ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

একটুখানি হাসি ফোটাতে চায় শাবিপ্রবির ‘স্বপ্নোত্থান’

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫২, ৩১ আগস্ট ২০২২  

একটুখানি হাসি ফোটাতে চায় শাবিপ্রবির ‘স্বপ্নোত্থান’

একটুখানি হাসি ফোটাতে চায় শাবিপ্রবির ‘স্বপ্নোত্থান’

সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অর্থের অভাবে কিংবা এক ব্যাগ রক্তের খোঁজ না মেলাতে পেরে চিকিৎসার সংকটে ভোগা দিশাহারা মানুষের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটাতে এপার থেকে ওপারে ছুটে বেড়াচ্ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল স্বপ্নবাজ তরুণ।

মূল লক্ষ্য একটাই; সমাজের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে এসে মানবতার মশাল নিয়ে দাঁড়ানো, অন্যদের মতো অবহেলিত মানুষের মুখেও এক ঝিলিক হাসি দেখতে পাওয়া। বলছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নোত্থান’র সদস্যদের কথা। যাদের নিজস্ব আয়ের উৎস না থাকলেও কেবল ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে তারা বিভিন্ন চ্যারিটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সমাজের অসহায়, অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও দুঃস্থ মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন।

‘দীপ শিখা হাতে স্বপ্নের পথে’ এ মূলমন্ত্রকে বুকে ধারণ করে ২০০৭ সালে সিলেটের স্থানীয় শফিকুর রহমান নামে একজন স্বপ্নবাজ তরুণের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ‘স্বপ্নোত্থান’। তার নেতৃত্বে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের শিক্ষা ও সেবার মানসে স্বপ্নবান কিছু তরুণের নিরলস প্রচেষ্ঠার ফসল আজকের স্বপ্নকামী এই সংগঠন।

তার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ২০০৯ সালের ১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল স্বপ্নবাজ তরুণের স্বপ্ন আনুষ্ঠানিকভাবে ক্যাম্পাসের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সংগঠনটির বর্তমান সফলতায় অনেক স্বেচ্ছাসেবীরাই নিজেদের মূল্যবান সময়টুকু ব্যয় করে গেছেন।

স্বপ্নোত্থান মূলত ব্লাড, স্কুল ও চ্যারিটি এ তিনটি উইং নিয়ে কাজ করে। মানুষের রক্তের প্রয়োজনে যখন হাঁহাকার করে, তখনই রক্ত নিয়ে হাজির হয় সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। রক্ত সংগ্রহ ব্যতীত রক্তদান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে রক্তদাতা সংগ্রহ, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং ক্যাম্পেইন প্রভৃতিরও আয়োজন করে থাকেন তারা।

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও অসহায় মানুষের পরিবারের সন্তানরা যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্যও কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। এ লক্ষ্যে সিলেটের চৌহাট্টায় (আলপাইন রেস্টুরেন্টের বিপরীতে) অবস্থিত ভোলানন্দ নৈশ উচ্চ বিদ্যালয়ে স্বপ্নোত্থানের স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়মিত পাঠদান করে থাকে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মূলত দিনের বেলা শিশু শ্রমিক হিসেবে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট বা প্রতিষ্ঠানে কাজ করে এবং রাতের বেলা পাঠ গ্রহণের জন্য আসে। পাঠদানের পাশাপাশি বিভিন্ন জাতীয় দিবস সমূহে চিত্রাঙ্কন, রচনা প্রতিযোগিতা, উপস্থিত বক্তৃতা এবং বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

স্বপ্নোত্থান চ্যারিটি উইং মূলত কাজ করে কোনো সাহায্যের আবেদনের প্রেক্ষিতে। স্বপ্নোত্থানের কাছে কোনো সাহায্যের আবেদন আসলে ক্যাম্পাসে ও ক্যাম্পাসের বাইরে আর্থিক সহযোগিতা উত্তোলন, পিঠা উৎসব, ফিল্ম ফেস্ট প্রভৃতি উপায়ে অর্থ সংগ্রহ করে সাহায্যপ্রার্থীকে প্রদান করে। এছাড়া বন্যা বা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় স্বপ্নোত্থান। সম্প্রতি সিলেট অঞ্চলে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ১৩‘শ ১০টি পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার, চাল, ডাল, বিশুদ্ধ খাবার পানি, খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও স্যানিটারি ন্যাপকিন প্রভৃতি বিতরণ করা হয়।

এছাড়া স্বপ্নোত্থানের নিয়মিত কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে শীতবস্ত্র সংগ্রহ ও বিতরণ, ইদবস্ত্র বিতরণ, ইদের খাবার বিতরণ প্রভৃতি। পাশাপাশি সংগঠনটি সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠী বেদে, চা শ্রমিক ও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মাইবম দর্পন সিংহ জানান, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের উন্নয়নে স্বপ্নোত্থান সর্বদা নিবেদিত প্রাণ। মানুষের প্রয়োজনে সামর্থ্য অনুযায়ী সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবীরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এ ধারা সবসময় অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখি।

স্বপ্নোত্থানের সভাপতি ধীমান দাস দিব্য বলেন, মানুষের জন্য কিছু করার প্রেরণা নিয়েই স্বপ্নোত্থানের পথচলা। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতকল্পে কাজ করে আসছে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের কার্যক্রম আরো বিস্তৃত হয়েছে। এ পথচলায় সকলকে পাশে পেয়ে আমরা কৃতজ্ঞ। আশা করি, আমাদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রমেও প্রতিবারের ন্যায় সকলে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।

সার্বিক বিষয়ে সংগঠনটির উপদেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক আমিনা পারভীন জানান, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য স্বপ্নোত্থান প্রশংসার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনে রক্ত সংগ্রহ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ালেখার ব্যবস্থা সহ নানা ধরনের স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজ করে থাকে সংগঠনটির স্বেচ্ছাসেবীরা। 

তিনি আরো বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার্তদের জন্য শুকনো খাবার ও পুনর্বাসনে কাজ করে মানবসেবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তারা। সংগঠনের সার্বিক সহযোগিতায় সর্বদা পাশে আছি, আগামীতেও তাদের এমন মহৎ কাজে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাব।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়