ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

মামুনুল হকের হাতে জিম্মি হয়ে আছে হেফাজত

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:২৩, ১২ এপ্রিল ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

তথাকথিত মাওলানা মামুনুল হকের একাধিক নারী কেলেংকারীর ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লেও, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না হেফাজতে ইসলাম। রবিবার (১১ এপ্রিল) হাটহাজারী মাদ্রাসায় সংগঠনটির শীর্ষনেতাদের বৈঠকের পর এই তথ্য জানিয়েছেন হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি জানিয়েছেন, এটি তার ব্যক্তিগত বিষয়। এসব নিয়ে হেফাজতের কোনো অবস্থান নেই। তবে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মামুনুল হকের নৈতিকস্খলনজনিত কারণে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যই বৈঠকটি ডাকা হয়েছিল। কিন্তু মামুনুল বিভিন্নভাবে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের ব্ল্যাকমেল করায় কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বৈঠক শেষ হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হেফাজতের একজন কেন্দ্রীয় নেতা এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। তিনি জানান, হেফাজতের বৈঠকটি সংক্ষিপ্ত পরিসরে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মামুনুল হক কয়েকজনের মাধ্যমে সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ব্লাকমেল করে বার্তা পাঠানোর কারণে হট্টগোল সৃষ্টি হয়। ফলে দীর্ঘ চার ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হয় বৈঠকটি। বৈঠকে নিজের ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে মামুনুল জানান, তাকে পদচ্যুত করা হলে ঢাকায় হেফাজতের কোনো কর্মসূচিতে আর মাদ্রাসাছাত্রদের পাঠাবেন আর তিনি। এমনকি মামুনুলের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাবে আরো জানানো হয়, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিলে আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা অর্থের জোগানও বন্ধ করে দেবেন তিনি।

মূলত, মামুনুলের সঙ্গে আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ-দাতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিনিই গত কিছুদিন থেকে হেফাজতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ডোনারদের লিংক তৈরি করেছেন এবং মামুনুল নিজেই হেফাজত ও আন্তর্জাতিক দাতাদের মধ্যস্থতাকারী (মিডলম্যান) হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও তিনি ঢাকার একাধিক কওমি মাদ্রাসা পরিচালক ও উপদেষ্টা। তাই ঢাকায় অনুষ্ঠিত হেফাজতের যে কোনো সমাবেশে এই ছাত্রদেরই কর্মী বাহিনী হিসেবে হাজির করেন তিনি। মামুনুলের মাদ্রাসায় পড়া ছাত্রদের প্রত্যেকের জন্য হেফাজতের সমাবেশে যাওয়া বাধ্যতামূলক।

মামুনুলের বিষয়ে অনুষ্ঠিত হেফাজতের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন আরো একজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে। এই কেন্দ্রীয় নেতাও জানিয়েছেন, মামুনুলের প্রস্তাবে রাজি না হলে বিদেশি অর্থ ও ঢাকার সমাবেশের জন্য কর্মীবাহিনী সরবরাহ বন্ধ করে দিতে চেয়েছেন মামুনুল হক। কিন্তু ঢাকার মাদ্রাসাছাত্রদের না পেলে হেফাজতের সমাবেশ সফল করা কঠিন। এছাড়া অর্থের ব্যাপারটাও গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপাতত মামুনুলের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে, বৈঠক শেষে বাবুনগরীর এই সিদ্ধান্তে সর্বসম্মতভাবে সবাই নৈতিক সমর্থন না দেওয়ায়, মে মাসে আরো একটি বৈঠক ডেকেছে হেফাজত। সেই বৈঠকে আবারো নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে আশ্বাস দিয়ে আপাতত সবাইকে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সম্প্রতি নিজেদের রাজনীতি করে আসছে হেফাজত। তবে এরকম একটি প্রকাশ্য ধর্মবিরোধী নোংরামিকে প্রশ্রয় দিলে সেখানে ধর্মের অবস্থান কোথায় থাকে- এবিষয়ে জানতে চাইলে কোনো উত্তর দেননি হেফাজতের দুই কেন্দ্রীয় নেতার একজনও।

প্রসঙ্গত, কোরান-হাদিসের অপব্যাখ্যা করে, দেশজুড়ে উগ্রতা ও সহিংসতা ছড়িয়ে, কর্মীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, নারী নিয়ে আবাসিক হোটেলে আনন্দ করতে গিয়েছিলেন হেফাজতের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। নিজের আসল স্ত্রী আমেনা তৈয়বার নামে হোটেল বুকিং দেন তিনি, কিন্তু বোরখার ভেতরে ছিল জান্নাত আরা ঝর্ণা নামের অন্য একজন নারী। ওই নারী পেশার একজন পার্লার কর্মী এবং তিনি মামুনুলের নিজের দল খেলাফত মজলিসের কর্মী শহিদুলের সাবেক স্ত্রী।

এরকম একটা অবস্থায়, স্থানীয়দের কাছে ধরা পড়ার পর প্রথমে পালাতে চেষ্টা করেন মামুনুল। কিন্ত ব্যর্থ হয়ে পরে ওই স্ত্রীকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন তিনি। কিন্তু এই পরিকল্পনাও ভেস্তে যায়। এসব ঘটনা ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর ওই নারী (জান্নাত আরা ঝর্ণা)-এর বড় ছেলে প্রকাশ্যে জানান যে, মামুনুল তাদের আর্থিক অনটনের সুযোগ নিয়ে তার মাকে ব্যবহার করে আসছে। এমনকি তার বাবা-মার ডিভোর্সের পেছনেও কলকাঠি নেড়েছেন মামুনুল। ডিভোর্সের আগেও তার মাকে মামুনুল কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন কিন্তু তখন তার মা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

এদিকে এই ঘটনার পক্ষে-বিপক্ষে দেশজুড়ে আলোড়ন শুরু হলে, জান্নাত আরা ঝর্ণার গত তিন বছরে লেখা তিনটি ডায়েরিও প্রকাশ্যে নিয়ে আসেন তার ছেলে। সেখানে একাধিক জায়গায় জান্নাত আরা ঝর্ণা লিখেছেন, মামুনুলের সঙ্গে তার চুক্তিভিত্তিক সম্পর্ক। শুধু টাকার বিনিময়ে মামুনুল তার শরীরটা কিনে নিয়েছেন বলেও খেদ প্রকাশ করেছেন তিনি।

এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই জান্নাতুল ফেরদৌস নামে আরো এক মাদ্রাসা শিক্ষিকার সঙ্গে মামুনুলের গোপন প্রেম প্রকাশ হয়ে পড়ে। এই নারী কেরানীগঞ্জের জান্নাতুল বায়াত মহিলা মাদ্রাসায় চাকরি করেন। একই মাদ্রাসার প্রধান উপদেষ্টা হলেন মামুনুল হক। মাদ্রাসার পাশেই এক বাসায় ওই নারী থাকেন। সেই বাসায় নিয়মিত অবসর কাটাতে যেতেন মামুনুল হক। সম্প্রতি এই ঘটনা অনলাইনে প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পর, এই নারী জানান- তার স্বামী নেই, মামুনুল তাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে শারীরিক সম্পর্ক করছেন।

নারায়ণগঞ্জের রিসোর্টে ৩ এপ্রিল নারীসহ আটক হওয়ার পর মাদ্রাসাছাত্রদের উস্কে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে বের হয়ে যান মামুনুল। এসময় তার সমর্থকরা ওই রিসোর্টে ভাঙচুর চালায়। মিথ্যা তথ্য দিয়ে মাদ্রাসাছাত্র ও হেফাজত কর্মীদের উত্তেজিত করে দেশের বিভিন্নস্থানে নাশকতার চালান ভণ্ড ধর্মগুরু মামুনুল হক। তবে এখন সব প্রকাশ্য হয়ে পড়ায় মামুনুলের ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন হেফাজতের একটা বড় অংশ।

মূলত মামুনুলের পিতা আজিজুল হক একজন স্বঘোষিত স্বাধীনতাবিরোধী এবং জামাতের সাথে তার ঘনিষ্ঠতার কারণেই মামুনুলকে অন্ধভাবে সমর্থন করে জামায়াত ও বিএনপি। মামুনুলকে বহিষ্কার করা হলে হেফাজতের জন্য জামাতের সমস্ত সহযোগিতা বন্ধ করে দেওয়া হবে এই মর্মে হুমকি দিয়ে আসছে জামাত ও তাদের বিদেশী প্রভুরা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়