ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

আল্লাহ যাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেবেন

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ২৬ অক্টোবর ২০২২  

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে অবশ্যই আমি তোমাদের নেয়ামত বাড়িয়ে দেবো। নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা করলে তোমাদের বেশি পুরস্কারে পুরস্কৃত করবো।’ আল্লাহ তাআলা কাদের প্রতি তাঁর নেয়ামত বাড়িয়ে দেবেন? নেয়ামতের শুকরিয়াই বা কীভাবে আদায় করতে হবে?

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমে ঘোষণা করেন-

وَ اِذۡ تَاَذَّنَ رَبُّکُمۡ لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন- ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ০৭)

কোরআনের ভাষ্য মতে, আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে প্রশান্ত হৃদয়ে, বিনয় ও নম্রতার সঙ্গে এবং অনুসরণ করতে হবে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থা। যারা এভাবে জীবন অতিবাহিত করতে পারে তারাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। তাদের জীবন হবে সুখময়। এ জন্য অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

وَ سَیَجۡزِی اللّٰهُ الشّٰکِرِیۡنَ ...

‘... আর আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৪)

নবিজির কৃতজ্ঞতা

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন আল্লাহ তাআলা সেরা সৃষ্টি। তিনি ছিলেন বিশ্বজগতের জন্য রহমত। তারপরও তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে ছিলেন সবার চেয়ে অগ্রগামী। সৃষ্টি জগতের মধ্যে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে কেউ তাকে পেছনে ফেলতে পারেনি। তিনি সবার আগে সব সময় আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। হাদিসে এসেছে-

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে এতবেশি নামাজ আদায় করতেন যে তার উভয় পা ফেটে যেত। তিনি জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ক্রটি ক্ষমা করে দিয়েছেন। তবু আপনি কেন এত ইবাদত করছেন? তিনি বলেন-

أَفَلَا أُحِبُّ أَنْ أَكُوْنَ عَبْدًا شَكُوْرًا

`আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারী (প্রিয়) বান্দা হবো না?’ (বুখারি ৪৮৩৭)

সব নামাজের পর কৃতজ্ঞতার দোয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার হজরত মুআজ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেছেন, হে মুআজ, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাকে ভালোবাসি। এরপর হে মুআজ, আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি যে তুমি প্রত্যেক নামাজের শেষে এই দোয়া পাঠ করবে—

اَللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা জিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সাহায্য কর যেন, আমি তোমাকে স্মরণ করতে পারি, তোমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞপন করতে পারি এবং ভালোভাবে তোমার ইবাদত-বন্দেগি করতে পারি।’ (আবু দাউদ ১৫২৪, মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ, মিশকাত)

দাউদ আলাইহিস সালামের কৃতজ্ঞতা

আল্লাহ তাআলা হজরত দাউদ আলাইহিস সালামকে বলেছিল-

اِعۡمَلُوۡۤا اٰلَ دَاوٗدَ شُکۡرًا ؕ وَ قَلِیۡلٌ مِّنۡ عِبَادِیَ الشَّکُوۡرُ ...

‘... (আমি বলেছিলাম) হে দাউদের সন্তানগণ! তোমরা কৃতজ্ঞতাচিত্তে কাজ করে যাও। আর আমার বান্দাদের অল্পই কৃতজ্ঞ।’ (সুরা সাবা : আয়াত ১৩)

তাফসিরে ইবনে কাসিরে এসেছে, দাউদ আলাইহিস সালাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আমার পালনকর্তা! আমি আপনার শুকরিয়া কীভাবে আদায় করব? আমার ভাষাগত ও কর্মগত শুকরিয়া তো আপনারই দান। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে দাউদ! এখন তুমি আমার শুকরিয়া আদায় করেছো। কেননা আমার যথাযথ শুকরিয়া আদায়ের ক্ষেত্রে তোমার অক্ষমতাকে উপলব্ধি করতে পেরেছো এবং মুখে তা স্বীকার করেছো।

নুহ আলাইহিস সালামের শুকরিয়া

হজরত নুহ আলাইহিস সালাম ছিলেন আল্লাহর একজন শুকরিয়া আদায়কারী বান্দা। আল্লাহ তাআলা তার সম্পর্কে কোরআনে ঘোষণা করেন-

ذُرِّیَّۃَ مَنۡ حَمَلۡنَا مَعَ نُوۡحٍ ؕ اِنَّهٗ کَانَ عَبۡدًا شَکُوۡرًا

‘(তোমরা তো) তাদের সন্তান! যাদেরকে আমি নূহের সঙ্গে নৌকায় বহন করেয়েছিলাম, সে (নুহ) ছিল একজন শুকরগুজার বান্দা।’ (সুরা ইসরা : আয়াত ৩)

ইবরাহিম আলাইহিস সালামের শুকরিয়া

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ছিলেন মুসলিম জাতির পিতা। তিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহর শুকরগুজারকারী বান্দা। তাঁর সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে সেরকম নির্দেশনাই এসেছে-

اِنَّ اِبۡرٰهِیۡمَ کَانَ اُمَّۃً قَانِتًا لِّلّٰهِ حَنِیۡفًا ؕ وَ لَمۡ یَکُ مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ -  شَاکِرًا لِّاَنۡعُمِهٖ ؕ اِجۡتَبٰهُ وَ هَدٰىهُ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ

‘ইবরাহিম ছিল আল্লাহর প্রতি বিনয়াবনত একনিষ্ঠ এক উম্মাত, আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সে ছিল আল্লাহর নেয়ামতরাজির জন্য শোকরগুজার। আল্লাহ তাকে বেছে নিয়েছিলেন আর তাকে সরল সঠিক পথ দেখিয়েছিলেন।’ (সুরা নাহল : আয়াত ১২০-১২১)

আল্লাহর জিকির ও অন্য ইবাদতের মতো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করাও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা মহান আল্লাহ পৃথিবীতে মানুষের জন্য অফুরন্ত নেয়ামতের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিনিয়ত আমরা তার নেয়ামত ভোগ করি, উপকৃত হই। এই নেয়ামতের সুবিধা ভোগের বিপরীতে বান্দার একান্ত কর্তব্য হলো প্রতিটি কাজে আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করা, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। যারাই আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় করবে, আল্লাহ তাআলাদের নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেবেন।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, ঘুম, খাওয়া-দাওয়া, নাওয়া, ওঠা-বসা, অজু-ইস্তেঞ্জা, নামাজ-রোজা-হজ-জাকাতসহ যাবতীয় ইবাদতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকরা। তবেই মহান আল্লাহ বান্দার প্রতি বাড়িয়ে দেবেন তার অজস্র নেয়ামত।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সব কাজে তার শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়