জান্নাত লাভের অনেক সহজ ও ছোট আমল
ধর্ম ডেস্ক
ছবি : সংগৃহীত
মুমিনের আসল ঠিকানা হলো জান্নাত। জান্নাত অনন্ত সুখের শান্তি-সুনিবিড় আধার। জান্নাতে যাওয়ার পথ ও প্রক্রিয়া মহান আল্লাহ অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ নিজেই তার বান্দাদের জান্নাতের পথে ডেকেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ শান্তির ঘরের দিকে ডাকছেন।’ (সূরা ইউনুস, আয়াত : ২৫)
একজন ঈমানদারের জন্য আল্লাহর হুকুম পালন ও তার রাসূলের সুন্নত পালন অপরিহার্য। তবে আমলের ফিরিস্তি দীর্ঘ করার ও জান্নাত লাভের অনেক সহজ ও ছোট ছোট আমল রয়েছে।
কয়েকটি সহজ আমলের সংক্ষিপ্ত কিছু আলোচনা :
জান্নাতবাসীদের গুণাগুণ
একদিন রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে রোজা রেখেছে?’ আবু বকর (রা.) বলেন, ‘আমি রেখেছি। ' অতঃপর রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো মিসকিনকে খাবার খাইয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি। ’ রাসূল (সা.) জিজ্ঞেস করেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো জানাজায় অংশগ্রহণ করেছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি। ’ রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে কে আজ কোনো অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজ নিয়েছ?’ আবু বকর (রা.) বললেন, ‘আমি। ’ তখন রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির মধ্যে একই দিনে এসব অভ্যাস পাওয়া যাবে, সে জান্নাতে যাবে। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১০২৮)
মুখ ও গোপনাঙ্গের হেফাজত
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উভয় ঠোঁটের মধ্যভাগ (জিহ্বা) ও দুই রানের মধ্যভাগ (লজ্জা স্থান) হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব গ্রহণ করি। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৬৪৭৪)
মাতা-পিতার সেবা
রাসূল (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক’, তিনি আবারও বললেন, ‘ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক। ’ কেউ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! কে সে জন?’ রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে বার্ধক্য অবস্থায় পেল অথবা যেকোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেল, তবুও জান্নাত অর্জন করতে পারল না, সে ধ্বংস হোক। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৫১)
জ্ঞান অর্জন
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্যে বের হবে, আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জান্নাতের রাস্তা সহজ করে দেন। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ২৬৯৯)
অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়া
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে এবং একাগ্রচিত্তে তনুমনে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। ’ (আবু দাউদ : ১৬৯)
সময়মতো নামাজ আদায়ে যত্নবান হওয়া
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সময়মতো নামাজ আদায়ে যত্নবান হয়, তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। ’ (আবু দাউদ : ১৪২০) রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ফজর ও আসরের নামাজ গুরুত্বসহকারে আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৫৭৪)
প্রতি নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি তিলাওয়াত করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা নেই। ’ (আস-সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি : ৯৮৪৮)
সালামের প্রচার-প্রসার
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি ইমান আনবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। আর যতক্ষণ কোনো মুসলমান পরস্পর একে অন্যকে ভালোবাসবে না, ততক্ষণ তারা পূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না। আমি কী তোমাদের সে কাজটি বাতলে দেব, যা করলে পরস্পর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়? তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রচার-প্রসার করো। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ৫৪)
এতিমের দেখাশোনা করা
রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমি ও এতিমের লালনপালনকারী জান্নাতে একসঙ্গে এমনভাবে থাকব’-এ কথা বলে তিনি মধ্যমা ও তর্জনী আঙুলদ্বয়কে একত্রিত ও পৃথক করে দেখিয়েছেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ৫৩০৪)
রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানো
সূত্রে বর্ণিত, একবার রাস্তার ওপর একটি গাছের ডাল পড়ে ছিল, যা মানুষের জন্য কষ্টদায়ক ছিল, অতঃপর এক লোক সেটি সরিয়ে দেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করেছেন। ’ (ইবনে মাজাহ)
ঈমানের ওপর অবিচল থাকা
আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন আমি রাসূল (সা.)-এর খেদমতে গিয়েছিলাম, তখন তিনি সাদা কাপড় পরা অবস্থায় ঘুমিয়ে ছিলেন, কিছুক্ষণ পর আবার গেলাম, তখনো তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন। কিছুক্ষণ পর আবার গেলাম, তখন তিনি জাগ্রত হলেন, তখন আমি তাঁর দরবারে উপবিষ্ট হলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে এবং এর ওপর মৃত্যুবরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, যদিও সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করে? তিনি বলেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার করে এবং চুরি করে। ’ আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, যদিও সে ব্যভিচার এবং চুরি করে? তিনি বললেন, ‘যদিও সে ব্যভিচার এবং চুরি করে, এভাবে তিনবার বললেন। তারপর চতুর্থবার বললেন, আবু জরের নাক ধুলায় ধূসরিত হোক। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর আবু জর (রা.) তা বলতে বলতে বের হয়ে যান। ’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১৫৪)
আসমাউল হুসনা আয়ত্ত করা
আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালার ৯৯টি নাম আছে, যে ব্যক্তি তা আয়ত্ত করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন। ’ (বুখারি, হাদিস নং : ২৭৩৬)
রুগ্ন ব্যক্তির খোঁজ-খবর নেয়া
সাওবান (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন, “যখন কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে দেখতে যায়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত জান্নাতের ‘খিরকায়’ থাকে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ‘খিরকা’ কী? রাসূল (সা.) বললেন, জান্নাতের ফল বাগান। ” (মুসলিম, হাদিস নং : ২৫৬৮)
বেশি বেশি সদকা করা
ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা সদকা করো, কেননা সদকায় পুণ্য অর্জন হয়। আর পুণ্যে জান্নাত মিলে। যে ব্যক্তি সর্বদা সত্য বলে এবং সত্যের প্রচার করে, আল্লাহর কাছে তার নাম ছিদ্দিকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। তোমরা মিথ্যা থেকে বিরত থাকো! কেননা মিথ্যা পাপের দিকে নিয়ে যায়। আর পাপ জাহান্নামে ঠেলে দেয়। যে বান্দা সর্বদা মিথ্যা বলে ও মিথ্যা প্রচার করে, আল্লাহর কাছে সে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। (বুখারি, হাদিস নং : ২৬০৭)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাঁর ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর আনুগত্যের পাশাপাশি সর্বোতভাবে উত্তম কাজে ব্যস্ত থাকার তাওফিক দান করুন।
- যে দোয়া পড়লে মাথা ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়
- যে দোয়া পড়বেন রোগীর সুস্থতার জন্য
- কুরআন-হাদিসের আলোকে জেনে নিন কুরবানির ইতিহাস
- রাসুল (সা.)-এর কবর খনন করেন যিনি
- অহংকার পতনের মূল
- সর্বোত্তম খাবার ও উপার্জন
- মু’আয বিন জাবাল (রা.)কে মহানবী (সা.)-এর ১০ উপদেশ
- খারাপ স্বপ্ন দেখলে রাসুল (সা.) যে আমল করতে বলেছেন
- যেসব ছোট আমলে বেশি নেকি
- নামাজ না পড়লে দুনিয়ার যেসব শাস্তি অনিবার্য