ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২১ ১৪৩১

শেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাচ্ছে হরিজন, নৃগোষ্ঠী ও শানদার সম্প্রদায়ের ৮৫ পরিবার

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৪০, ১৯ জুলাই ২০২৩  

শেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাচ্ছে হরিজন, নৃগোষ্ঠী ও শানদার সম্প্রদায়ের ৮৫ পরিবার

শেরপুরে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাচ্ছে হরিজন, নৃগোষ্ঠী ও শানদার সম্প্রদায়ের ৮৫ পরিবার

শেরপুর জেলাকে ভূমিহীনমুক্ত করার অংশ হিসাবে এবার সদর ও শ্রীবরদী উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার জমিসহ ঘর পাচ্ছেন হরিজন, ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী ও শানদার সম্প্রদায়ের ৮৫টি পরিবার। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক ওই ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ পরিদর্শন শেষে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের চর বেপারিপাড়ায় আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় ৭০টি এবং শ্রীবরদীর রানীশিমুল ইউনিয়নের টেঙ্গরপাড়া গ্রামে ১৫টি ঘর গৃহহীনদের পুর্নবাসনের লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহ অথবা আগস্টের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘরের চাবি তুলে দেবেন উপকারভোগীদের হাতে।

সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীন এবং গৃহহীন অর্থাৎ যাদের জমিও নেই, ঘরও নেই তাদের পুনর্বাসনের জন্য এসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। দুই শতাংশের জমিতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘর, বারান্দা, রান্নাঘর ও টয়লেটসহ বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

সরেজমিনে রানীশিমুল ইউনিয়নের টেঙ্গরপাড়া গ্রামে গেলে হরিজন সম্প্রদায়ের সদস্য দুধনাথ বলেন, আমার জন্ম ভায়াডাঙ্গা বাজারে। ছোটবেলায় দেখেছি বাজারের সব সম্পত্তি জমিদারের। দেখতে দেখতে সব জমি অন্যদের হয়ে গেল। আমার বাপ-দাদা বলতো কোনও দিন অন্যের জমি মিথ্যা কাগজ কইরা নিবি না। কিন্তু এলাকার প্রায় সবাই এখন জমির মালিক। বাপ-দাদার ভিটে যে আমাদের না, তা বুঝতে পারি নাই। তাই আমরা আজ নিজ ভূমিতে পরবাসী। হয়ে গেছি ভূমিহীন।

হরিজন সম্প্রদায়ের ১১ পরিবার ভায়াডাঙ্গা বাজারের তহশিল অফিসের ভেতরে বংশ পরম্পরায় বসবাস করছে। কথা বলার একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন দুধনাথ রাজভর।

তিনি বলেন, বুদ্ধি হওয়ার পর ৭০-৭৫ বছর অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রী জমিসহ পাকা ঘর দিচ্ছে। শান্তিতে একটু ঘুমাইতে পারমু। মরলেও শান্তি পামু।

ওই আশ্রয়ণে দুই শতক জমিসহ একটি পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি।

সম্প্রতি নতুন তহশিল অফিস ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণকাজ শুরু হলে তাদের ওই স্থান থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জেলা প্রশাসন। পরে বাজার থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে টেঙ্গরপাড়া গ্রামে ১১টি হরিজন পরিবারের জন্য সরকার ৩০ শতাংশ জমি ক্রয় করে। সেখানে জমিসহ পাকা ঘর তৈরি করে স্থানান্তর করা হচ্ছে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।

এ ছাড়া একই আশ্রয়ণে চাল-চুলোহীন আরও চারটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পরিবার পাচ্ছে জমিসহ পাকা ঘর।

স্থানীয়রা জানায়, হরিজন সম্প্রদায় দীর্ঘদিন থেকে ঝুপড়ি ঘরে বা অন্যের বসতবাড়িতে ও সরকারি খাস জমিতে বসবাস করতো। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরে পানি পড়তো। এছাড়াও হরিজনদের কাছে কেউ বাড়িভাড়া দেয় না।

টেঙ্গরপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ১৫টি পরিবারের জন্য বসতঘর তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। কয়েকটি ঘরে চলছে রঙের কাজ। স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল হক চাঁন জমিতে মাটি ফেলে চারদিক বাঁধাই করে দিয়েছেন। ইতোমধ্যে গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। বিদ্যুৎ লাইনের কাজ চলমান।

কথা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপকারভোগী বাসিন্দা গৃহবধূ চন্দনার সঙ্গে। তার স্বামী জলধন রাজভর বাজারের কুলি। তিনি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ৩৪ বছর আগে নতুন বউ হইয়া স্বামীর একটি ছোট্ট ভাঙ্গা ঘরে উঠি। এখনও সেখানেই থাকি।

চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, প্রকল্পে ঘর তৈরির যাবতীয় কাজ শেষ হয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ এবং পানির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চলতি জুলাই মাসের শেষে অথবা আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ওই ঘরগুলো উদ্বোধন ঘোষণা করবেন।

তিনি আরও বলেন, আমার এলাকায় এবার যারা প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়েছেন তারা প্রত্যেকেই ঘুরে ঘুরে খাচায় করে চুড়ি, ফিতা, লজেন্স, বাদাম, মালা ও চিরুনী বিক্রিয়কারি শানদার বা সৌদাগর সম্প্রদায়ের অসহায় গরীব মানুষ। আকবর আলী বলেন, চরপক্ষিমারী নদী ভাঙন এলাকা। এজন্য এখানে ভূমিহীনের সংখ্যা বেশি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষদের ঘর দিয়েছেন এজন্য তাকে ইউনিয়নবাসীর পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ।

পরবর্তীতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ‘খ’ শ্রেণির গৃহহীনরা যাদের জমি আছে ঘর নাই তারাও প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাবেন।

জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার বলেন, পাকা সড়কের পাশেই শ্রীবরদীর আশ্রয়ণ প্রকল্প। এখানে থেকে পরিবারগুলো ভায়াডাঙ্গা বাজারে গিয়ে সহজেই কাজকর্ম করে রুটি-রুজির ব্যবস্থা করতে পারবে।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে একজন মানুষও ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকবে না। এরই অংশ হিসেবে শেরপুর প্রথম জমি কিনে শ্রীবরদীর ১৫টি পরিবারকে পুর্নবাসন করা হচ্ছে। আমাদের প্রত্যাশা আশ্রয়ণে বসবাসের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের পাশাপাশি আর্থ সামাজিক অবস্থারও উন্নয়ন ঘটবে।

তিনি আরও বলেন, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক জেলাকে ভূমিহীনমুক্ত করার সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জেলায় মোট ১ হাজার ১১৮ জন ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার ঘর পাবেন। এর মধ্যে সিংহভাগ ঘর ইতোমধ্যে ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়