প্রধানমন্ত্রীর স্বস্তি প্রকাশ করোনার মধ্যেও জলবায়ু নিয়ে কাজ করতে
নিউজ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) বাংলাদেশের নেতৃত্বে থাকাকালীন ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি যথার্থ কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে করোনা মহামারির মধ্যেও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজ করতে পারায় স্বস্তি প্রকাশ করেন তিনি।
গতকাল বুধবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ থেকে ঘানার কাছে সিভিএফ সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিমণ্ডলে এখন সিভিএফের একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। সিভিএফ বাংলাদেশের সভাপতিত্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি যথার্থ কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বে এর সদস্যপদ বৃদ্ধিই তার প্রমাণ। আমি আশা করছি এটি প্যারিস চুক্তির অধীনে উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে চাপ অব্যাহত রাখতে পারবে।
তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সভাপতিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায় হবে ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যাকে জলবায়ু দুর্বলতা থেকে স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধিতে রূপান্তরিত করা। বাংলাদেশে আমরা আমাদের ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি এটি অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে।
সিভিএফ সদস্য দেশগুলিতে এক দশমিক ৫ বিলিয়ন মানুষ জলবায়ু জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলমান ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও আমরা বিশ্বকে আশংকাজনক জলবায়ু সংকট থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে দিতে পারি না। উন্নত দেশগুলোকে প্যারিস চুক্তির অধীনে অর্থায়ন ও প্রযুক্তির বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।
তিনি বলেন, ঘানার নেতৃত্বে আমরা সিভিএফের ট্রেডমার্ক- নৈতিক শক্তি এবং যুক্তিপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে আমাদের যেসব দাবি পূরণ হয়নি, সেগুলোর জন্য চাপ দিতে থাকবো।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ঘানার নিকট সিভিএফ প্রেসিডেন্সি হস্তান্তর করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। এই অনুষ্ঠানে সদয় উপস্থিতির জন্য আমি রাষ্ট্রপতি নানা আকুফো-আডোকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ঘানার প্রেসিডেন্সির সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
২০২০ সালে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো সিভিএফের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেও ফোরামের কাজ পরিচালনা করতে পেরেছি। আমরা স্বস্তি বোধ করি যে, আমরা আমাদের বেশিরভাগ উদ্দেশ্যসহ আরও অনেক কিছু অর্জন করতে পেরেছি। শুরু থেকেই আমাদের প্রেসিডেন্সি কপ-২৬ ফলাফলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মহামারি থাকা সত্ত্বেও আমরা জলবায়ু সংকটের দিকে বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। দেশগুলোর জন্য তাদের জলবায়ু উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাড়াতে মিডনাইট সারভাইভাল ডেডলাইন চালু করেছি।
তিনি বলেন, আমরা তাদের ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এনডিসি জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। প্রায় ৭০টি দেশ আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়েছে। আমরা সিভিএফ-ভি২০ জয়েন্ট মাল্টি-ডোনার ফান্ডও তৈরি করেছি, যাতে সদস্যদের জলবায়ু সংক্রান্ত পদক্ষেপে সহায়তা করা যায়। বাংলাদেশ এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ যাতে সিড মানি (প্রয়োজনীয় অর্থ) প্রদান করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন যে, তারা ২০২১ সালে ক্লাইমেট ভালনারেবলস ফাইন্যান্স সামিট আয়োজন করেছিলেন, যা পরবর্তী পাঁচ বছরে ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু অর্থায়নের জন্য একটি ডেলিভারি পরিকল্পনার জন্য চাপ দেয়।
তিনি বলেন, আমরা গ্লাসগোতে এটি উপলব্ধি করেছি যে, ঢাকা-গ্লাসগো ঘোষণা প্রকৃতপক্ষে সিভিএফেরই মূল দাবি এবং প্রতিশ্রুতির সারসংক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বর্ধিত অভিযোজন অর্থায়ন এবং ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে আন্তর্জাতিক সংলাপের জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মেয়াদে নিযুক্ত সিভিএফের পাঁচজন থিম্যাটিক অ্যাম্বাসেডরের কাজের জন্য তারা গর্বিত।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানবাধিকারের জন্য আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতি এবং অভিবাসনের বিষয়ে আমাদের অগ্রগতি বজায় রাখবো। সিভিএফ- ভি২০ পার্লামেন্টারি গ্রুপের জলবায়ু বিষয়ক কাজের জন্য জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, আমি আত্মবিশ্বাসী যে সিভিএফ নেতৃত্ব শক্ত হাতে থাকবে প্রেসিডেন্ট আকুফো-আডোর অধীনে এবং ট্রোইকার সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ ঘানাকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের প্রাক্তন মহাসচিব প্রয়াত কফি আনানের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত স্মৃতির কথা স্মরণ করে বলেন, আমি নিশ্চিত যে তিনি বাংলাদেশ ও ঘানার মধ্যে সিভিএফের মাধ্যমে এই সংযোগ দেখে খুশি হতেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রোসিডেন্সি কালীন অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য আমরা সিভিএফ এবং জিসিএ সচিবালয়ের প্রতি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। আমরা ট্রোইকা সদস্য, ইথিওপিয়া এবং মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের আমাদের ওপর আস্থা রাখাকে স্বীকার করি। সিভিএফকে পর্যাপ্ত জায়গা দেওয়ার জন্য আমরা কপ২৬ প্রেসিডেন্সির কাছে ঋণী।
প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার সহকর্মী এবং তাদের নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকারও প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, আমাদের কিছু সংসদ সদস্য এবং একাডেমিক বিশেষজ্ঞদের দেওয়া সমর্থনকেও আমি স্বীকার করি। আমি বিশেষভাবে আমার সিভিএফ বিশেষ দূতকে সফলভাবে কাজ সম্পন্নের জন্যও ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ থেকে ঘানার কাছে সিভিএফের সভাপতিত্ব হস্তান্তর করেন। ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দো, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, পরিবেন, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শার্লি আয়োর্কোর বোচওয়ে, গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন বান-কি মুনও ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
সিভিএফের থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর ও বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যাডভাইসরি কমিটি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার্স এর চেয়ারপার্সন সাইমা ওয়াজেদ অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সিভিএফ প্রায়োরিটিজ বিষয়ক বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে সিভিএফ প্রেসিডেন্সি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। এ সময় সিভিএফের বাংলাদেশের সভাপতিত্ব থাকাকালীন দুই বছর মেয়াদকালের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমের প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- PM vows to make leprosy free Bangladesh by 2030
- Bangladesh joins `50-in-5` campaign as first-mover country to implement DPI
- রাজধানীতে আজ চালু হলো ১০টি ইউটার্ন
- কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর ন্যাশন’ উদ্বোধন করে
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ রাষ্ট্র বনাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
- ২৫তম পর্ব: কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই
- প্রতিমন্ত্রী জানালেন বাড়তি বিদ্যুত বিল এলে যা করবেন