ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

দ্বৈত নাগরিকত্ব : মার্কিনি ১০৭৭৩, ব্রিটিশ ৫৬৮, কানাডিয়ান ৩৮৮

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০২, ১ এপ্রিল ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে ১০৭৭৩ জন, ব্রিটেন ৫৬৮, ইন্ডিয়া ৬১৭, কানাডায় ৩৮৮ এবং পাকিস্তানে ১১৯ জনসহ একশতাধিক দেশে দ্বৈত পাসপোর্টধারী রয়েছে। এদের সংখ্যা মোট ১৩ হাজার ৯৩১ জন।

তবে এসব পাসপোর্টধারী বা দ্বৈত নাগরিকরা বিদেশে অর্থপাচার বা বাড়ি বানিয়েছেন এমন তথ্য ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে হাইকোর্টে দাখিল করা প্রতিবেদনে।

দুর্নীতি করে অবৈধ উপায়ে বিদেশে অর্থপাচার ও বাড়ি-গাড়ি এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা রোধে সরকারের পাশাপাশি সতর্ক রয়েছেন দেশের উচ্চ আদালত। এসব অর্থপাচার ঠেকাতে সময়ে সময়ে বিদেশে অবস্থানকারীদের বিষয়ে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কাছে বারবার তথ্য চেয়েছিলেন হাইকোর্ট। এমনই সব নির্দেশনার আলোকে দ্বৈত নাগরিকদের তথ্য জমা পড়ে উচ্চ আদালতে।

অর্থপাচারকারীদের তালিকা চাওয়ার পর ২০২০ সালের ২১ ডিসেম্বর দ্বৈত নাগরিক ও দ্বৈত পাসপোর্টধারীদের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

ওই নির্দেশনার আলোকে বুধবার (৩১ মার্চ) পুলিশের বিশেষ শাখার পুলিশ সুপারের পক্ষে (ইমিগ্রেশন) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।

প্রতিবেদন পাওয়ার পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আন্না খানম কলি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজ আমরা প্রতিবেদনটি হাতে পেয়েছি। প্রতিবেদনটির এফিডেভিট প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সেটি আদালতে উপস্থিত হলে শুনানি হবে।’

এদিকে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘দ্বৈত পাসপোর্টধারী এবং নাগরিকদের মধ্যে যারা বিদেশে যাওয়া-আসা করেন তাদের মধ্যে আমাদের (ইমিগ্রেশন) ডাটাবেজ অনুসারে এসব নাগরিকদের সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৩১ জন। কিন্তু এসব পাসপোর্টধারী ও দ্বৈত নাগরিকদের বিদেশে টাকা পাচার বা বাড়ি বানিয়েছেন এমন তথ্য ইমিগ্রেশন বিভাগের কাছে নেই।’

দ্বৈত নাগরিকদের সংখ্যা :

প্রতিবেদন অনুসারে- যুক্তরাষ্ট্রে ১০ হাজার ৭৭৪ জন, আফগানিস্তান ৯ জন, আলজেরিয়া একজন, এন্টিগুয়ায় পাঁচজন, অস্ট্রেলিয়ায় ১৭৮ জন, অস্ট্রিয়ায় সাতজন, বাহামিয়ানে একজন, বাহরাইনে দুইজন, বারবাডিয়ানে একজন, বেলজিয়ামে ২১ জন, ভুটানে দুইজন, বলিভিয়ায় একজন, বসনিয়া একজন, ব্রাজেলিয়ান দুইজন, ইংল্যান্ডে ৫৬৮ জন, ব্রুনাইয়ে দুইজন, বুলগেরিয়া একজন, কানাডা ৩৮৯ জন, কম্বোডিয়া দুইজন, চিলি একজন, চায়না ১৭৭ জন, ডেনমার্ক পাঁচজন, জিবুতি একজন, ডমিনিকান তিনজন, ডাচ ১২ জন, পূর্ব টিমর্স একজন, মিশরে ১১ জন, সাইপ্রাস দুইজন, ফারো দ্বীপপুঞ্জ একজন, ফিলিপাইনে ৪০ জন, ফিন্স ২১ জন, ফ্রান্স ২১, জার্মান ২৩৮, গ্রিক তিনজন, হংকং ১৫ জন, ইন্ডিয়া ৬১৭ জন, ইন্দোনেশিয়া ৪০ জন, ইরান সাতজন, ইরাক সাতজন, আইরিশ ১১ জন, ইতালি ১১৭ জন, জাপান ৬৬ জন, জর্ডান একজন, কেনিয়া তিনজন, উত্তর কোরিয়া একজন, দক্ষিণ কোরিয়া ৪১ জন, কুয়েত দুইজন এবং কিরগিজ দুইজন দ্বৈত নাগরিক রয়েছেন।

এছাড়াও লাটভিয়ান একজন, লেবাননে দুইজন, লিবিয়ায় একজন, লুক্সেমবার্গ একজন, মালয়েশিয়া ৭৬ জন, মালদ্বীপ ১৩ জন, মালিয়ান চারজন, মরিশাচের দুইজন, মালদোভান দুইজন, মঙ্গলিয়ান পাঁচজন, মিয়ানমারে আটজন, নেপাল ২২ জন, নিউজিল্যান্ড ১২ জন, নাইজেরিয়ায় তিনজন, নরওয়ের তিনজন, পাকিস্তানি ১১৯ জন, ফিলিস্তিনে একজন, পেরু একজন, ফিলিপাইনে দুইজন, পোল্যান্ডে চারজন, পর্তুগালে ছয়জন, কাতার একজন, রোমানিয়ায় তিনজন, রাশিয়ায় ৬৫ জন, গ্রানাডায় একজন, সৌদি আরবে ১০ জন, সিঙ্গাপুর ১৭ জন, সোমালিয়া ১৬ জন, দক্ষিণ আফ্রিকা ১৩ জন, স্প্যানিশ ১১ জন, শ্রীলঙ্কা ৫৭ জন, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস চারজন, সুইডেন ৫৯ জন, সুইজারল্যান্ড ২৩ জন, তাইওয়ান ছয়জন, তানজানিয়ায় আটজন, থাইল্যান্ড ২৬ জন, তিমুর একজন, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাংগনিয়ান একজন, তুর্কি ১৫ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে আটজন, উগান্ডা ছয়জন, ইউক্রেনে চারজন, উজবেকিস্তান দুইজন, ভেনিজুয়েলা দুইজন, ভিয়েতনাম পাঁচজন, ওয়ালেস অ্যান্ড ফুটুনা একজন, ইয়েমেনে তিনজন ও জিম্বাবুয়ে দুইজন দ্বৈত নাগরিক হিসেবে বসবাস করছেন।

প্রতিবেদনটির বিষয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক জানান, প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা শেষে পরবর্তী শুনানির দিন হাইকোর্টের সামনে তুলে ধরা হবে।

এর আগে গত ২১ ডিসেম্বর স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেশ থেকে দুর্নীতি ও অর্থপাচার করে যারা বিদেশে বাড়ি নির্মাণ বা ক্রয় করেছে তাদের মধ্যে দ্বৈত নাগরিকত্ব বা পাসপোর্টধারীদের এবং যারা দেশের তিনটি (ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিমানবন্দর) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশ-বিদেশে ঘন ঘন আসা-যাওয়া করছেন, তাদের তালিকা চান হাইকোর্ট।

পুলিশের বিশেষ শাখার সুপারকে (ইমিগ্রেশন) এ তালিকা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে এসব অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও জানতে চাওয়া হয়।

এর আগে গত ১৮ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তার কাছে ২৮টি কেস এসেছে। এর মধ্যে রাজনীতিবিদ হলেন চারজন।’

এ বিষয়ে গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন বিবেচনায় নিয়ে গত ২২ নভেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলসহ আদেশ দেন।

দেশের বাইরে অর্থপাচারে জড়িত দুর্বৃত্তদের নাম, ঠিকানা ও পাচার করা অর্থে তাদের বিদেশে বাড়ি তৈরিসহ বিস্তারিত তথ্য জানতে চান হাইকোর্ট।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতের শুনানিতে ওঠে। সেদিন আদালত এদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য জানাতে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পররাষ্ট্রসচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, দুদকসহ বিবাদীদের সময় দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ওই তালিকা দাখিল করা হলো।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়