ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নিজের অপকর্ম ঢাকতে মামুনুল তার কথিত স্ত্রী জান্নাতকে গুম করেছেন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫২, ১১ এপ্রিল ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

চাঞ্চল্যকর তিনটি ডায়েরি ফাঁসের পর হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা স্বর্ণার খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বর্ণার জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শনিবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ঝর্নার বড় ছেলে আব্দুর রহমান। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রিসোর্টকাণ্ডের পর ফোনালাপ ফাঁস এবং জান্নাত আরার ডায়েরি ফাঁস হওয়ার পর নিজের অপকর্ম ঢাকতে মামুনুল তার কথিত স্ত্রী জান্নাতকে গুম করেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

জানা গেছে, শুক্রবার (৯ এপ্রিল) মামুনুলের কথিত স্ত্রী জান্নাতের লেখা তিনটি ডায়েরি ফাঁস হয়। ওই ডায়েরি তিনটিতে গত তিন বছর ধরে মামুনুলের সাথে সম্পর্ক এবং মামুনুলের বিষয়ে অনেক কথা লিখেছেন তার কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না। সেই ডায়েরিতে জান্নাত দিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামুনুল হক টাকা এবং ক্ষমতার জোরে কথিত স্ত্রীর দেহ কিনেছিলেন বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন জান্নাত আরা। আর এসব ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ায় ক্ষুব্ধ হন মামুনুল হক।

হেফাজতের একটি সূত্র জানিয়েছে, সকল অপকর্ম ফাঁস হওয়ায় ব্যাপক চাপে পড়েছেন মামুনুল হক। দেশব্যাপী তার প্রতারণা এবং ভণ্ডামির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন সাধারণ ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা। হেফাজতের ভেতরেও মামুনুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বেড়েছে। এসব থেকে সবার নজর সরাতে এবং নিজে বাঁচতে জান্নাত আরাকে গুম করেছেন মামুনুল। এরপর সরকারের ওপর দোষ চাপানোর পরিকল্পনা করছেন তিনি।

হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা হাসান জামিল বলেন, রিসোর্টকাণ্ডের পর সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিংয়ে অনেকেই মামুনুল হকের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের সমালোচনা করেন। ব্যক্তির দায়ে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন কয়েকজন তরুণ নেতা। তারা বলেন, এই ঘটনায় মামুনুল হকের দোষ আছে। যদি তিনি বিয়ে করেও থাকেন, তা কেন গোপন রেখেছিলেন এরকম প্রশ্ন উঠে আসে। এই ঘটনায় সংগঠন চাপে পড়েছে, যার দায় এড়াতে পারেন না মামুনুল হক। এসময় মামুনুল হককে বেশ বিষণ্ণ দেখাচ্ছিল। এরপর ডায়েরি ফাঁস হলে তার সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেন, একটা ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু কী ব্যবস্থা তা আমাকে বলেন নি।

এদিকে ঝর্নার বড় ছেলে আব্দুর রহমান পল্টন থানায় সাধারণ ডায়েরিতে বলেন, আমি বেশ কিছুদিন ধরে আমার মা জান্নাত আরা ঝর্ণার সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের বাসায় যাই। সেখান থেকে বাড়ির মালিক আমাকে জানায় ৯ এপ্রিল তিনি বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। আর আসেননি। শনিবার (১০ এপ্রিল) আনুমানিক সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই। পল্টন মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাত কয়েকজন আমাকে অনুসরণ করে। এতে আমার নিকট প্রতীয়মান হয় আমার জীবন এবং আমার মা জান্নাত আরা ঝরনার জীবন হুমকিতে। উদ্ধার হওয়া ডায়েরিগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। যে কোন সময় মামুনুল হকের লোকেরা আমাকেও গুম করে ফেলতে পারেন।

সূত্র জানিয়েছে, কাছের কয়েকজন মাদ্রাসাছাত্রকে দিয়ে জান্নাতকে গুম করতে পারেন মামুনুল। এই ছাত্ররা তার খুবই বিশ্বস্ত। মামুনুলের এই ছাত্ররাই জান্নাতের ছেলে আব্দুর রহমানকেও পল্টনে অনুসরণ করেছেন বলে জানা গেছে। এর আগেও কাউকে পছন্দ না হলে মামুনুল হক সেই ব্যক্তিকে বিশ্বস্ত ছাত্র দিয়ে আটকিয়ে কার্য সিদ্ধি করতো বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন, মামুনুল হক ধূর্ত প্রকৃতির লোক। তার দ্বারা এই কাজ করা সম্ভব। এর আগেও আমরা দেখেছি, সরকারকে চাপে ফেলতে নিজে নিজে লুকিয়ে থেকে গুমের অভিযোগ তুলেছে বিএনপি-জামায়াতের নেতারা। মামুনুল তাদেরই দোসর। ধর্ম ব্যবসায়ী এই ভণ্ড নিজে বাচতে জান্নাতকে মেরেও ফেলতে পারেন। তাই জান্নাত আরা এবং তার ছেলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব অপকর্মের জন্য অবিলম্বে মামুনুলকে গ্রেপ্তার করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহবানও জানান তারা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়