ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানানোর সেরা আমল

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৪ মার্চ ২০২১  

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

যে কোনো খুশির সংবাদে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা মুসলমানের সুন্নাত। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন কোনো খুশির সংবাদ শুনতেন তখন তিনি কী আমল করতেন? খুশির খবর পেলে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনের সেরা আমলই বা কোনটি?

খুশির সংবাদে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা সুন্নাত। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) আনন্দের কোনো সংবাদ পেলে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনে সর্বোত্তম একটি আমল করতেন; তাহলো- সিজদায় লুটিয়ে পড়া।

রাসূলুল্লাহ (সা.) জানতে পারেন যে, তাঁর প্রতি দরূদ পড়ার সাওয়াব নেক ও মর্যাদা অনেক বেশি। তাই তিনি উম্মতের জন্য খুবই খুশি হয়ে যান। এ খুশির সংবাদে তিনি আল্লাহর দরবারে শুকরিয়াস্বরূপ সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। আনন্দের সংবাদে সিজদার বিষয়টি হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ওঠে এসেছে-

- হজরত আবু বাকরাহ (রা.) বর্ণনা করেন নবি (সা.) এর কাছে কোনো খুশির খবর আসলে অথবা তিনি কোনো সুসংবাদ পেলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়াস্বরুপ সিজদায় পড়ে যেতেন।' (আবু দাউদ)

- হজরত আবু বাকরাহ (রা.) থেকে অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এমন একটি সুখবর আসে যে, তিনি তাতে খুবই আনন্দিত হন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।' (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)

- হজরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) বর্ণনা করেন, একদিন আল্লাহর রাসূল (সা.) (বাইরে) বের হয়ে একটি খেজুর বাগানে প্রবেশ করেন এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। তিনি এত লম্বা সময় ধরে সিজদায় থাকলেন যে, আমি আশঙ্কা করলাম, হয়তো বা আল্লাহ তাঁর প্রাণ হরণ করে নিয়েছেন। আমি তাকে দেখতে কাছে উপস্থিত হলাম। তিনি মাথা তুলে বললেন- হে আব্দুর রহমান! কি ব্যাপার তোমার?

আমি ঘটনা খুলে বললে তিনি বললেন, ‘জিবরিল আলাইহিস সালাম আমাকে বললেন, ‘আমি কি আপনাকে সুসংবাদ দেব না?আল্লাহ তাআলঅ আপনাকে বলেন, ‘যে ব্যক্তি আপনার প্রতি দরূদ পড়বে, আমি তাঁর প্রতি রহমত বর্ষণ করব। আর যে ব্যক্তি আপনার প্রতি সালাম জানাবে, আমি তাকে শান্তি দান করব।’

আমি আনন্দের এই খবর শুনে আল্লাহ তাআলার কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপনের উদ্দেশ্যে সিজদাহ করলাম।’ (মুসনাদে আহমাদ, মুসতাদরেকে হাকেম)

প্রিয়নবী রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন মর্মে খবর শোনার পরও তিনি অত্যাধিক খুশি হয়ে যান। সে খুশির সংবাদে তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করনে এভাবে-

- হজরত আমির ইবনু সাদ (রাহ.) তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সঙ্গে মক্কা থেকে মাদিনার দিকে রওয়ানা হলাম। অতঃপর আমরা ‘আযওয়ারা’ নামক স্থানের কাছে পৌঁছালে তিনি বাহন থেকে নেমে আল্লাহর কাছে হাত তুলে কিছুক্ষণ দোয়া করে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন এবং অনেকক্ষণ সিজদায় কাটান।

অতঃপর সিজদাহ থেকে উঠে পুনরায় মহান আল্লাহর কাছে হাত তুলে কিছুক্ষণ দোয়া করেন আবার সিজদাহ করেন এবং অনেকক্ষণ সিজদায় থাকলেন। আবার উঠে দুই হাত তুলে দোয়া করলেন এবং সিজদায় করলেন। (বর্ণনাকারী আহমাদ বলেন) রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনবার এরূপ করলেন।

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘আমি আমার রবের কাছে আবেদন করেছি এবং আমার উম্মাতের জন্য সুপারিশ করেছি। আমাকে এক-তৃতীয়াংশ উম্মাতের জন্য শাফাআতের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

তাই কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমি সিজদায় লুটিয়ে পড়েছি। আবার মাথা তুলে আমার রব্বের কাছে উম্মাতের জন্য আবেদন করেছি। তিনি আমাকে আমার উম্মতের আরও এক-তৃতীয়াংশের জন্য শাফআত করার অনুমতি দিলেন। আমি পুনরায় সিজদায় অবনত হয় প্রভুকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আমি পুনরায় মাথা তুলে আমার মহান রব্বের কাছে উম্মতের জন্য দোয়া করি। তিনি আমাকে আরও এক-তৃতীয়াংশ উম্মতের জন্য শাফাআত করার অনুমতি দেন। আর আমি আমার প্রভুকে সিজদাহ করে শুকরিয়া জানাই।’ (হজরত আবু দাউদ (রাহ.) বলেন, এ হাদিস বর্ণনার সময় আহমাদ ইবনু সালিহ আমাদের কাছে আশআস ইবনু ইসহাক্বের নাম উল্লেখ না করেই মূসা ইবনু সাহল থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেন।)’ (আবু দাউদ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ার জীবনে যে কোনো বৈধ ভালো কিংবা খুশির সংবাদে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপনে সিজদায় লুটিয়ে পড়া একান্ত আবশ্যক। কেননা সিজদাহ হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সেরা আমল ও উপায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই খুশির সংবাদে আল্লাহর কাছে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। উম্মতে মুসলিমার জন্য এটি অন্যতম শিক্ষা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যে কোনো বৈধ খুশির সংবাদে আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ে সিজদায় লুটিয়ে পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়