ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

চ্যালেঞ্জ রুখে আওয়ামী লীগের ভোটের প্রস্তুতি

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২  

চ্যালেঞ্জ রুখে আওয়ামী লীগের ভোটের প্রস্তুতি

চ্যালেঞ্জ রুখে আওয়ামী লীগের ভোটের প্রস্তুতি

বছরটি ছিল আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বছরও। বছরজুড়ে ছিল সম্মেলনের দৌড়ঝাঁপ, একেবারে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রের সম্মেলন। বছরের শেষ সপ্তাহে এসে শেখ হাসিনাকে দশমবারের মতো দলের সভাপতি করে শেষ হলো সম্মেলনের বছর।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, শেষ হওয়া বছরটি ছিল তাঁদের সাংগঠনিক সফলতার বছর। বিএনপি যে হুমকি দিয়েছিল, তা প্রতিহত করার মাধ্যমে সাংগঠনিক শক্তির জানান দিয়েছেন তাঁরা। শুরু করেছেন আগামী ভোটের প্রস্তুতি।

২০১৮ সালের নির্বাচনের পর কয়েকটি বছর বলতে গেলে নির্বিঘ্নে পার করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিদায়ী বছরের শেষ দিকে এসে হঠাৎ একটু উত্তেজনা। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষ যখন ভুগছে, তখন বিভাগীয় পর্যায়ে গণসমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি বলে বসল, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের পর থেকে তাদের নেত্রীর কথায় চলবে দেশ। সঙ্গে বহির্বিশ্বের কিছু দেশ, বিশেষ করে পশ্চিমাদের চাপ।

মনে হচ্ছিল, কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়েছে ক্ষমতাসীনেরা। কিন্তু বিরোধীদের রাজনৈতিক আর বিদেশিদের কূটনৈতিক চাপ বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়ে বছরটি পার করল আওয়ামী লীগ।

করোনা মহামারির কারণে ২০২০ ও ২০২১ সালে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাদ দিয়ে ত্রাণসহায়তাসহ বিভিন্ন মানবিক কাজ করেছিল আওয়ামী লীগ। ২০২২ সালের শুরু থেকেই মহামারির প্রাদুর্ভাব কমে যাওয়ায় তৃণমূল থেকে সংগঠন গোছানোর কাজ শুরু করে দলটি।

বিদায়ী বছর গোপালগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, দিনাজপুর, ভোলা, ময়মনসিংহ জেলা ও মহানগর, টাঙ্গাইল, জামালপুর, বরগুনা, কুমিল্লা মহানগর, কুমিল্লা দক্ষিণ, চুয়াডাঙ্গা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, কক্সবাজার, মাগুরা, মেহেরপুর, মানিকগঞ্জ, নেত্রকোনাসহ অর্ধশতাধিক জেলায় আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। এ ছাড়া চার শতাধিক উপজেলা সম্মেলনও অনুষ্ঠিত হয়।

এসব সম্মেলন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। তৃণমূলের সম্মেলনের পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সম্মেলন হয়েছে। এ সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে চমক দেখানো হয়েছে।

সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর দলটির ২২তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অনেকটা চমকহীন সম্মেলনে টানা দশমবার সভাপতি পদে শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হ্যাটট্রিক করেন। দলটির ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের মধ্যে ঘোষিত ৪৯ সদস্যের মধ্যে চমক বলতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক পদ পাওয়া।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরখানেক বাকি থাকলেও এ নির্বাচন ঘিরে তৎপরতা শুরু করেছেন বিদেশি কূটনীতিকেরা। আর তাঁদের কাছে নানান অভিযোগ করছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোও।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পাল্টাপাল্টি নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ে নিত্যপণ্যের দামেও। এটি সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বর থেকে বিভাগীয় সমাবেশ শুরু করে বিএনপি। প্রথম সমাবেশগুলোকে গুরুত্ব না দিলেও বাসমালিকদের ‘কথিত ধর্মঘট’ এবং নানা বাধা সত্ত্বেও সমাবেশগুলোয় জনসমাগম ঘটে। এটা দেখে নড়েচড়ে বসতে হয় আওয়ামী লীগকে।

সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যার রেশে দলটির কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরে গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও; যা নিয়ে বিবৃতিও দেন বিদেশিরা। সরকারের পক্ষ থেকে এর জবাবও দেওয়া হয়েছিল। সহিংসতা ছাড়া ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে গণসমাবেশে বাধ্য করা ক্ষমতাসীনেরা সফলতা বলে মনে করেছেন।

করোনার কারণে দীর্ঘদিন নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে দূরে ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। চলতি বছরের শেষ দিকে নির্বাচনী সমাবেশ শুরু করেন তিনি। ২৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে মহাসমাবেশ করেছে দলটি।

দীর্ঘদিন পর সমাবেশে দলীয় প্রধানের সশরীরে উপস্থিতি নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। সমাবেশ থেকে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া ১১ নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ৫০ বছর উপলক্ষে যুব সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনা।

করোনা স্থবিরতা কাটিয়ে চলতি বছর সংগঠনের তৃণমূল থেকে কেন্দ্র গোছানোর কাজ করেছে করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে ওঠা, আন্তর্জাতিক শক্তির সমালোচনা এড়ানোর পাশাপাশি রাজপথে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করে টানা চতুর্থ বছরের মতো ক্ষমতা ধরে রাখা ২০২৩ সাল ক্ষমতাসীনদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচন আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ বলেন, ‘স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তিরা সব এক হচ্ছে, তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেবে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ যাতে টানা চারবারের মতো বিজয়ী হয়ে মানুষের উন্নয়নে কাজ করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা হবে নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়