গ্যাসের প্রধান নির্ভরতা হবে এলএনজি
নিউজ ডেস্ক
গ্যাসের প্রধান নির্ভরতা হবে এলএনজি
দেশে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এবং দেশীয় উৎস থেকে জোগান কমে যাওয়ায় চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি সর্বাত্মক বাড়াতে চেষ্টা করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন, পেট্রোবাংলার চেষ্টা সত্ত্বেও প্রয়োজনের তুলনায় কাঙ্ক্ষিত গ্যাসের জোগান এখনই হবে না। ফলে আমদানি করে মেটাতে হবে বাড়তি চাহিদা।
পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, ২০৪০-৪১ সাল নাগাদ দেশে ৭ হাজার ৭৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা তৈরি হবে। অথচ সেই সময় দেশীয় উৎপাদন কমে হবে মাত্র এক হাজার ৬৯৪ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদা ও জোগানের এই বিশাল পার্থক্য পূরণ হবে আমদানির এলএনজিতে। জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ভবিষ্যৎ আমদানি নির্ভরতার কথা বিবেচনায় সরকার এলএনজি আমদানির জন্য টার্মিনাল নির্মাণ এবং একের পর এক এলএনজি রপ্তানিকারক দেশের সঙ্গে চুক্তি করছে।
ইতোমধ্যে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। আরও অন্তত তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট আমদানির অবকাঠামো তৈরিতে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার।
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১-২০২২ অর্থবছর থেকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ বেড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। বাস্তবতা হলো এ সময়ে দেশীয় উৎপাদন কমবে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ভবিষ্যতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের জোগান নিশ্চিত করতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। ভবিষ্যতে এলএনজি আমদানি ও সরবরাহ বাড়াতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
সরকারের পরিকল্পনায় দেখা যায়, বিদ্যমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের বাইরে আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়নে কাজ চলছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে আমদানির সক্ষমতা তৈরি করা ভালো। তবে এলএনজি আমদানি নির্ভর করে আর্থিক সক্ষমতার ওপর। সেই সক্ষমতা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো তৈরি হয়নি। এখন ১০০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও অর্থ সংকটে সেটা আমদানি ও সরবরাহ করতে পারছে না সরকার। তারা বলছেন, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরির পাশাপাশি নিজেদের উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধানে বেশি কাজ করতে হবে।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৯ আগস্ট থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। এক্সিলারেট এনার্জি দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহের একটি ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করে। পরের বছর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল দেশীয় কোম্পানি সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি লিমিটেড আরও ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার একটি এফএসআরইউ ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে। অর্থাৎ দেশে এখন দৈনিক সরবরাহ সক্ষমতা ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল রয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানিকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে আরও ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে পটুয়াখালীর পায়রা এলাকায় এক্সিলারেট এনার্জি কর্তৃক প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার আরেকটি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ। এ দুই টার্মিনাল নির্মাণ শেষ হলে দেশে মোট দুই হাজার এমএমসিএফডি ক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল তৈরি হবে।
এছাড়াও এক্সিলারেট এনার্জি তাদের বিদ্যমান টার্মিনালের সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী। জ্বালানি বিভাগে ইতোমধ্যে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে তারা। একই সঙ্গে কক্সবাজারের জেলার মাতারবাড়ি এলাকায় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল’ নির্মাণ করতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে জ্বালানি বিভাগ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০২৪ সাল থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে। এছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে ক্রসবর্ডার পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে আরএলএনজি আমদানির লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। ইতোমধ্যে আইওসিএল এবং এইচ-এনার্জির সঙ্গে পেট্রোবাংলা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এখন গ্যাস সাপ্লাই এগ্রিমেন্ট চূড়ান্তকরণে কাজ চলছে। ফলে সামগ্রিক বিবেচনায় বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানির মহাপরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
তবে আমদানি নির্ভরতার ক্ষেত্রে দেশের আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম। তিনি বলেন, অর্থ সংকটের কারণে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এখনই পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করতে পারছে না সরকার। ফলে কেবল আমদানি পরিকল্পনা না করে নিজেদের উৎস থেকে গ্যাসের অনুসন্ধানে জোর দেওয়া দরকার। তিনি বলেন, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধানে জোর না দিয়ে কেবল বিদেশ থেকে আমদানি পরিকল্পনা ভবিষ্যতে জ্বালানি নিরাপত্তায় বিপদ ডেকে আনতে পারে; যদি না বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে না পারে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কাতারের রাস লাফফান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও ওমানের ওকিউ ট্রেডিংয়ের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি কিনছে সরকার। এছাড়া কাতার এনার্জি ট্রেডিং থেকে ১৫ বছর মেয়াদে প্রতি বছর ২৪ কার্গো এলএনজি ১.৫ থেকে ১.৮ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত বছরের জুনে চুক্তি সই করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০২৬ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হবে। এছাড়াও ১০ বছর মেয়াদে ০.২৫ থেকে ১.৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে আরেকটি চুক্তি করা হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে এই এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে।
- PM opens Southeast Asia`s largest fertiliser factory in Narsingdi
- Tk 12,500 announced as minimum wage for RMG workers
- PM vows to make leprosy free Bangladesh by 2030
- Bangladesh joins `50-in-5` campaign as first-mover country to implement DPI
- রাজধানীতে আজ চালু হলো ১০টি ইউটার্ন
- কৃষিপণ্য কেনাবেচার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘ফুড ফর ন্যাশন’ উদ্বোধন করে
- বঙ্গবন্ধুর সাথে ছোট বেলার স্মরণীয় মধুর স্মৃতি
- আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাঃ রাষ্ট্র বনাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
- ২৫তম পর্ব: কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই
- প্রতিমন্ত্রী জানালেন বাড়তি বিদ্যুত বিল এলে যা করবেন