ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

দীর্ঘতম জাতীয় পতাকা বানিয়ে গিনেস বুকে বাংলাদেশের ইমরান

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:০৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

ইমরান শরিফ

ইমরান শরিফ

বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ক্রীড়া-সংস্কৃতি, দেশাত্মবোধ ইত্যাদির সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাটা তার অনেক পুরোনো। সবসময় দেশসম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে চিন্তা করেন ইমরান শরিফ। একটি বহুজাতিক কোম্পানির আইন কর্মকর্তা ইমরান থাকেন রাজধানীর উত্তরায়। পেশাতে নিজের সবটুকু নিয়ে জড়িয়ে থাকলেও ইমরানের আছে অন্য আরেক পরিচয়, তিনি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অধিকারী। দেশের নাম বিশ্বের মাঝে ভিন্নভাবে তুলে ধরতে তার এই উদ্যোগ। 

সম্প্রতি, দেশের জন্য এক অনন্য স্বীকৃতি বয়ে এনেছেন ইমরান। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় বাংলাদেশের নাম এখন যুক্ত হয়েছে 'বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম জাতীয় পতাকা'র জন্য।

চিঠি লেখার খাম দিয়ে বানানো পতাকা ক্যাটাগরিতে চার হাজার ৯৭০টি খাম ব্যবহার করে বিশ্বের দীর্ঘতম জাতীয় পতাকা তৈরি করেন ইমরান। তার বানানো লাল-সুবজের পতাকাটি ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনই নথিভুক্ত করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ। 

                                                         ইমরান শরিফের তৈরি পতাকা

তিনি জানান, নির্দিষ্ট মাপের জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের এনভেলাপ বা চিঠি লেখার চার হাজার ৯৭০টি খাম দিয়ে সুবিশাল জাতীয় পতাকা তৈরি করি, যার পরিমাপ ছিল ৬০ বর্গমিটার; জাতীয় পতাকার রঙের প্রতিটি খামের ভেতরে অবজেক্ট হিসেবে ছিল বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের প্রথম দু'চরণ, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বৃহত্তম জাতীয় পতাকা হিসেবে বিশ্বরেকর্ডের তালিকায় স্থান নিয়ে আছে।

এ বছরের ২০ এপ্রিল গিনেস কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ইমরানকে দেয়া এই স্বীকৃতির সম্পর্কে তাদের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, বিশ্বের দীর্ঘতম এনভেলপ মোজাইক পতাকাটি ৬০ বর্গমিটারের। ২০১৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর পতাকাটি বানিয়েছেন ইমরান শরিফ। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের এই বিভাগের আনুষ্ঠানিক নাম 'লার্জেস্ট এনভেলাপ মোজাইক (ফ্ল্যাগ)'। 

বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের আনুপাতিক মাপ ঠিক রেখে বানানো পতাকাটিতে সবুজ অংশের তিন হাজার ৮৮৩টি এবং লাল অংশের এক হাজার ৮৭টি খাম, নির্দেশনা অনুযায়ী নিজ হাতেই সব খাম তৈরি করেন ইমরান। ইমরান আরও উল্লেখ করেন, 'গত বছরের বিজয় দিবসে পতাকাটি বানিয়েছিলাম। প্রথম পর্যায়ে গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে রেকর্ড গড়তে চেয়ে আবেদন করার প্রায় তিন মাস পর তারা আমার রেকর্ডের অনুমোদন দেয়। আনুষ্ঠানিকতা শুরু করি এর পরই। সেই আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করি নির্ধারিত আকারের ও ওজনের লাল-সবুজ কাগজ বানিয়েই। এর সঙ্গে খামের ভেতরে লেখার জন্যও আলাদা কাগজ নিতে হয়েছিল।

বিচিত্র বিষয়ে রেকর্ড সংরক্ষণ করার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে এবারই নাম লেখানো ইমরানের প্রথম নয়, আগে থেকেই তার ঝুলিতে আছে আরও একটি বিশ্বরের্কড। প্রথম রেকর্ড নিয়ে জানতে চাইলে ইমরান বলেন, বিশ্বের দীর্ঘতম পেপারক্লিপ চেইন' ছিল আমার প্রথম বিশ্বরেকর্ড। দেশাত্মবোধ এবং চমকপ্রদ কিছু করার মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ডের কাজে সংযুক্ত হওয়ার ইচ্ছা থেকেই এই পথচলায় আসা। 

পেপারক্লিপ চেইন দ্বারা বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি করার ইচ্ছা থাকলেও সেই ক্যাটাগরি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের তালিকায় না থাকায় বিশ্বরেকর্ড কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতি মেলে দীর্ঘতম পেপারক্লিপ চেইন হিসেবে যার দৈর্ঘ্য ছিল ২.৫২৭ কিলোমিটার বা আড়াই কিলোমিটার (প্রায়)।' ক্ষুদ্র 'পেপারক্লিপ বা জেমসক্লিপ'-এর সংখ্যা ছিল প্রায় এক লাখ ১৩ হাজার ৭১৫টি; অসীম ধৈর্য পরীক্ষার এই প্রথম বিশ্বরেকর্ডের জন্য লেগেছে প্রায় আড়াই বছরের বেশি সময়। এত পথ আসাটা অবশ্য মোটেই সহজ ছিল না। 'প্রতিটি সাফল্যের পেছনে থাকে অজানা অগণিত অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতা। ঠিক তেমনি আমার বিশ্বরেকর্ডের পেছনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সবার অবদান অনস্বীকার্য। এক একটি বিশ্বরেকর্ড মানে হচ্ছে, বিশ্বের জনসংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের ভিড়ে এই কৃতিত্বটিই স্বীকৃত সেরা। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ'- যোগ করেন ইমরান।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়