পদ্মা সেতুতে বদলে যাবে দেশ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবৃদ্ধি বাড়বে ২ শতাংশ
নিউজ ডেস্ক
ফাইল ছবি
সব বাধা-বিপত্তি দূর করে আগামী ২৫ জুন সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত হতে যাচ্ছে সর্বনাশা পদ্মার বুকে নির্মিত স্বপ্নের সেতু। দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখবে এ সেতু। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।
পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা উপকৃত হবে। জেলাগুলো হচ্ছে- খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, সাতক্ষীরা, নড়াইল, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ ও মাগুরা; বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী।
তবে পদ্মা সেতুর আরও সুফল পেতে দক্ষিণাঞ্চলে পোশাক ও পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে, যাতে করে বিদেশি বিনিয়োগ আসে।
‘দেশের দক্ষিণাঞ্চলে যত বেশি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে, জিডিপিতে এর অবদান তত বেশি হবে। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলের পণ্য আমদানি সহজ হবে। মালামাল দ্রুত সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাবে। প্রবৃদ্ধি এক থেকে সর্বোচ্চ দুই শতাংশ বাড়বে।’
‘পদ্মা সেতুর সর্বোচ্চ বেনিফিট (উপকার) পেতে দক্ষিণাঞ্চলে বিনিয়োগ দরকার। সবখাতে বিনিয়োগ হতে পারে। এর ফলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে। কুয়াকাটায় আরও বিনিয়োগ করতে হবে। মানুষ কক্সবাজার বাদ দিয়ে কুয়াকাটায় যাবে।’
অর্থনীতিবিদদের মতে, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এই একটি সেতুতেই এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে, যা অর্থনীতিকে নতুন মাত্রা দেবে। এই বৃহৎ অঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ইপিজেড। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। সারাদেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকলেও বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এসব জেলায় উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রয়েছে। বিশদভাবে বলতে গেলে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য ও পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে জিডিপিতে অতিরিক্ত ১০ বিলিয়ন ডলার যোগ হবে, যা সেতুটির ব্যয়ের প্রায় তিনগুণ বেশি।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের গর্বের বিষয়। এটি শুধু সেতুই নয়, পদ্মা সেতু হবে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। এর ফলে আমাদের ভৌগোলিক যে বিভাজন ছিল, তাতে সংযোজন স্থাপন হবে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশ একটা একীভূত অর্থনীতি হিসেবে আবির্ভূত হবে।
‘পদ্মা সেতুর ফলে আমাদের বিনিয়োগ, বিতরণ ও বিপণনগুলোতে যে সাশ্রয় হবে, সেটা আমাদের অর্থনীতিতে ইতিবাচকভাবে ভূমিকা রাখবে। এছাড়া ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে। এরই মধ্যে পদ্মার করিডোরের পাশ দিয়ে বিনিয়োগের বিভিন্ন ধরনের সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। তবে এসব বিনিয়োগে যে কর্মসংস্থান হবে, সেগুলো আমাদের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে অবদান রাখবে বলে আমরা মনে করছি।’
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর সঙ্গে যেগুলো হওয়ার কথা যেমন: বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, ইন্ডাসট্রিয়াল পার্ক এগুলোও হতে হবে। এগুলোর জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত করতে হবে। সুতরাং সেতু খোলার পরবর্তীতে যে কাজগুলো করার কথা, সেগুলো করতে পারলে সম্ভাব্য যে জিডিপিতে অবদান সেটা অনেক বেশি হবে।
‘সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী ১ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। তবে এটা বেশিও হতে পারে। যদি আমরা অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিনিয়োগ বাড়াতে পারি, তবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি হবে। তবে এটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে না। মূলত পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিনিয়োগ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও পর্যটন খাতের ব্যাপক উন্নয়নে এটা সম্ভব হবে।’
এ সেতুর মাধ্যমে সর্বনাশা পদ্মার বুকে স্বপ্ন জেগে উঠেছে বলে মনে করেন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, পদ্মা ছিল কীর্তিনাশা পদ্মা, এখন হয়ে যাবে কীর্তিমান পদ্মা। এর ওপর দিয়ে আমাদের নতুন সফলতা গাঁথা হবে। তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। পাথরে না লিখে, হৃদয়ে লেখা হোক না, শেখ হাসিনার নাম।
তিনি আরও বলেন, পদ্মা সেতু যতদিন থাকবে, আমরা এই নাম হৃদয়ে নিয়েই চলবো। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ তার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিন্তু একই সুরে বলেছিলেন, ‘বন্ধ করতে পারবা না। বিশ্বব্যাংক অনেক কথা বললো, টাকা দিলা না তোমরা। কিন্তু আমরা অতিক্রম করবোই।’ সেই সাহস, তেজোদ্দীপ্ত ঘোষণাই আজকের পদ্মা সেতু।
শুধু বাংলাদেশ নয়, পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব পুরো বিশ্বে ইতিবাচক সাড়া ফেলবে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মাসেতু উদ্বোধনের পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে। পাশাপাশি পণ্য পরিবহন ও যান চলাচল ব্যাপক বেড়ে যাবে। সে কারণে আমাদের যে পণ্য আছে, সেগুলো সহজেই ঢাকা আসবে। আবার ঢাকা থেকেও সহজেই পণ্য নিয়ে যাওয়া যাবে। এই আসা-যাওয়ার ফলে অনেক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি হবে। পণ্যের সহজলভ্যতা বাড়বে। সে কারণে বাজারে চাহিদা সৃষ্টি হবে। আমাদের যে ওয়াইডার (বিস্তীর্ণ) ইকোনমিক মার্কেট, সেগুলো আরও ইন্টিগ্রেটেড (সমন্বিত) হবে।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রভাব সরাসরি দেশের অর্থনীতিতে পড়বে। যার ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়বে। এছাড়া কর্মসংস্থান বাড়ার ফলে এই এলাকার বেকারত্ব দূর হবে। যার ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়ে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে।
পদ্মাসেতুর অর্থনৈতিক প্রভাব পুরোদেশে ছড়িয়ে পড়বে দাবি করে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, যাতায়াতে খেয়াল করলে এর অবদান সরাসরি দেখা যাবে। পদ্মা সেতু চালু হলে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় চাপ কমবে। আর সেখানে চাপ কমলে যমুনা সেতুতে চাপ কমবে। সুতরাং পদ্মা সেতু শুধু দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আশীর্বাদ নয়, দেশের উত্তর, পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম সব দিকে এ সেতুর প্রভাব ছড়িয়ে যাবে।
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- PM vows to make leprosy free Bangladesh by 2030
- Bangladesh joins `50-in-5` campaign as first-mover country to implement DPI
- রাজধানীতে আজ চালু হলো ১০টি ইউটার্ন
- কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর ন্যাশন’ উদ্বোধন করে
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ রাষ্ট্র বনাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
- ২৫তম পর্ব: কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই
- প্রতিমন্ত্রী জানালেন বাড়তি বিদ্যুত বিল এলে যা করবেন