ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

হেফাজত নেতাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের অগ্রগতি কতদূর?

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪১, ১৩ জুন ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাদের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অন্তত ৫০ হেফাজত নেতার দুর্নীতি অনুসন্ধানে গঠিত হয়েছে ছয় সদস্যের বিশেষ টিম। নির্বাচন কমিশন, পাসপোর্ট, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ ১১টি দফতরের কাছ থেকে চাওয়া হয়েছে তথ্য। তবে এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য না পাওয়ায় হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে তদন্তে অগ্রগতি দেখাতে পারছে না দুদক।

এদিকে জানা গেছে, মামুনুল হকসহ হেফাজতের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে নানা অপরাধের তদন্ত এরই মধ্যে শেষ করে ফেলেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আর দুই দফায় বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) প্রায় শতাধিক হেফাজত নেতার ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে।

গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় সহিংসতা চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। পরে হেফাজতের ডাকা হরতালে চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক সহিংসতা হয়। অগ্নিসংযোগ করা হয় থানা, রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায়। কয়েকদিনের সহিংসতায় ১৭ জন মারা যান, পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ আহত হন।

এ ঘটনায় হেফাজতের একাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আন্দোলনে কোনো সন্ত্রাসী অর্থায়ন হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখতে গত ৫ এপ্রিল হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী, সাবেক মহাসচিব প্রয়াত নূর হুসাইন কাসেমী এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজত নেতা মামুনুল হকসহ ২৪ নেতার ব্যাংক হিসাব তলব করে বিএফআইইউ।

সংগঠনটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে হেফাজতের তহবিল, মাদরাসা, এতিমখানা ও ইসলামী প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা এবং ধর্মীয় কাজে আগত বৈদেশিক সহায়তা আত্মসাতের অভিযোগও মেলে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের গোয়েন্দাদের যাচাই-বাছাইয়ে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় কমিশন থেকে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৭ মে দুদক পরিচালক মো. আকতার হোসেন আজাদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি টিম গঠিত হয়। দলটি প্রাথমিকভাবে হেফাজতের অর্ধশতাধিক নেতার সম্পদের তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠায় । তবে এ বিষয়ে এখনই মুখ খুলতে নারাজ তারা।

যদিও বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের চাপ হিসেবে দেখছে হেফাজত। সেজন্য সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বলছেন, ‘সুষ্ঠু তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।’

এ বিষয়ে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদীর ছেলে সংগঠনটির নেতা মোরশেদ বিন নূর জিহাদী বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্ত করলে নেতাদের বিরুদ্ধে কিছুই পাওয়া যাবে না। তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে নেতাদের সম্পদের পাহাড় আছে কি-না।’

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ঢাকায় নরেন্দ্র মোদির আগমনের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হেফাজতের তাণ্ডব

এদিকে হেফাজতে ইসলামের অর্থের জোগানদাতা হিসেবে ৩১৩ জনকে চিহ্নিত করেছে ডিবি। সংগঠনের নেতা মামুনুল হকের ব্যাংক হিসাবে ছয় কোটি টাকার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলেও দাবি করেছে ডিবি।

দুদকের কর্মকর্তারা বলছেন, এসব তথ্য-উপাত্তও কমিশন আমলে নিয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার তথ্যের অপেক্ষায় থাকায় দুদকের তদন্ত খুব বেশি এগোয়নি।

এ বিষয়ে দুদক সচিব ড. মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘দুদক মোট ৫০ জন হেফাজত নেতার তথ্য চেয়েছে বিভিন্ন সংস্থার কাছে। এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য আসেনি। হেফাজত নেতাদের নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত শেষ করেছে। তারা যদি আমাদের দেয় তাহলে সেটা আমরা আমলে নেব।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে তথ্য চেয়েছি। সম্ভবত তারা ওই রেফারেন্সে ব্যাংকের কাছে তথ্য চাওয়ার জন্য চিঠিপত্র দিয়েছে। হেফাজত নেতাদের জমিজমার হিসাব চাওয়া হয়েছে। এজন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিদেশযাত্রার তথ্য জানতে পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশনেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।’

দুদক সচিব আরও বলেন, ‘তথ্য না পাওয়ায় হেফাজত নেতাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা যাচ্ছে না। একেবারে কিছু কাগজপত্র না পেয়ে তো জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় না। তারপরও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে এখতিয়ার দেয়া আছে। তারা যদি জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন মনে করেন তাহলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন।’

এদিকে সংগঠনের প্রয়াত আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর অনুসারী হেফাজত নেতারা বলছেন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদরাসা এবং হেফাজতে ইসলামের কার্যক্রম চালাতে বিভিন্ন জায়গা থেকেই আসতো নগদ টাকা। মাদরাসার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বাইরে এর একটি বড় অংশই জমা থাকতো মাদরাসার আলমারিতে।

গত বছরের সেপ্টম্বরে বিভিন্ন দাবিতে মাদরাসাটিতে বিক্ষোভ করেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। এসময় মাদরাসাটির বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। আহমদ শফীপন্থী হেফাজত নেতারা বলছেন, সেই ভাঙচুরের পর থেকে মাদরাসা এবং সংগঠনের বিপুল অর্থের হদিস মিলছে না। আর এ কারণেই দুদকের তদন্তে সহযোগিতা করতে চান তারা।

এ বিষয়ে প্রয়াত হেফাজত নেতা শাহ আহমদ শফীপন্থী হিসেবে পরিচিত সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব মাইনুদ্দিন রুহি বলেন, ‘দুদক যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে পারে। এই তদন্তকে আমরা স্বাগত জানাই। তদন্তের স্বার্থে দুদককে আমরা সব ধরনের সাহায্য করতে প্রস্তুত আছি।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়