঠান ‘বলুন দেখি’-তে চ্যাম্পিয়ন দলের অন্যতম সদস্য হিসেবেও পুরস্কার লাভ করেন আবদুল কাদের।

১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ডাকসু নাট্যচক্রের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সাল থেকে থিয়েটার নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য এবং চার বছর যুগ্ম-সম্পাদকের ও ছয় বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে থিয়েটারের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) হিসেবে আছেন।

১৯৭৪ সালে ঢাকায় আমেরিকান কলেজ থিয়েটার ট্রুপ কর্তৃক আয়োজিত অভিনয় কর্মশালায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

থিয়েটারের প্রায় ৩০টি প্রযোজনায় প্রতিটিতে অভিনয় এবং ১০০০টিরও বেশি প্রদর্শনীতে অভিনয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য মঞ্চনাটক পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়, এখনও ক্রীতদাস, তোমরাই, স্পর্ধা, দুই বোন, মেরাজ ফকিরের মা।

১৯৮২ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক নাট্য উৎসবে বাংলাদেশের নাটক থিয়েটারের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’ -এ অভিনয় করেন। এছাড়া দেশের বাইরে জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কলকাতা, দিল্লি, দুবাই এবং দেশের প্রায় সবকটি জেলায় আমন্ত্রিত অভিনয় করেছেন। এছাড়া টেলিভিশনে দুই হাজারের বেশি নাটকে অভিনয় করেছেন।

১৯৭২ সাল থেকে টেলিভিশন ও ১৯৭৩ সাল থেকে রেডিও নাটকে নিয়মিত অভিনয় শুরু করেন। টেলিভিশনে তার অভিনিত প্রথম কিশোর ধারাবাহিক নাটক ‘এসো গল্পের দেশে’। তবে তিনি আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা পান ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকে বিখ্যাত চরিত্র বাকের ভাইয়ের সহযোগী বদি হিসেবে। হুমায়ূন আহমেদের ‘নক্ষত্রের রাত’ ধারাবাহিকে দুলাভাই চরিত্রেও তিনি হাস্যরসাত্মক অভিনয় দিয়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পান।

দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি কাজ করেছেন মাটির কোলে, নক্ষত্রের রাত, শীর্ষবিন্দু, সবুজ সাথী, তিন টেক্কা, যুবরাজ, আগুন লাগা সন্ধ্যা, এই সেই কণ্ঠস্বর, আমার দেশের লাগি, প্যাকেজ সংবাদ, সবুজছায়া, কার ছায়া ছিল, দীঘল গায়ের কন্যা, কুসুম কুসুম ভালোবাসা, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, আমাদের ছোট নদী, ভালোমন্দ মানুষেরা, দূরের আকাশ, ফুটানী বাবুরা, হারানো সুর, দুলাভাই, অজ্ঞান পার্টি, লোভ, মোবারকের ঈদ, বহুরূপী, এই মেকাপ, ঢুলীবাড়ী, সাত গোয়েন্দা, এক জনমে, জল পড়ে পাতা নড়ে, খান বাহাদুরের তিন ছেলে, ইন্টারনেটের বউ, ঈদ মোবারক, সিটিজেন, হতাই, ফাঁপড়, চারবিবি, সুন্দরপুর কতদুর, ভালবাসার ডাক্তার, চোরাগলী, বয়রা পরিবার ইত্যাদি নাটকগুলোতে। রিয়াজ ও শ্রাবন্তীর সঙ্গে ‘রং নাম্বার’ চলচ্চিত্রেও দারুণ অভিনয় করে দর্শকের মনে আজও স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি।

অর্থনীতিতে সিঙ্গাইর কলেজ ও লৌহজং কলেজে অধ্যাপনা এবং বিটপী বিজ্ঞাপনী সংস্থায় এক্সিকিউটিভ হিসেবে চাকরির পর ১৯৭৯ সাল থেকে আন্তর্জাতিক কোম্পানি ‘বাটা’ তে যোগ দেন কর্মকর্তা হিসেবে। সর্বশেষ তিনি বাটা থেকে চাকরি পরিবর্তন করে বে ইম্পেরিয়াম লিমিটেডের উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করছিলেন বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়