ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বিশ্ব ওজোন দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিশ্ব ওজোন দিবস আজ। ওজোন স্তরের ক্ষয় ও এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরিতে প্রতিবছর ১৬ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক ওজোন দিবস পালন করা হয়। বিশ্বের অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবস পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিশ্ব ওজোন দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘ মন্ট্রিল প্রটোকল মেনে ওজোনস্তর রক্ষা করি-নিরাপদ খাদ্য ও প্রতিষেধকের শীতল বিশ্ব গড়ি’।

১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী দ্রব্যগুলোর ব্যবহার নিষিদ্ধ বা সীমিত করার জন্য ভিয়েনা কনভেনশনের আওতায় ওজোনস্তর ধ্বংসকারী পদার্থের ওপর মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। এ দিনটিতেই পালিত হয় বিশ্ব ওজোন দিবস বা আন্তর্জাতিক ওজোনরক্ষা দিবস হিসেবে। বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এই মন্ট্রিল প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। এরপর থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়।

রাষ্ট্রপতির বাণী
দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ওজোনস্তরের সুরক্ষায় সিএফসি গ্যাস নির্ভর শীতলীকরণ যন্ত্রের ব্যবহার কমাতে জনগণকে সচেতন করা খুবই জরুরি।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব ওজোন দিবস ২০২১’ পালিত হচ্ছে জেনে রাষ্ট্রপতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। পৃথিবীর সব জীবের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা এবং সর্বোপরি মানবস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ওজোনস্তরের গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে এ দিবস উদযাপন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে জীববৈচিত্র্যকে সুরক্ষা দিতে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রাণিজগতের অস্তিত্ব রক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ এ ওজোনস্তর ধ্বংসের ক্ষেত্রে বিভিন্ন শিল্পের বিশেষ করে শীতলীকরণ শিল্পে ব্যবহৃত ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন বা সিএফসি গ্যাস বড়ো ভূমিকা রাখে। ওজোনস্তর রক্ষায় ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘ গৃহীত মন্ট্রিল প্রটোকল এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। বিগত ৩৫ বছরে মন্ট্রিল প্রটোকল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে।

আবদুল হামিদ বলেন, ওজোনস্তর রক্ষার পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়নজনিত জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং বিদ্যুৎসাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ক্ষেত্রেও এ প্রটোকল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য ও ওষধ সামগ্রী সংরক্ষণে ব্যবহৃত শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, হিমায়ন যন্ত্রে উন্নত ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রতিষেধক সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির হিমায়ন যন্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। এ প্রেক্ষাপটে এবারের ওজোন দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মন্ট্রিল প্রটোকল মেনে ওজোনস্তর রক্ষা করি-নিরাপদ খাদ্য ও প্রতিষেধকের শীতল বিশ্ব গড়ি’ যথার্থ হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর বাণী
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওজোনস্তর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিকে মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত করলেও বায়ুদূষণ কমানোর মাধ্যমে ওজোন স্তর পুনর্গঠনে সহায়ক হয়েছে। সার্বিক প্রেক্ষাপটে, বায়ুমন্ডলীয় ওজোনক্ষয়কারী মানবসৃষ্ট দ্রব্যগুলোর উৎপাদন ও ব্যবহার রোধ এবং সেই সঙ্গে অত্যাধুনিক বিকল্প প্রযুক্তির সন্নিবেশ করলেই পৃথিবীর জীববৈচিত্র্যকে সম্ভাব্য ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব। তাই, ব্যাপকহারে জনসচেতনতা সৃষ্টি, বনায়ন, বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান অনুসরণ সর্বোপরি মন্ট্রিল প্রটোকলের যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী ওজোন স্তর সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ওজোনস্তর সূর্য থেকে নিঃসরিত অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতিকর প্রভাবে মানবদেহে চর্ম-ক্যান্সার, চোখের ছানিসহ অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ, শষ্য ও বাস্তুসংস্থানকে বিবিধ বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে সুরক্ষা দেয়। বায়ুমন্ডলের এই অতি গুরুত্বপূর্ণ স্তর সুরক্ষার জন্য ১৯৮৫ সালে ভিয়েনা কনভেনশন এবং এর আওতায় ১৯৮৭ সালে মন্ট্রিল প্রটোকল গৃহীত হয়। ফলে বিগত ৩৬ বছরে পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ওজোনস্তর ধীরে ধীরে পুনর্গঠিত হতে শুরু করেছে এবং সূর্যালোক মানুষসহ পৃথিবীর সব জীবের জন্য নিরাপদ হচ্ছে। এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিশ্ব ওজোন দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘মন্ট্রিল প্রটোকল মেনে ওজোনস্তর রক্ষা করি, নিরাপদ খাদ্য ও প্রতিষেধকের জন্য শীতল বিশ্ব গড়ি’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন বন্ধ করার লক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নের নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০, বিপজ্জনক জাহাজ ভাঙার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, ২০১১ এবং ২০১৪ সালে একটি সংশোধিত ও পরিমার্জিত ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্য (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা প্রণয়ন করেছি। জাতীয় পরিবেশ নীতি, ২০১৮, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯ এবং বিশুদ্ধ বায়ু আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছি।’

তিনি বলেন, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় গ্লোবাল সেন্টার অন অ্যাডাপটেসান (জিসিএ) এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস চালু করা হয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশে ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যে কোনো উন্নয়নমূলক প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষয়-ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে নামিয়ে এনে টেকসই উন্নয়ন অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ গ্রহণ করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ২০২০ সালের ৮ জুন মন্ট্রিল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনীতে অনুস্বাক্ষর করে এইচএফসি ব্যবহার হ্রাসের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। মন্ট্রিল প্রটোকল সফলভাবে বাস্তবায়নের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি ও ওজোন সচিবালয় ২০১২, ২০১৭ এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশকে প্রশংসামূলক সনদপত্র দিয়েছে, যা আমাদের সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন এবং অনুপ্রেরণা। তিনি ‘বিশ্ব ওজোন দিবস-২০২১’ উপলক্ষে নেওয়া সব কর্মসূচির সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়