ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পর্যায়ক্রমে দেশের সব আদালত খুলে দেয়ার পরিকল্পনা

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৫:৫৬, ৪ জুন ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমে আসতে থাকায় পর্যায়ক্রমে দেশের সব আদালত খুলে দেয়ার পরিকল্পনা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ভার্চুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি কয়েকটি আদালতে শারীরিক উপস্থিতিতে মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
গত ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সারাদেশে নিম্ন আদালতে বিচার কাজ বন্ধ ছিল। তবে জরুরি বিষয়ে শুনানির জন্য এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট খোলা রাখা হয়। শুধুমাত্র প্রতিদিনের গ্রেফতার করা আসামিদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেই ম্যাজিস্ট্রেট আদালত খোলার সিদ্ধান্ত হয়।

এরপর ১২ এপ্রিল থেকে জামিন আবেদন ও অতি জরুরি ফৌজদারি বিষয় নিষ্পত্তি করতে ভার্চুয়ালি শুনানির জন্য সারাদেশে নিম্ন আদালত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার কমে আসায় ভার্চুয়াল পদ্ধতির পাশাপাশি কয়েকটি আদালতে শারীরিক উপস্থিতিতে মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে শারীরিক উপস্থিতিতেই দেওয়ানি মামলা করার অনুমতি দিয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্ট। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনস্থ আদালতগুলোরও মামলা দায়েরের অনুমতিও দেয়া হয়।

সম্প্রতি করোনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলা ও দায়রা জজ আদালত, মহানগর দায়রা জজ আদালত, সিজেএম এবং সিএমএম আদালতগুলোসহ সব অধস্তন আদালতের কার্যক্রম চালু করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হয় আইনজীবীদের পক্ষ থেকে। প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানান ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট আইনজীবী সমিতি।

ঢাকা আইনজীবী সমিতির আবেদনে জানানো হয়, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘদিন ধরে সরকার ঘোষিত রাষ্ট্রীয় লকডাউনের কারণে আদালতগুলোয় স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে সামান্য পরিসরে আদালতের ভার্চুয়াল কার্যক্রম চললেও বাকি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এতে বিচারাধীন মামলা-মোকদ্দমার জট বাড়ছে, বিচার বিলম্বিত হচ্ছে। বিচারপ্রার্থী ব্যক্তিরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের কল্যাণ বিবেচনা করে অতিসত্বর আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় আবেদনে।

তবে করোনা পরিস্থিতি দেখে কোর্টের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি জানান, সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। পরিস্থিতি দেখে অ্যাটর্নি জেনারেল ও বারের সম্পাদকের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

গত ১১ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। সেখানে বলা হয়েছিলো- কোভিড-১৯ এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে ১২ এপ্রিল থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে জামিন ও অতি জরুরি ফৌজদারি দরখাস্তগুলো নিষ্পত্তি করার উদ্দেশ্যে আদালত ও ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

এছাড়া সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতায় প্রত্যেক চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট/চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এক বা একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক শারীরিক উপস্থিতিতে দায়িত্বপালন করবেন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিলো।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী বলেন, বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দেশের সব নিম্ন আদালত খুলে দেয়া এবং সুপ্রিম কোর্টে বেঞ্চ সংখ্যা বাড়ানো উচিত।

তিনি বলেন, দীর্ঘ এক বছর করেনার কারণে আইন পেশা গভীর খাদে পড়ে আছে। আইনজীবীরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। গত ১৩ মার্চ পর্যন্ত হাইকোর্ট বিভাগে ৩৫টি ভার্চুয়াল কোর্ট ও ১৮টি রেগুলার (শারীরিক উপস্থিতিতে) কোর্ট চলমান ছিল এবং নিম্ন আদালতে নিয়মিত কোর্ট চালু ছিল। তাই আগের মতো উচ্চ আদালত এবং নিম্ন আদালতে পুরোপুরি নিয়মিত কোর্ট চালু করা উচিত।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এ হিসেবে আদালত খোলার ব্যাপারে আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে আদালত খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আশাকরি, মহামারি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব আদালতের নিয়োজিত কার্যক্রম শুরু হবে।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আদালত বন্ধ বা খোলা রাখার এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির, আমার নয়। কিন্তু আমার বিশ্বাস করোনাভাইরাসের তীব্রতা বা করোনাভাইরাস যদি কমে যায় এসব বিবেচনা করে প্রধান বিচারপতি সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়