ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

এক দশকে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নয়ন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৮, ৩০ জানুয়ারি ২০২৩  

এক দশকে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নয়ন

এক দশকে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবনীয় উন্নয়ন

যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে কৃষিজাত দ্রব্যাদি, শিল্পের কাচামাল, শিল্পজাত পণ্যসামগ্রী ইত্যাদি সহজে ও স্বল্প ব্যয়ে স্থানান্তরের যে সুবিধা হয় এতে দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, শিল্প ও ব্যবসায়ে প্রসার ঘটে, বৈদেশিক বিনিয়োগ হয় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হয়। এ কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রতীক বিবেচনা করা যায়।

বর্তমান সরকারের অন্যতম সাফল্যের একটি অন্যতম খাত হলো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে গত ১৪ বছরে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। আজ স্বাধীনতার ৫০ বছর পর দেশের যোগাযোগ খাত আজ উন্নয়নের শিখরে তখন ফিরে তাকিয়ে সর্বশেষ দশকটি দেখলে উন্নয়নের একটি ভিন্নধর্মী চিত্র দেখা যায়। একটি স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থার তত্ত্বাবধানে দেশের অন্যান্য খাতের মতো যোগাযোগ খাত পেয়েছে উন্নয়নের ধনাত্মক মাত্রা। দেশের সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা ও বাণিজ্যিক খাতের সার্বিক বিকাশে গত ১০ বছরে যোগাযোগ খাতে গ্রহণ করা হয়েছে বেশকিছু মেগা প্রজেক্ট। উল্লেখযোগ্য তেমন কিছু মেগা প্রজেক্ট হলো-

পদ্মা বহুমুখী সেতু :

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য পদ্মা সেতু ইতিহাসের একটি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রজেক্ট পুরকৌশল বিদ্যার উৎকর্ষের একটি মাইলফলক। পদ্মার মতো এত প্রমত্ত ও খরস্রোতা নদীতে সংযোগ সেতু নির্মাণের উদাহরণ বিশ্বে বিরল। পদ্মা সেতু বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখছে। প্রথমত, সেটি মানুষ ও পণ্যের যাতায়াতের সময় অনেক গুণ কমাচ্ছে, ব্রিজটি দক্ষিণাঞ্চল ও ঢাকার মধ্যে দূরত্বকে ১০০-১৫০ কিলোমিটার কমিয়ে দিয়েছে। যাতায়াতের সময় কমপক্ষে ৩-৪ ঘণ্টা সাশ্রয় করছে।। দ্বিতীয়ত, এ সেতুকে ঘিরে অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু হয়েছে। পণ্য পরিবহন সহজ হওয়ায় ওই অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়বে এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্পোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে শুরু করেছে। প্রকল্পটির ফলে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৪৪ হাজার বর্গকিলোমিটার বা বাংলাদেশের মোট এলাকার ২৯ শতাংশ অঞ্চলজুড়ে তিন কোটিরও অধিক জনগণ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে। সেতুটি নির্মাণের ফলে দেশের জিডিপি প্রায় ১ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে এবং প্রতি বছর প্রায় সাড়ে সাত লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

কর্ণফুলী টানেল :

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান নদী কর্ণফুলী। বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে দুই ভাগে ভাগ করেছে এ নদী। তাই দেশের বাণিজ্যিক এ রাজধানী তথা পুরো দেশের অর্থনীতিই এ নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। বাংলাদেশের প্রথম ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম অত্যাধুনিক সুড়ঙ্গপথ ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ সরকার। জনসংখ্যার বিচারে সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম শহর চীনের সাংহাইয়ের আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম শহরকে ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তুলতে চায় বর্তমান সরকার। দুই টিউবের বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণকাজ শেষ হলে চার লেন দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এ টানেল কক্সবাজারের সঙ্গে চট্টগ্রামের দূরত্ব কমিয়ে দেবে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। কক্সবাজার ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়ি চট্টগ্রাম শহরকে এড়িয়ে সুড়ঙ্গপথ দিয়েই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলাচল করতে পারবে। কর্ণফুলী নদীর পূর্ব প্রান্তের প্রস্তাবিত শিল্প এলাকার উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত চট্টগ্রাম শহর, চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরের সঙ্গে উন্নত ও সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে :

বাংলাদেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হচ্ছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কুড়িল, বনানী, মহাখালী, তেজগাঁও, মগবাজার, কমলাপুর, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী এলাকায় গিয়ে শেষ হবে এ প্রকল্প। এক্সপ্রেসওয়েটি চালু হলে ঢাকা শহরের উত্তর ও দক্ষিণাংশের সংযোগ সহজ হবে, ট্র্যাফিক ধারণক্ষমতা বাড়বে, যাত্রার সময় কমবে। সার্বিকভাবে প্রকল্পটি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজীকরণ, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ :

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল সংযোগ একটি বহুল প্রত্যাশিত রেল প্রকল্প, যা দোহাজারী ও কক্সবাজারকে রেলপথে সংযুক্ত করবে। এ মেগা প্রকল্প দুটি পর্যায়ে বাস্তবায়ন হবে। কক্সবাজার বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা। চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের রেল সংযোগ বাংলাদেশের পর্যটন খাতে নতুন মাইলফলক তৈরি করবে। অর্থনৈতিক খাতে উন্নয়নের পাশাপাশি কক্সবাজারের মানুষের জীবনযাত্রার মান বাড়বে। শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রেও বৈপ্লবিক পরিবর্তন বয়ে আনবে।

ঢাকা মেট্রোরেল :

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় নির্মাণাধীন শহরভিত্তিক রেল ব্যবস্থা হচ্ছে ঢাকা মেট্রো, যা আনুষ্ঠানিকভাবে মাস র‍্যাপিড ট্রানজিট বা সংক্ষেপে এমআরটি নামে পরিচিত। ২০১৩ সালে অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। ২০১৬ সালের ২৬ জুন এমআরটি-৬ প্রকল্পের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে শুরু হয় ঢাকা মেট্রোর নির্মাণকাজের সূচনা। অবশেষে, এমআরটি-৬ লাইনের প্রথম পর্যায়ের দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও অংশ ২৮ ডিসেম্বর, ২০২২ জনসাধারণের চলাচলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন এবং তিনিই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম যাত্রাটি করেন। এটিই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম মেট্রোরেল, যা ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়। এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে এমআরটি-৬ লাইনের দ্বিতীয় পর্যায়ের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল ২০২৩ সালের শেষ দিকে চালুর কথা রয়েছে এবং ২০২৫ সাল নাগাদ কমলাপুর পর্যন্ত চালু হতে পারে।

তবে এসব প্রকল্পের সর্বোচ্চ সুবিধা পাওয়া সম্ভব শুধু সঠিক সমন্বয়ের মাধ্যমে। ঢাকার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রকল্পগুলো যেন আন্তঃজেলা যোগাযোগেও সমন্বিত ভূমিকা রাখতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। অন্যদিকে রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণ না হলে ঢাকায় মানুষের অভিবাসন ঠেকানো সম্ভব না। মনে রাখতে হবে, উন্নয়ন শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক হলে তার সঠিক মূল্যায়ন দেশের নাগরিক কখনই পাবে না। তাই এখনই উপযুক্ত সময় ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ সব গুরুত্বপূর্ণ শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের। আজ দেশের যোগাযোগ খাত উন্নয়নের শিখরে। তবে আমাদের থেমে থাকার সুযোগ নেই। আজ থেকে আরো ৫০ বছর পর উন্নত বাংলাদেশের যোগাযোগ খাত যেন বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে সে লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়