ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, বিলাসবহুল জীবনযাপন তারেকের

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৫৭, ২৮ জুন ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিএনপির প্রধান নেতা এখন তারেক জিয়া। দীর্ঘ প্রায় ১৪ বছর ধরে তিনি লন্ডনে অবস্থান করছেন। যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব নিয়েছেন এমন গুঞ্জনও শোনা যায়। সেখানে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন এবং বিএনপির শুভাকাঙ্ক্ষী নেতাকর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে তিনি একরকম বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। তারেক জিয়ার বিত্ত-বৈভবের কোন সমস্যা নেই, বিপুল সম্পদের মালিক তিনি। আর দেশে তার আপাতত আসার সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু এসব ইতিবাচক দিক এরপরেও প্রশ্ন উঠেছে যে রাজনৈতিকভাবে তারেক জিয়ার ভবিষ্যৎ কি?

২০০১ সালে বিএনপিতে নিশ্চিতভাবে বলা হচ্ছিল যে বেগম খালেদা জিয়ার পর তারেক জিয়ার হতে যাচ্ছেন বিএনপির প্রধান নেতা। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও আলাপ আলোচনা হচ্ছিল। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছিলেন যে, বিএনপি তাদের উত্তরাধিকার চূড়ান্ত করেছে এবং পরবর্তী জেনারেশনের জন্য রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করেছে, সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ পিছিয়ে আছে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি এখন পর্যন্ত তার পরে কে এই ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট করেননি এবং এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নানারকম আশঙ্কা, চিন্তা, উৎকণ্ঠা রয়েছে। কিন্তু এইসব উৎকণ্ঠার পর দেখা যাচ্ছে যে, শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তই যে সঠিক তা প্রমাণিত হয়েছে। রাজনৈতিক উত্তরাধিকার মনোনয়ন না করে তিনি বরং আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন গুঞ্জন, গসিপ এবং বিভক্তি থেকে মুক্ত করেছেন, বিএনপি যার প্রমাণ।

তারেক জিয়ার উত্থান ঘটে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর। এরপর তিনি বেগম খালেদা জিয়ার বিকল্প প্যারালাল একটি রাজনৈতিক পরিকাঠামো বিএনপিতে গঠন করেন। তার নিজস্ব পছন্দের লোকজনকে তিনি মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেন। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে তিনি সরকার এবং রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি ওয়ান-ইলেভেন আসার পর প্রথমে তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুন এবং পরে তারেক জিয়া নিজে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ইত্যাদি একাধিক মামলা রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত তারেক রাজত্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দলটির নাম হল বিএনপি। এই সময় বিএনপি জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনায় সরাসরি তারেককে অভিযুক্ত করা হয়।

এছাড়াও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্রের তারেক জিয়ার সম্পর্ক রয়েছে বলে একাধিক তদন্ত রিপোর্টে জানিয়েছে। এরকম বাস্তবতায় তারেক জিয়ার লন্ডন থেকে বিএনপিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। আর এই নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন যেটি এসেছে তা হল যে, আসলে তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি?

এক সময় তারেক জিয়া ছিলেন দলের মধ্যে একচ্ছত্র নেতা। দলের বাইরে থাকে পরবর্তী জেনারেশনের প্রতিনিধি মনে করা হতো। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তারেক জিয়ার দলের মধ্যে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ, জনপ্রিয়তা থাকলেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এবং দলের বাইরের সাধারণ মানুষের কাছে দুর্নীতিবাজ, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষক মনে করা হতো। আর ২০২১ সালে এসে তারেক জিয়া তার নিজের দলে এখন সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

বিএনপি নেতারা প্রকাশ্যে না বললেও গোপনে তারা স্বীকার করেন যে, তারেক জিয়া যতদিন বিএনপিতে থাকবেন ততদিন বিএনপির কোন ভবিষ্যৎ নেই। তিনি একাধিক মামলা দণ্ডিত। কাজেই সহসা তার দেশে ফেরার কোন সম্ভাবনা নেই। দেশে ফিরলেও তিনি কিছু করতে পারবেন এমন সম্ভাবনাও খুব একটা নাই।

রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় জিনিস হলো যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা সামনাসামনি করতে হয়। কারাগারের ভয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা, নিজের মায়ের অসুস্থতা শুনে খবর না নেয়া এবং রাজনৈতিক দলকে জিম্মি করে চাঁদাবাজি, টাকা আদায় ইত্যাদি ঘটনা দলের মধ্যেও তারেক জিয়ার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তাই তারেক জিয়া এখন দলে, দলের বাইরে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অগ্রহণযোগ্য একটি নাম। এই বাস্তবতায় শেষ পর্যন্ত তারেক জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়