দেশে এসেই লড়াই জমেছে জোবায়দা ও শর্মিলার

অসুস্থ শাশুড়ি বিএনপির চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াকে দেখার নাম করে ২২ মার্চ থেকে ঢাকায় আছেন তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান। বিগত পাঁচ বছর ধরে বিএনপিতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য এমনিতেই তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের মধ্যে প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিলো। এরমধ্যে যুক্ত হয় তারেক রহমানের ছোট ভাই প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথির নেতৃত্বে আসার লিপ্সা। যার রেশ তীব্রভাবে পড়তে শুরু করেছে জিয়া পরিবারে।

সূত্র বলছে, ক্ষমতার লোভে ইতোমধ্যেই জিয়া পরিবারে ফাটল দেখা দিয়েছে। আর সেই ফাটলের আগুনে ঘি ঢালতে দেশে আসেন শর্মিলা।

বিএনপি সূত্র বলছে, খালেদা জিয়াসহ তার অনুসারীদের মাইনাস করে বিএনপির চূড়ান্ত নেতৃত্ব গ্রহণ করতে ফখরুলকে হাতে রেখে নিজ ছকেই হাঁটছেন তারেক রহমান। আর তার এই স্বার্থবাদী চরিত্রকে গ্রহণ করছে না স্থায়ী কমিটিসহ স্বয়ং জিয়া পরিবার। এরইমধ্যে শর্মিলা রহমান সিঁথিকে নিয়ে দলের সক্রিয় একটি অংশ মাঠে নেমেছে।

জানা গেছে, এ অংশটি তারেক রহমানকে মাইনাস করে সিঁথিকে নেতৃত্বে আনার ‘স্বপ্ন’ দেখছে। অন্যদিকে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও আলাদাভাবে সাংগঠনিক শক্তি অর্জন করেছেন দলে। যার ফলে বিএনপিতে ত্রিমুখী নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বিএনপির একটি অংশের ভাষ্য, রমজান শুরুর দু দিন আগে চুপিসারে দুই সন্তানসহ দেশে এসেছিলেন শর্মিলা। বিগত পাঁচ দিনে, সুযোগ বুঝে, একাধিকবার খালেদার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেছেন শর্মিলা। মুক্তির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন। যার ফলে শর্মিলার প্রতি দলের একটি অংশের আলাদা সহানুভূতি সৃষ্টি হয়েছে।

সেই অংশের নেতাদের মতে, তারেক রহমান তার মায়ের জন্য কিছুই করেননি। খালেদা জিয়ার নির্দেশনা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। তারেকের উল্টোপথে হাঁটাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন শর্মিলা সমর্থকরা।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেন, খালেদা জিয়া যদি কোনো সমঝোতায় মুক্তি পান তবে সেটি হবে, রাজনীতি থেকে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় থাকার শর্ত। তখন তারেক রহমানকে নেতৃত্বে আনার বড় একটি দাবি উঠবে। সেই আলোকে তারেক রহমান এখন থেকে তার কর্মপরিচালনা করছেন। যদি কোনো কারণে তিনি সিনিয়র নেতাদের বাধার সম্মুখীন হন, তখন তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নাম প্রস্তাব করা হবে চেয়ারপারসন করার জন্য।

সাবেক নৌবাহিনী প্রধান রিয়াল অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের মেয়ে হিসেবে জোবাইদা রহমানের বাড়তি জনপ্রিয়তাও রয়েছে দলে এমনটাও মনে করেন এই নেতা। তাছাড়া সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও জোবায়দা রহমানের প্রশংসা করেছেন। যদিও ভিসা ও পাসপোর্ট জটিলতায় ডা. জোবায়দা রহমানের বাংলাদেশে আসা নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি।

তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বয়ং নেতৃত্ব নিয়ে জিয়া পরিবারেই বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে বলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেননা, ইতোমধ্যে তারেক রহমান স্থায়ী কমিটিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না, খালেদা জিয়ার বার্তাও তিনি গ্রহণ করে কার্যত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান ও তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে নেতৃত্বে আনতে বড় আকারে নতুন সংকটে পড়তে যাচ্ছে দলটি- এমন মত দলের ভেতরে ও বাইরে।