ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৪ ১৪৩০

শীতের রাত তাহাজ্জুদের সেরা সময়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:৩৮, ৩ জানুয়ারি ২০২৩  

শীতের রাত তাহাজ্জুদের সেরা সময়

শীতের রাত তাহাজ্জুদের সেরা সময়

শীতকাল মুমিনের বসন্তকাল। যারা আল্লাহর ইবাদত কামনায় কাতর, সর্বদা নিজেকে মহান প্রভুর সামনে সিজদাবনত দেখতে ভালোবাসে, তাদের জন্য শীতকাল সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আগমন করে। রাত দীর্ঘ হওয়ায় শেষ রাতে ওঠা মানুষের জন্য সহজ। সুদীর্ঘ রাতবিশিষ্ট শীত মৌসুমটি সুবহে সাদিকের পূর্বে নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকিরে মগ্ন হওয়ার মৌসুম। নিজেকে আল্লাহর প্রিয় বান্দাতে রূপান্তর করার একান্ত সময়। মহান রবের প্রিয়জন হওয়ার সুবর্ণ ক্ষণ।

শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় শীতকালে রয়েছে নফল নামাজের অবারিত সুযোগ। প্রখ্যাত সাহাবি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘শীতকালকে স্বাগতম। কেননা তা বরকত বয়ে আনে। রাতগুলো দীর্ঘ হয়। ফলে তা ‘কিয়ামুল লাইলের জন্য (রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ) সহায়ক এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে সহজ।’ (আল-মাকাসিদুল হাসানা: ২৫০)

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘খোদাভীরুরা জান্নাতে ও প্রস্রবণে থাকবে। এমতাবস্থায় যে, তারা গ্রহণ করবে যা তাদের পালনকর্তা তাদের দেবেন। নিশ্চয় ইতঃপূর্বে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত। রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সুরা জারিয়াত : ১৫-১৮)। এই আয়াতে জান্নাত ও জান্নাতের অপূর্ব ও অসাধারণ নিয়ামতরাজী দানের কথা বলা হয়েছে তাদের জন্য যারা শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনায় লিপ্ত থাকে। বোঝা গেল, শেষ রাতের তাহাজ্জুদের সরাসরি বিনিময় হলো জান্নাত। আয়াতের তাফসিরে অনেকে এও বলেছেন, ‘তাহাজ্জুদ নামাজের প্রধান সময় হলো রাতের শেষ ভাগ। তবে যদি কেউ রাতে ঘুমানোর পূর্বে বা মধ্যরাতে তাহাজ্জুদ আদায় করে তাহলেও তা তাহাজ্জুদ হিসেবে গণ্য হবে।’

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘রাতের কিছু অংশে তাহাজ্জুদ পড়বে, যা তোমার জন্য এক অতিরিক্ত ইবাদত। আশা করা যায় তোমার প্রতিপালক তোমাকে ‘মাকামে মাহমুদে’ পৌঁছাবেন।’ (সুরা বনি ইসরাইল : ৭৯)। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারা ধৈর্যধারণকারী, সত্যবাদী, নির্দেশ পালনকারী, সৎপথে ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৭)

আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা পরস্পর সালাম বিনিময় কর, অভুক্তকে খাবার আহার করাও এবং রাতের বেলা মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন নামাজ আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৩৩৪)

হজরত বেলাল (রা.) বলেন, নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘তোমরা অবশ্যই রাতের ইবাদত করবে। কেননা তা তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের নিত্য আচরণ ও প্রথা। রাতের ইবাদত আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য অর্জনের উপায়। পাপকর্মের প্রতিবন্ধক, গুনাহসমূহের কাফফারা এবং দেহের রোগ দূরকারী।’ (তিরমিজি: ৩৫৮৯)

অন্য হাদিসে আবু হুরাইরা (রা.) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, নবী কারিম (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন; কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট চাইবে? আমি তাকে তা দেব। কে আছে এমন, যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব।’ (বুখারি: ১১৪৫)

এসব আয়াত ও হাদিসে একদিকে যেমন শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব ও ইবাদত-বন্দেগির প্রয়োজনীয়তার কথা প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি সীমাহীন ফজিলতের কথাও বিবৃত হয়েছে। নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশের ওয়াদা, আল্লাহর ক্ষমা প্রাপ্তির ঘোষণা ও গুনাহসমূহ দূর হয়ে যাওয়ার ইশতেহার তো একজন মুমিন মুসলমানের চির কাঙিক্ষত বিষয়।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শীতের রাতে তাহাজ্জুদসহ নফল ইবাদতের তাওফিক দান করুন। পুরো শীতকালকে কাজে লাগানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়