ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

মামুনুল টাকা দিয়ে জান্নাতের দেহ কিনেছিলেন, জান্নাতের ডায়েরি ফাঁস

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ১০ এপ্রিল ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের কথিত স্ত্রীর ফোনালাপ ফাঁসের পর এবার ফাঁস হয়েছে তিনটি ডায়েরি। ওই ডায়েরি তিনটিতে গত তিন বছর ধরে মামুনুলের সাথে সম্পর্ক এবং মামুনুলের বিষয়ে অনেক কথা লিখেছেন তার কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্না। সেই ডায়েরিতে জান্নাত দিয়েছেন অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামুনুল হক টাকা এবং ক্ষমতার জোরে কথিত স্ত্রীর দেহ কিনেছিলেন বলে ডায়েরিতে উল্লেখ করেছেন জান্নাত আরা। এছাড়াও ওই ডায়েরিতে নানা ঘটনা উল্লেখ করা হলেও সেখানে মামুনুল হকের সাথে জান্নাত আরার বিয়ের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে গোপনে এক নারীর সঙ্গে অবস্থান করার সময় স্থানীয় জনগণের হাতে আটক হন মামুনুল হক। ওই দিন জনগণের প্রশ্নের মুখে তিনি দাবি করেছিলেন, সঙ্গে থাকা নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। কিন্তু রিসোর্টে থাকা রেজিস্ট্রি খাতায় ওই নারীর নাম আমিনা তায়্যিবা হিসেবে উল্লেখ করেন মামুনুল। কিন্তু পরে জানা যায় তার সাথে নারীর নাম জান্নাত আরা ঝর্না। আর মামুনুলের স্ত্রীর নাম আমিনা তায়্যিবা। কিন্তু পরে কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্রে জানা যায়, মামুনুলের সাথে জান্নাত আরার বিয়ের খবরটি মিথ্যা।

বিষয়টিতে মামুনুল হকের মিথ্যাচার প্রমাণিত হলে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হয়। আলেম পরিচয় দিয়ে এরকম অপকর্ম করায় তার শাস্তির দাবি ওঠে। সমালোচনার মুখে সোনারগাঁয়ে ধরা পড়ার পাঁচদিন পর ফেসবুক লাইভে আসেন মামুনুল হক। লাইভে এসে আবারও মিথ্যাচার করেন তিনি। সেখানেও জান্নাত আরাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে দাবি করেন। কিন্তু তার স্বপক্ষে কোন প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হন।

মামুনুল হকের লাইভের পর আজ শুক্রবার তার কথিত স্ত্রীর লেখা তিনটি ডায়েরি ফাঁস হয়। ডায়েরি তিনটিতে ২০১৮ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত মামুনুলের সঙ্গে জান্নাতের গোপন সম্পর্কের বর্ণনা রয়েছে।

ডায়েরি সূত্রে জানা গেছে, খুলনার মাদ্রাসাশিক্ষক শহিদুল ইসলাম এবং জান্নাত আরা দম্পতির সংসারে রয়েছে দুই ছেলে। ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট স্বামীকে তালাক দেন জান্নাত। বিচ্ছেদের পর বাবার বাড়ি চলে গেলেও তার কিছুদিন পরেই হেফাজতের নেতা মামুনুলের জিম্মায় চলে যান জান্নাত। অবিবাহিতা উল্লেখ করে আট মাস ধরে ঢাকার নর্থ সার্কুলার সড়কের একটি বাড়িতে সাবলেট থাকতেন জান্নাত। এই বাড়ির ভাড়া দিতেন মামুনুল হক।

প্রথম ডায়েরিতে জান্নাত লিখেছেন, ‘ আমাকে নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নেই, শরীরের দাবিদার আছে।’ এরপর এক পৃষ্ঠায় জান্নাত আক্ষেপ করে লিখেছেন, ‘মামুন সাহেব আমার শরীরটা কিনেছে কেন আল্লাহ? সব জেনে মামুন সাহেব যা করেছেন, আমি শুধু তার টাকা ফেরত দিতে চাই। আল্লাহ কবুল কর।’

মামুনুলের সাথে জান্নাতের মধ্যে যে সম্পর্ক তা যে টাকার বিনিময়ে তা বোঝা যায় দ্বিতীয় ডায়েরির লেখায়। সেখানে জান্নাত লিখেছেন, ‘আমাদের সাথে শুধু প্রেম হয়েছিল। কোন ভালোবাসা ছিল না। ছিল শুধু ক্ষণিকের আবদার পূরণের আমেজ।’

দ্বিতীয় ডায়েরির শেষ পাতায় লেখা, ‘এম। এগ্রিমেন্ট স্টার্ট। ২০-০২-১৯।’

এই সংক্ষিপ্ত লেখার ব্যাখ্যা তৃতীয় ডায়েরিতে দিয়েছেন জান্নাত। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে জান্নাত লিখেছেন, ‘স্বপ্নে দেখলাম সে হেল্প চাচ্ছে, বাট সে হাতটা বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরেছে। ভাবছিলাম ঘুমের মধ্যেই বিয়ে না করে জড়িয়ে কেন ধরেছে? এবার বাস্তবতা শুরু, ঠিক ফেব্রুয়ারির ১৯ বা ২০ হবে। এখনও চলছে। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি তাকে খুব ঘৃণা করি। আবার মাঝেমাঝে মনে হয় আমি তাকে ভালোবাসি। তবে হ্যাঁ, আমার লাইফটা নরক বানিয়ে ফেলেছে। ’

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে ধরা পড়ার পর এবং এরপর ৮ এপ্রিল লাইভে এসে মামুনুল দাবি করেছিলেন, দুবছর আগে তারা বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু জান্নাতের ডায়েরি সাক্ষ্য দিচ্ছে এ বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের বিয়েই হয়নি।

মামুনুলের আসল পরিচয় পেয়ে জান্নাত লিখেছেন ‘ সাদা সাদা জামা পরলেই আর বড় মাওলানা হলেই মানুষ হয় না, মুখোশধারীও হয়।’

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখে জান্নাত লিখেছেন, ‘টাকা দিয়ে আমার দেহ কিনেছিলেন। আজ আপনার টাকা আমি ফেরত দিতে চাই। শুধু আমার সময় ফেরত চাই। কেন করেছিলেন এমন? আপনার অনেক টাকা ছিল, পাওয়ার ছিল তাই? ’

এদিকে, ডায়েরিতে কয়েকবার আত্মহত্যার কথাও লিখেছেন জান্নাত। মামুনুলের সাথে সম্পর্কের হতাশা এবং গ্লানি থেকেই এসব লিখেছিলেন তিনি। অনেক বার খোদার কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন জান্নাত।

এদিকে ডায়েরির বিষয়ে জানতে চাইলে শহিদুল-জান্নাত দম্পতির প্রথম সন্তান আবদুর রহমান জামি বলেন, এই ডায়েরিগুলো তার মায়েরই। হাতের লেখা দেখে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ডায়েরি ফাঁস হওয়ার পর আর মামুনুলের ভণ্ডামির বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকা উচিৎ নয়। ধরা পড়ার পর ফোনালাপ ফাঁস হল। তখনই এসব পরিষ্কার হলেও ফেসবুক লাইভে এসেও আবার বিয়ের বিষয়ে মিথ্যাচার করেছেন মামুনুল। সুতরাং ডায়েরি ফাঁস হলেও যে তিনি আবারও মিথ্যা বলেই যাবেন না এমন নয়। মামুনুলদের মত ধর্ম ব্যবসায়ীরা যুগে যুগে এভাবে নিজেরা অন্যায়-অপকর্ম করে জনগণের সামনে নিজেদের ধর্ম প্রচারক হিসেবে তুলে ধরেন। প্রকৃত অর্থে জনগণের ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখের গোছানোর কাজ করেন এসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়