ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মামুনুল হক ইসলাম ও তার দল হেফাজতের জন্য কলঙ্ক

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১০, ১০ এপ্রিল ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে সাংবাদিক কাফি কামাল ফেসবুক পোস্টে লেখেন, মামুনুল হক এখন চাপে আছেন তাই উনার ইভিল নিয়ে কথা বলা যাবে না ব্যাপারটা সত্যি হতো যদি উনার ইভিলটা সামাজিকভাবে, ধর্মীয়ভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ানোর জন্য উনার অনুসারীরা উঠেপড়ে না লাগতো। যেহেতু একটা খারাপ বিষয় গ্রহণযোগ্য করতে ইসলামকেও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে তাই তিনি যত ভিক্টিমই হোন না কেনো এটার বিরুদ্ধেও বলতে হবে।

উনার এতো অনুসারী, বন্ধু, কলিগস, আত্মীয় এমনি উনাকে পছন্দ করেন না এমন সাধারণ মানুষও উনার পাশে থেকেছে, সাপোর্ট দিয়েছে, একের পর এক বের হওয়া কল রেকর্ডিংস মিথ্যা বলেছে অথচ তিনি নিজে এখন পর্যন্ত একটাবারও পারলেন না কল রেকর্ডিংস নিয়ে একটা কথাও বলতে?! নিজে একবারও বলতে পারলেন না ওসব মিথ্যা?

বলবেন কী করে? ক্লিয়ারলিই এখন বোঝা যায় ওসব সত্যই। সেজন্যই তিনি কিছু বলতে পারছেন না। উল্টো তিনি সবাইকে এখন মানবিক বিয়ের গল্প শোনাচ্ছেন যে গল্পে তিনি নিজেই পরতে পরতে পরকীয়ার সম্ভাবনার আভাস দিচ্ছেন। আমার কথা না এটা। যে কেউ উনার মানবিক বিয়ের গল্প পড়বেন তার কাছে এরকমটাই মনে হবে হাজারটা বেনিফিট অব ডাউট দেয়ার পরও।
তিনি উনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পরিবারের অভিভাবকত্ব করেন।
হোয়াই?

আপনাকে কে দায়িত্ব দিলো বন্ধুর পরিবারের অভিভাবকত্ব করার? একটা পরিবারের অভিভাবক সেই পরিবারের কর্তা। কর্তার বন্ধু সে পরিবারের অভিভাবক কেনো? এটা আবার ইসলামে কোথায় আছে?

বন্ধুর ওয়াইফের সাথে ঝগড়াঝাটি মনোমালিন্য হলে উনি মেটানোর চেষ্টা করেন বলেছেন। আর ওদিকে জান্নাত আরা ঝর্ণার বড় ছেলে বলছে উনি তার বাবা মায়ের ঝগড়া আরও উষ্কে দেয়ার ভূমিকা রাখতেন। সে ব্যাপারে মামুনুল হক চুপ কেনো? কিছু বলছেন না কেনো?

ডিভোর্সের পর সেই নারীর অভিভাবকত্বও কেনো উনি করলেন? সেই নারীর কি ত্রিভুবনে আর কেউ ছিলো না? বাবা-চাচা-মামা-খালু একশোরকম আত্মীয় থাকতে উনিই কেনো অভিভাবক হবেন? যদি আর্থিক সাহায্য করেনও সেটায় ঠিক কত বেশি যোগাযোগ রাখলে তাতে তিনি ফিতনাহর ভয় করতে পারেন? একজন পরনারীর সাথে তত বেশি যোগাযোগ রাখা কি ইসলাম জায়েজ করেছে?!

সবশেষে তিনি যে বললেন ফিতনাহ থেকে বাঁচতে যতদিন সেই নারীর অভিভাবকের প্রয়োজন ততদিন বিয়ে করে তিনি মহৎ একটা কাজ করেছেন।

যাস্ট আ মিনিট, যতদিন অভিভাবকত্ব প্রয়োজন হয় কথাটার মানে কী? কতদিনের জন্য তাহলে বিয়ে করেছেন?

যতদিন দরকার খালি ততদিনই, দরকার অদরকার ফুরানোর ইসলামী ভিত্তি কী?

এই বিয়েতে কি আদৌ তিনি সেকেন্ড ওয়াইফকে ন্যূনতম সম্মান করেন? যদি করতেনই তাহলে জাতির সামনে উনাকে এভাবে দয়া ভিক্ষা দিয়ে বিয়ে করার সাফাই গাইতেন না। এটি সেই নারীটির জন্য চূড়ান্ত অপমান যে পুরো জাতির সামনে উনার স্বামী বলছেন তোমাকে আমি পছন্দ করে না, করুণা করে বিয়ে করেছি‌!
ছিহ!!

শেম অন মামুনুল হক। উনি যদি সত্যিকারই একজন সাহসী ব্যাক্তিত্ববান মানুষ হতেন তাহলে উনার উপর জুলুম করাদের কাছে বিন্দুমাত্র সাফাই দিতেন না। তা না করে উনি কথায় কথায় আল্লাহর কসম কেটে জালিমদের সামনে মানবিক বিয়ের সাফাই গাইলেন!

কতটা দুর্বল ব্যাক্তিত্বের অধিকারী হলে মানুষ কথায় কথায় আল্লাহর কসম কাটে? সত্যিকার ব্যাক্তিত্ববানরা কখনও এতওটা ইনসিকিউরড ফিল করেন না যে বার বার আল্লাহর কসম টেনে এনে নিজেকে প্রুভ করতে হবে।

আল্লাহর কসম কেটেও তিনি যখন হোটেলে বলেছিলেন সেই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী কিন্তু নাম বলেছিলেন প্রথম স্ত্রীর, সেটা ছিলো আল্লাহর কসম দিয়েও চরম মিথ্যা বলা। তিনি হোটেলে নাম রেজিস্ট্রিও করেছেন প্রথম স্ত্রীর নামে, সবার সামনে স্ত্রীর নামও বলছেন প্রথম স্ত্রীর, আবার আল্লাহর কসম দিয়ে প্রাউডফুলি নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঝর্ণাকে ক্লেইম করছেন! এই প্রাইড দেখানো উনাকে বিন্দুমাত্র মানায় না যে কি না স্ত্রীর নামটাও সবার সামনে বলতে পারেন না, যে স্ত্রীকে বিয়ে করার সাফাই গাইতে হয় জাতির সামনে তাকে করুণার পাত্রী বানিয়ে!

যারা এরকম নোংরামি বিয়ের সাফাই গাইতে ইসলামের সাফাই গাইছেন তারাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় ক্যান্সারার অংশটা। উনারা এসবকিছুর পক্ষে ইসলামের দলীল নিয়ে আসছেন। বলছেন এভাবে গোপনে বিয়ে করা জায়েজ, সমতা করলেই হলো।

আপনাদের ইসলামের ব্যাখ্যায় এই তাহলে সমতার নমুনা? যেখানে প্রথম স্ত্রী সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছেন দ্বিতীয়জনের সামজিকভাবে নামটাও উচ্চারণ করা যাচ্ছে না? এনারা দুজন তাহলে আপনাদের কাছে সমান?!!!

একজন নারীর পরিচয়ই দেয়া হচ্ছে আরেকজনের নাম দিয়ে, উনাকে বিয়ে করার কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে জাতির সামনে উনাকে ফকিন্নির মতও বানিয়ে, এটাই আপনাদের ইসলামে সমতা?!!

এই সমতা আপনাদের সুবিধাবাদী ইসলাম ব্যাখ্যার সমতা, আল্লাহর ইসলামের সমতা না। আপনারা নিজেদের বন্ধু/কলিগ/নেতার জন্য ইসলামকে টুইস্ট করতেও ছাড়ছেন না, সমাজে এরকম অনাচারকে নরমালাইজ করতে চাচ্ছেন একারণেই আপনাদের এই ঘোর বিপদকালেও আপনাদের মতও অসৎ মানুষদের বিরুদ্ধে বলা বিবেকবানদের দায়িত্ব।

সর্বোপরি সবাই যখন মামুনুলের সাফাই গাচ্ছে, ছাত্রলীগ যুুবলীগ আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে বলছে তখন তিনি বলছেন গুটিকতক ছাত্রলীগ যুবলীগ অসৎদের জন্য বাকি ছাত্রলীগ, যুবলীগ, সরকারের বদনাম হচ্ছে! এই গুটিকতকের হাত থেকে নাকি পুরো আওয়ামী লীগকে রক্ষা করতে হবে, বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হবে!
চমৎকার!

তিনি এই ফ্যাসিস্ট রেজিমের পক্ষেই আবার কথা বলছেন এই রেজাইমের সমস্ত ক্রিমিনালদের ‘ছোট্ট একটা অংশ’ বানিয়ে দিয়ে! বাহ! উনার অনুসারী সৈনিকরা উনার ডাকে রাস্তায় নেমে জীবন দেন, উনাকে ডিফেন্ড করতে বাকযুদ্ধ করে উড়িয়ে ফেলেন, আর উনি কি না এদের উপর অত্যাচারী জালিমদেরই সাফাই গান!

এমন একজন দুর্বল চরিত্রের প্রতারক মানুষ যিনি কিনা প্রথম স্ত্রীকে বছরের পর বছর ঠকিয়ে, উনাকে হাজারও মিথ্যা বলে আরেকজনের সাথে সম্পর্ক করেছেন, সম্পর্ক করা সেই নতুন স্ত্রীরও নামটা বলার যার মুরোদে কুলায় না, আল্লাহর কসম কেটেও যার নাম মিথ্যা বলেছেন, সবার সামনে তাকে করুণার পাত্রী বানিয়ে বিয়ে করার কৈফিয়ত দিয়েছেন, সাক্ষ্য প্রমাণাদি পেশ না করে অপ্রাসঙ্গিকভাবে মুবাহালার বিধান টুইস্ট করে ব্যবহার করেছেন, ফ্যাসিস্টদের পক্ষেই আবার এতওকিছুর পরও সাফাই গাচ্ছেন, এই লেভেলের একজন হিপোক্রেট, মেরুদন্ডহীন, স্বৈরাচারের সহায়ক মানুষের কখনোই উচিত না একটা দলের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে থাকা। এমন ব্যাক্তি মোটেই এতও এতও মানুষের অনুসরণের যোগ্য না, এনার ডাকে কারোই উচিত না রাজপথে নামা।

অবিলম্বে উনাকে উচিত হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব পদ থেকে সরিয়ে সত্যিকার যোগ্য কাউকে আনা। সরকার যতই ষড়যন্ত্র করে উনার ইভিল সামনে আনুক না কেনো এখন সরকারের প্ল্যান ভেস্তে দেয়ার নাম করে উনার মতও একজনকে নেতা রাখা কখনোই ইসলামের স্বার্থে সমীচিন না।

এমন হিপোক্রেট মানুষ দলের জন্য কলঙ্ক। ইসলামের জন্য কলঙ্ক।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়