জিআই পণ্যে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশ
নিউজ ডেস্ক
জিআই পণ্যে শক্তিশালী হচ্ছে বাংলাদেশ
আগামী চার মাসের মধ্যে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) চূড়ান্ত সনদ পাচ্ছে বগুড়ার দই ও শীতলপাটি। একই সঙ্গে আরো ২২টি পণ্য জিআই মর্যাদা দেওয়ার বিষয়ে যাচাই-বাছাইসহ পর্যালোচনায় আছে। এ জন্য কাজ করছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর (ডিপিডিটি)।
ডিপিডিটি সূত্র জানায়, দই ও শীতলপাটির জিআই মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে আবেদনকারীরা প্রায় সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। এই দুই পণ্যের চূড়ান্ত জিআই মর্যাদা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো অন্তত চার মাস। বাকি ২২টি পণ্যের সবগুলো জিআই মর্যাদা পাবে কি না তা আবেদনকারীদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত, যুক্তি ও অন্য কেউ আপত্তি করে কি না তার ওপর নির্ভর করছে। তবে কত দিনের মধ্যে এই পণ্যগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা জানা যায়নি।
কী ধরনের পণ্য জিআই সনদ পায় :
তিন শ্রেণির পণ্যকে জিআই মর্যাদা দেওয়া হয়, যা কৃষি, হস্তশিল্প ও প্রাকৃতিকভাবে বৈশিষ্টসম্পন্ন পণ্য হতে হবে। যেগুলো কোনো নির্দিষ্ট এলাকা বা অঞ্চলকেন্দ্রিক হয়ে থাকে, একই সঙ্গে আঞ্চলিকভাবে খ্যাতি ছড়িয়ে পড়লে সেই সব পণ্যকে ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ জন্য কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা ব্যক্তিকে তথ্য-উপাত্তসহ ডিপিডিটির কাছে আবেদন করতে হয়। তখন প্রতিষ্ঠানটি যাচাই-বাছাই শেষে সনদ দেয়। এরপর দেশের মধ্যে একক মর্যাদাসম্পন্ন হয় ওই সব পণ্য।
জিআই সনদ দেওয়া হয় যখন থেকে :
২০১৩ সালে জিআই সনদ দেওয়ার আইন পাস করে সরকার। ২০১৫ সালে বিধিমালা প্রকাশ করা হয়। এরপর এখন পর্যন্ত সারা দেশ থেকে ডিপিডিটির কাছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি ৩৯টি পণ্যের জন্য জিআই মর্যাদার আবেদন করে। এর মধ্যে চারটি পণ্যের আবেদন বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে জামদানি শাড়ি প্রথম জিআই মর্যাদা পায়। ২০১৫ সালের পর আট বছরে জিআই মর্যাদা পেয়েছে মোট ১১টি পণ্য। এখন বগুড়ার দই ও দেশের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা শীতলপাটি চূড়ান্ত মর্যাদা পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া আরো ২২টি পণ্যের আবেদন যাচাই-বাছাই ও পর্যালোচনাধীন। শীতলপাটি শুধু বাংলাদেশের বিশেষ পণ্য হিসেবে বিশ্ববাজারে তুলে ধরার জন্য জিআই সনদ পেতে আবেদন করে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। অন্যদিকে বগুড়ার দইয়ের জন্য আবেদন করে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির বগুড়া জেলা শাখা।
শীতলপাটি ও বগুড়ার দইয়ের জিআই সনদ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডিপিডিটির রেজিস্ট্রার অনুমোদন দিয়েছেন। অনুমোদিত নথি বিজি প্রেসে আগামী সপ্তাহে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। পাঠানোর পর বিজি প্রেস গেজেট আকারে প্রকাশ করবে। গেজেট প্রকাশ করতে সময় লাগবে এক থেকে দুই মাস। গেজেট প্রকাশের পর দুই মাসের মধ্যে যদি দ্বিতীয় কোনো পক্ষ বিরোধিতা না করে তাহলে আবেদনকারীকে শীতলপাটির জিআই সনদ দেওয়া হবে। ফলে চূড়ান্ত সনদ পেতে সময় লাগবে অন্তত চার মাস বা এরও বেশি সময়।
ডিপিডিটির এক্সামিনার (পেটেন্ট) নীহার রঞ্জন বর্মণ বলেন, ‘শীতলপাটি ও বগুড়ার দইয়ের সনদ দিতে যে তথ্য দরকার ছিল, সেগুলো ঠিকঠাকভাবে আবেদনকারীরা দিয়েছেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। এখন আমরা আগামী সপ্তাহে বিজি প্রেসে পাঠাব। তারা গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে নিবন্ধন হওয়ার পর অন্য কোনো দেশে জিআই পণ্য হিসেবে দেখাতে হলে, একইভাবে ওই দেশেরও সনদ নেওয়া লাগবে। সে ক্ষেত্রে নিজ দেশে নিবন্ধন থাকলে অন্য দেশের সনদ পেতে সুবিধা পাওয়া যায়। তবে একই পণ্য যদি দুই দেশে জিআই পণ্য হিসেবে সনদ পায়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে দুই দেশেরই জিআই পণ্য হিসেবে পরিচিতি পাবে।’
যেসব পণ্য জিআই পেয়েছে ও যাচাই পর্যায়ে রয়েছে :
ডিপিডিটি জানিয়েছে, জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৬ সালে সর্বপ্রথম স্বীকৃতি পায় জামদানি শাড়ি। এরপর পায় ইলিশ মাছ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ক্ষীরশাপাতি আম, নেত্রকোনার বিজয়পুরের সাদা মাটি, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল, বাংলাদেশের কালিজিরা, ঢাকাই মসলিন, বাগদা চিংড়ি, রংপুরের শতরঞ্জি ম্যাট, রাজশাহীর সিল্ক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর ফজলি আম। সঠিক তথ্য-উপাত্ত পেলে পর্যালোচনাধীন ২২ পণ্যও জিআই সনদ পাবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রংপুরের হাড়িভাঙ্গা আম, নোয়াখালীর মহিষের দুধের দই, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ল্যাংড়া জাতের আম, জয়পুরহাটের লতিরাজ কচু ও সোনালি মুরগি, মেহেরপুরের সাবিত্রী রসকদম, নওগাঁর নাক ফজলি আম, শেরপুরের তুলসী মালা ধান, জামালপুরের নকশি কাঁথা, সুন্দরবনের মধু, নড়াইলের চাচুড়ি বিলের কই মাছ, সিরাজগঞ্জের মিল্ক ভিটার তরল দুধ ও দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল।
চার পণ্য কেন তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় :
যে চারটি আবেদন বাতিল হয়ে যায়, তার মধ্যে তিনটি আবেদনই ছিল টাঙ্গাইলের পোড়াবাড়ির চমচম নিয়ে। কিন্তু আবেদনকারীরা প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দেননি, ঐতিহাসিক প্রমাণও দেখাতে পারেননি। এই পণ্যটি কেন বিশেষ তার জবাব আবেদনকারীবা দেননি। তিনবার তাঁদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। এর পরও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। আরেকটি আবেদন ছিল পিরোজপুরের মাল্টার জন্য। তাঁকেও চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু আবেদনকারী জবাব না দেওয়ায় চিটি বারবার ফেরত আসে।
কেন দেওয়া হয় জিআই সনদ :
ডিপিডিটির কর্মকর্তারা বলছেন, এটার যে ধরনের সুবিধা পাওয়ার কথা ছিল, সেটা কার্যকর করা যায়নি। যাঁরা সনদ নিয়েছেন তাঁরাও পারেননি। আস্তে আস্তে দুই থেকে চার বছর পর আমরা হয়তো জিআই সনদের সুবিধা পাব। যেমন, পণ্য ব্র্যান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে, আসল পণ্য পেতে ক্রেতাদেরও সুবিধা হয়। কোনো পণ্য জিআই পণ্যের সনদ পেলে তারা নিশ্চিত থাকতে পারে যে ওই পণ্যটি অথেনটিক বা গুণাগুণসম্পন্ন। সে ক্ষেত্রে ক্রেতারা নিঃসন্দেহে পণ্য ক্রয় করতে পারে। একই সঙ্গে দাম বেশি হলেও তারা ক্রয় করে। এতে উৎপাদকরা তুলনামূলক বেশি মুনাফা পাবে। আর ক্রেতার ক্ষেত্রে সুবিধা হলো, ভালো, মানসম্পন্ন, আসল পণ্যটি সে পেল।
ডিপিডিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার আলেয়া খাতুন বলেন, ‘জিআই সনদ পেলে আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে সুবিধা হয়। সনদ পেলে রপ্তানিতে সুবিধা পাওয়া যায়। বিদেশিরা জানবে পণ্যটি বাংলাদেশের ওই নির্দিষ্ট এলাকার। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। আর দেশ যত বৈদেশিক মুদ্রা পাবে তত এগিয়ে যাবে, শিল্পায়ন হবে। তৈরি খাবারের মধ্যে বগুড়ার দই-ই প্রথম জিআই সনদ পেতে যাচ্ছে। জিআই সনদ পাওয়া পণ্যগুলো প্রস্তুত করে খুবই প্রান্তিক মানুষেরা।’
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- PM vows to make leprosy free Bangladesh by 2030
- Bangladesh joins `50-in-5` campaign as first-mover country to implement DPI
- রাজধানীতে আজ চালু হলো ১০টি ইউটার্ন
- কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর ন্যাশন’ উদ্বোধন করে
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ রাষ্ট্র বনাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
- ২৫তম পর্ব: কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই
- প্রতিমন্ত্রী জানালেন বাড়তি বিদ্যুত বিল এলে যা করবেন