ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আগামী দিনের চীন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ

অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২৬ জানুয়ারি ২০২১  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং

আগামীর শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন অগ্রগতিতে চীনের বিকল্প হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি ৩১৮ বিলিয়ন ডলার। যেখানে চীনের জিডিপি ১৫ ট্রিলিয়ন ডলার।

চীনের মতো অর্থনীতিক সুপার পাওয়ারের সাথে বাংলাদেশের তুলনায় চলে না। তারপর কিছু ক্ষেত্রে যদি চীনের পাশে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়ে দেয়া যায় একটুও বেমানান হবে না।

চীনের সাথে বাংলাদেশের সাদৃশ্য হচ্ছে দ্রুত গতির অর্থনীতি। চীনও এক সময় ছোট অর্থনীতির দেশ ছিল। সেই অর্থনীতিকে বৃহৎ করে আজকে সুপার পাওয়ারে পরিণত হয়েছে দেশটি। বাংলাদেশের সামনে এমনটা হওয়ার সুযোগ আছে। সেই লক্ষ্যে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি একই দিকে ধাবিত হচ্ছে।

চীন যখন দ্রুত অর্থনীতিক উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন বাংলাদেশ নামক দেশটির জন্মই হয়নি। বাংলাদেশের গল্প শুরু ১৯৭১ থেকে, বিজয়ের উনপঞ্চাশ বছর পার করে পঞ্চাশে পা দিয়েছে মাত্র। আশির দশকে শ্রমশক্তি রপ্তানির মধ্য দিয়ে বৈদেশিক আয়ে পথচলা শুরু করে বাংলাদেশ। তারপর থেকেই দ্রুত বিকাশমান এই খাত থেকে বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আসে বাংলাদেশে

করোনার মহামারিতেও এই খাতের প্রবাহে টান পড়েনি। গড়ে প্রতি মাসে দেড় থেকে ২ বিলিয়ন ডলার আসে বাংলাদেশে। তৈরি পোশাক খাত অর্থনীতিতে বড় অগ্রগতি দেখিয়ে যাচ্ছে। চীনের পরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক শিল্প হচ্ছে বাংলাদেশে। গত বছরে এই শিল্প থেকে আয় ছিল ৩৪ বিলিয়ন ডলার। যা দেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগ।

পাদুকা শিল্প রপ্তানি থেকে ১.১ বিলিয়ন ডলার, মৎস থেকে ৫৩২.৯ মিলিয়ন ডলার, পেপার ইয়ান ওভেন ফেব্রিক থেকে ৬০৬.৩ মিলিয়ন ডলার। যা দেশের মোট জিডিপি’র ১.৩ শতাংশ।

বিশ্ববাজারে চামড়া রপ্তানি করে ৩৬৯ মিলিয়ন ডলার, প্ল্যাস্টিক ও প্ল্যাস্টিকজাত পণ্য রপ্তানি করে ১১৩ মিলিয়ন ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি করে ৬০২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।

গত বছর থেকে পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৪০ শতাংশ। বিশ্ববাজারে দেশের বাইসাইকেল দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। করোনাকালে ইউরোপের বাজারে বাইসাইকেল থেকে আয় হয়েছে ৭৩ মিলিয়ন ডলার। আগামী বছর এ বাজারের আকার বাড়বে।

আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশি ওষুদের চাহিদা ২০ শতাংশ বেড়েছে। এ খাত থেকে গত বছর বিশ্বের ২১টি দেশে ওষুধ রপ্তানি করে ১৩৯ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে।

বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক আয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলার। যা গত কয়েক বছরে মাল্টিবিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

রুপপুর, রামপাল, মাতারবাড়ি পাওয়ার প্ল্যান্ট,পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলি টানেল, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন, মহেশখালি এলএমজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্র বন্দর, পায়রা সমুদ্র বন্দর, হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর তৃতীয় টার্মিনাল উল্লেখযোগ্য।

সবমিলিয়ে ৫৪ বিলিয়ন ডলার প্রকল্পের কর্মযজ্ঞ চলছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দক্ষিণ এশিয়ায় মেগা প্রকল্পের তালিকায় বাংলাদেশ সবার শীর্ষে। বাংলাদেশ আগামী দিনের চীন হতে যাচ্ছে তা বুঝতে আরেকটু মেগা প্রকল্পগুলোর দিকে নজর দিলেই হয়।

বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে সব সুযোগ সুবিধা রেখে একের পর এক বিশেষ অর্থনীতিক অঞ্চল তৈরি করছে বাংলাদেশ সরকার।

এসব অর্থনীতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, নেদারল্যান্ড, জার্মানি পোল্যান্ডসহ বিশ্বের নামি দামি কোম্পানি ও দেশগুলো।

বিশেষ অর্থনীতিক অঞ্চলে ইতিমধ্যে জাপান বড় বড় বিনিয়োগ করেছে, বিশ্বখ্যাত কোম্পানি স্যাসসাং বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করে কার্যক্রম শুরু করেছে। জার্মানির বিএমডব্লিউ গাড়ি উৎপাদনে বৈঠক করেছে।

বর্তমান বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ঠিক একই ভাবে একসময় এগিয়েছে চীন। উন্নয়নশীল অবস্থাতে চীন যে সব বড় প্রোজেক্ট সফল করেছে বাংলাদেশ ঠিক একই অর্থনৈতিক পথে হাটছে। ধীরে ধীরে প্রায় সব ক্ষেত্রে সমান ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

দারিদ্রতা অনেক বেশি ছিল যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। বেকারত্ব ছিল আকাশচুম্বী। কিন্তু সেই বেকারত্ব এখন নেমে এসছে ৪ শতাংশে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়