ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সফল উদ্যোক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কানিজ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১২, ৯ ডিসেম্বর ২০২০  

কানিজ চট্টগ্রামের মেয়ে। পড়াশোনাও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষে

কানিজ চট্টগ্রামের মেয়ে। পড়াশোনাও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষে

শুঁটকির কথা বলতেই কেউ কেউ আড়চোখে তাকায়। যারা পছন্দ করে না তারা নাক ছিটকে বলে- উঁহ, গন্ধ! অন্যদিকে খাবারে পছন্দের তালিকায় যাদের থাকে শুঁটকি, তাদেরতো কথায় নেই। শুঁটকির বিভিন্ন পদের রেসিপি তারা বলতে থাকেন।

তবে শুঁটকি নিয়ে ভিন্ন গল্প শোনালেন কানিজ-আল-হাক্ব। চাকরি নিয়ে ভাবনা তার মাথা থেকে তাড়িয়ে দিলো এই শুঁটকি। হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। এখন একটি পরিচয় পেয়েছেন, সবাই বলেন ‘চাটগাঁইয়া শুঁটকি আপা’। চট্টগ্রামের মেয়ে এই কানিজ পড়ছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষে। 

ছোট থেকেই শুঁটকি খাওয়ার বেশ তোড়জোড় দেখে আসছেন তিনি। তবে শুঁটকি নিয়ে কটাক্ষ কিংবা কানাঘুষায় তার ভাবনায় নতুন চিন্তার উদ্রেক হয়। ‘ওরা শুঁটকি খায়- গন্ধ!’ এসব বাক্য যেনো প্রতিধ্বনিত হতো চারপাশে। কেবল একটা খাবারের কারণে কাউকে কেন হেয় করা হবে? এমনটা মেনে নিতে নারাজ কানিজ। 

এই সমস্যাকে গোড়া থেকে নির্মুল না করলেই  নয়। অনুসন্ধানের পর জানলেন এই বিকট গন্ধটা তৈরি হয় শুঁটকিগুলো সঠিক উপায়ে তৈরি এবং সংরক্ষণ করা হয় না বলে। এছাড়াও আছে যথেচ্ছ  রাসায়নিকের ব্যবহার। উন্নত প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি ব্যবহার করে ‘অর্গানিক শুঁটকি’ উৎপাদন করলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব। সেখান থেকেই ‘মি. শুঁটকি’র পথচলা। 

কিভাবে প্রস্তুত হয় ‘মি. শুঁটকি’? কানিজ জানালেন, আমার প্রোডাক্ট ‘অর্গানিক শুঁটকি’। অনেকের কাছে নতুন ঠেকলেও এটা নিয়ে দেশীয়ভাবে প্রথম কাজ শুরু করেছিলেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েরই রসায়নবিদ্যা বিভাগের মুকুল ভাই।    প্রথমেই বাছাইকৃত সামুদ্রিক তাজা মাছ সংগ্রহ করা হয়। এরপর মাছগুলোকে সাইজ অনুযায়ী এমনভাবে কাটা হয়, যেন প্রতিটা অংশ খুব ভালোভাবে শুকাতে পারে। সমানভাবে  সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে এবং খুব ভালোভাবে ময়লা পরিষ্কার করা যায়।

এরপর উন্নতমানের ড্রায়ারে গ্রিনহাউস প্রক্রিয়ায় শুকিয়ে এই অর্গানিক শুঁটকি তৈরি করা হয় কোনরকম হাতের ছোঁয়া ছাড়াই। বেশি বিক্রিত প্রোডাক্টের মধ্যে আছে লইট্টা, ছুরি, নানা প্রজাতির চিংড়ি, ইলিশ, চ্যাপা, বাঁশপাতা, সুন্দরী, রূপচাঁদা, মলা, লাক্ষা, সুরমা।

উদ্যোক্তা হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কানিজ বলেন, প্রথমেই বলতে হয় বেকারত্বের কথা। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে অন্যদিকে করোনার হানা। সারাবিশ্বের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান খাতকে এলোমেলো করে দিয়েছে। তাই বসে না থেকে আমি উদ্যোক্তা হওয়ার প্রচেষ্টাকেই শ্রেয় মনে করেছি। 

তিনি আরো জানান, শুরু করেছি শূন্য থেকে। পুঁজি বলতে ছিলো ৫ হাজার টাকা তাও আরেকজন থেকে ধার করা। পরিবার প্রথমদিকে আমাকে সাপোর্ট করেননি। তবে এখন সবাই অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।  

‘অর্গানিক শুঁটকি’ সম্পর্কে মানুষের ধারণা না খুব একটা নেই বলা চলে। যে কারণে প্রথমদিকে  সাড়া কম পেলেও তার ব্যাপক  প্রচারণা সেই ঘাটতি দ্রুত কাটিয়ে উঠেছেন। 

কানিজ বলেন, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত রয়েছি, সেখানকার প্রচারণা বেশ কাজে এসেছে। বর্তমানে আমার একটা পরিচিতি আছে। অনেকেই ‘মি. শুঁটকি’ কে একনামে চেনেন। অল্প সময়ে এই অর্জনই বা কম কিসে। মাসে ২৫-৩০ টার মতো অর্ডার থাকছে। দেশের বাইরে থেকেও  অনেকে অর্ডার করছেন। ভাবতে ভালো লাগে আমাদের দেশীয় একটা ভোগ্যপণ্য বিদেশের মাটিতেও সমাদৃত হচ্ছে। 

প্রতিষ্ঠান নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানালেন কানিজ, মি. শুঁটকি নিয়ে লক্ষ্য অনেক দূর। স্বল্প পরিসরে কাজ শুরু  করলেও আর কয়েক মাসের মধ্যে বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করবো। এতে বৈদেশিক মুদ্রা  অর্জনের পাশাপাশি অনেক কর্মসংস্থানও তৈরি হবে। 

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়