ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কর্পোরেট কর কমছে নতুন অর্থবছরের বাজেটে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:২১, ১ জুন ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো বসছে বাজেট অধিবেশন। গত বছরের মতো এবারও করোনাকে বিবেচনায় রেখেই সারা বছরের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাজানো হবে। সে অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের মতো এবারও বেসরকারি খাতকে উৎসাহিত করতে বাজেটে কর্পোরেটে কর কমানো হচ্ছে।

চলতি অর্থবছর ‘মুজিববর্ষের উপহার’ হিসেবে ছয় বছর পর পুঁজিবাজারে তালিকা বহির্ভূত কোম্পানির কর কমানো হয়।
জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভূক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কর ২ দশমিক ৫ শতাংশ কমানো হচ্ছে।

এছাড়া একক ব্যক্তির কোম্পানির জন্য কর্পোরেট করে সাড়ে ৭ শতাংশ ছাড় দেয়া হচ্ছে। বিদ্যমান বাজেটে কর্পোরেট কর থেকে বছরে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আসে।

এর আগে গত ৩ মার্চ প্রাক-বাজেট আলোচনায় ২০২১-২০২২ থেকে পরবর্তী চার অর্থবছরে পর্যায়ক্রমে কর্পোরেট কর হার আড়াই থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ পর্যন্ত কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩ জুন সংসদে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য বাজেটে ব্যয়ের সম্ভাব্য আকার হবে প্রায় ৬ লাখ ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা ব্যয় পরিকল্পনা এরই মধ্যে অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। বাজেটে মোট ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৭৮ কোটি টাকার রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকতে পারে।

এর মধ্যে এনবিআরকে সংগ্রহ করতে হবে চলতি অর্থবছরের ন্যায় ৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এছাড়া এনবিআর-বহির্ভূত কর ও কর ব্যতীত সরকারের প্রাপ্তি থেকে রাজস্বের বাকি ৫৯ হাজার কোটি টাকা আসবে। ঘাটতি থাকবে ২ লাখ ১৩ হাজার ৮০২ কোটি টাকা।

জানা গেছে, বিদ্যমান কর কাঠামো অনুযায়ী কর্পোরেট করের আটটি স্তর রয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ২৫ শতাংশ, তালিকা বহির্ভূত কোম্পানি ৩২ শমিক ৫, একক ব্যক্তি কোম্পানির ৩২.৫, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও ২০১৩ সালে অনুমোদন পাওয়া নতুন ব্যাংক ৩৭ দশমিক ৫, তালিকা বহির্ভূত ব্যাংক ৪০, মার্চেন্ট ব্যাংক ৩৭ শমিক ৫০ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয়। এর বাইরে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানকে ১০ ও ১২ শতাংশ এবং সমবায় প্রতিষ্ঠানকে ১৫ শতাংশ হারে কর্পোরেট ট্যাক্স দিতে হয়।

এনবিআরের কর্মকর্তারা জানান, এবার কর আদায় বাড়াতে ভার্চুয়াল ইকোনমি, ট্রান্সফার প্রাইসিং সেল ও অডিট কার্যক্রমকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। এজন্য আয়কর আইনে নতুন ধারা যুক্ত করা হবে। এছাড়া স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় পণ্য আমদানিতে অগ্রিম আয়করে (এআইটি) ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনা হবে।

বিদ্যমান আগাম কর ৪ স্তরের পরিবর্তে ৬ স্তরে এআইটি আদায় করা হবে। তবে স্থানীয় শিল্পে এআইটিতে ছাড় আসলেও বিলাসী পণ্যে বাড়তি এআইটি দিতে হবে। এআইটির সর্বোচ্চ হার ৫ শতাংশের পরিবর্তে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানির অগ্রিম আয়কর (এআইটি) বিদ্যমান ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ, সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পের এআইটি ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে।

এদিকে নতুন কর আরোপ না করে কর ফাঁকি ও অর্থ পাচার বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়ে সম্প্রসারণমূলক বাজেট করার সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে দেশের অর্থনীতির স্বাধীন পর্যালোচনা করে সংস্থাটির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, প্রতি বছরের মতো চলতি অর্থবছরেও রাজস্ব ঘাটতি থাকবে। অন্যদিকে রাজস্ব সংগ্রহে যতটা ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, সেই তুলনায় সরকারের ব্যয় হচ্ছে না।

তিনি বলেন, এদিকে শিল্প খাতের উৎপাদন কমেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। বেসরকারি বিনিয়োগও কম। সেই তুলনায় রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, কিন্তু করোনার আগের অবস্থায় যায়নি। তবে নিট রফতানি বেড়েছে। করোনার কারণে মানুষ চাকরি হারিয়েছে। যারা চাকরি ফিরে পেয়েছে আয় আগের জায়গায় যায়নি। ভোগ কমে গেছে। দরিদ্র বেড়েছে। বৈষম্য বেড়েছে। মানুষ কাজ খুঁজতে গিয়ে যোগ্যতার তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ কাজে যাচ্ছে। এ অবস্থায় বৈষম্য রোধ ও সমবণ্টনে মনোযোগ দিতে হবে। সাধারণ মানুষের আয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্ব দিতে হবে।

তৌফিকুল ইসলাম খান আরও বলেন, বর্তমান কর কাঠামোতে নতুন কর আরোপ করা বা উচ্চ কর আরোপের সুযোগ নেই। যাওয়াও ঠিক হবে না। তবে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে হবে। এজন্য কর ফাঁকি রোধ করতে হবে। অর্থপাচার রোধ করতে হবে।

একইসঙ্গে শিক্ষা, কর্মসংস্থানমুখী কার্যক্রমে গুরুত্ব দিতে হবে। এডিপি বাস্তবায়নে আরও মনোযোগী হওয়া দরকার, বিশেষ করে চলমান গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। যারা বা যেসব প্রতিষ্ঠান বাজেট বাস্তবায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের প্রস্তুতি দরকার। সুশাসন, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা না গেলে অর্থ ব্যয় করেও প্রকৃত লক্ষ্য অর্জন হবে না।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়