ঢাকা, রোববার   ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

ঢাকা-গাজীপুর দ্রুত সড়ক যোগাযোগের বিআরটি প্রকল্প শেষের পথে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৩৫, ২৪ মার্চ ২০২৪  

ঢাকা-গাজীপুর দ্রুত সড়ক যোগাযোগের বিআরটি প্রকল্প শেষের পথে

ঢাকা-গাজীপুর দ্রুত সড়ক যোগাযোগের বিআরটি প্রকল্প শেষের পথে

যানজট কাটিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে গাজীপুরের দ্রুত সড়ক  যোগাযোগ স্থাপনে এগিয়ে চলছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ। একাধিক ফ্লাইওভার ও উড়াল সড়কসহ প্রায় সাড়ে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বিআরটি প্রকল্পের কাজ এখন সমাপ্তির দিকে। ইতোমধ্যেই প্রকল্পের ফ্লাইওভার ও সড়কে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ায় যানজট ও ভোগান্তি কমেছে। এতে মানুষ ইতোমধ্যেই সুফল পেতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যানজট নিরসনে এ প্রকল্পটি জনগণের আশা জাগিয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু ঢাকা-গাজীপুর  জেলার যাত্রীরাই উপকৃত হবেন না, এর সঙ্গে বৃহত্তর ময়মনসিংহ-টাঙ্গাইলসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের পথ সুগম হবে। এখন মহাখালী  থেকে গাজীপুর  চৌরাস্তা যেতে কখনো তিন ঘণ্টার বেশি লাগে। বিআরটি সড়ক ব্যবহার করে সর্বোচ্চ আধা ঘণ্টায় এইটুকু সড়ক অতিক্রম করা সম্ভব হবে। 
ইতোমধ্যে মানুষের ভোগান্তি দূর করতে ও যানজট এড়াতে গাজীপুর মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তায় নির্মিত একটি ফ্লাইওভারের দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে ময়মনসিংহ ও জয়দেবপুরগামী যানবাহন চলাচল অনেকটা নির্বিঘ্ন হয়েছে। ফ্লাইওভারের লেন ব্যবহার করে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ ও জয়দেবপুরগামী সবধরনের যানবাহন ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তার দীর্ঘ যানজট এড়িয়ে চলাচল করতে পারছে।

একইসঙ্গে জয়দেবপুর থেকে ঢাকার দিকেও চলাচলের ক্ষেত্রে ওই ফ্লাইওভারের অপর লেন ব্যবহার করছে। ফ্লাইওভারের ওই লেন খুলে দেওয়ায় যানবাহনগুলোকে এখন নাওজোর হয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের জয়দেবপুর রোডে চলাচল করতে হচ্ছে না।  ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পথ পাড়ি দিতে দেড়-দুই ঘণ্টাব্যাপী যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে না।

এখন তারা মাত্র ১০ মিনিটেই ওই পথ পাড়ি দিচ্ছে। এতে মানুষ বিআরটি প্রকল্পের সুফল পেতে শুরু করেছে। গত ৫ মার্চ ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী লেন ও গাজীপুর শহরের শিববাড়ী বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ঢাকামুখী ওই লেন দুটি অনানুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। এর আগে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া এলাকায় ঢাকা বাইপাস সড়কের ওপর নির্মিত ফ্লাইওভারের দুটি লেন যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।  
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক যুগ আগে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। নানা কারণে কাজের গতি কিছুটা মন্থর হলেও প্রকল্প  থেমে  নেই। গত ৫ মার্চ বিআরটি প্রকল্পের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় নির্মিত ফ্লাইওভারের ময়মনসিংহমুখী একটি লেন খুলে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহগামী সব যানবাহন এই লেন ব্যবহার করে ভোগড়া ও চান্দনা চৌরাস্তার দীর্ঘ যানজট এড়িয়ে চলাচল করতে পারবে।

একইসঙ্গে ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ঢাকা থেকে জয়দেবপুরগামী যানবাহন চান্দনা চৌরাস্তার যানজট এড়িয়ে জয়দেবপুরের দিকে যেতে পারবে। তা ছাড়া জয়দেবপুর থেকে ঢাকার দিকেও চলাচলের ক্ষেত্রে এই ফ্লাইওভারের লেন ব্যবহার করা যাবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) মো. আলমগীর হোসেন জানান, ‘ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভারের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহমুখী একটি লেন গত ৫ মার্চ খুলে দেওয়া হয়েছে যোগাযোগমন্ত্রী মহোদয়ের মৌখিক নির্দেশে।
তিনি আরও বলেন, এই ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ চলার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ভোগড়া থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহমুখী লেনটি যান চলাচলের জন্য বন্ধ ছিল। এ কারণে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সব যানবাহনকে নাওজোর হয়ে কয়েক কিলোমিটার ঘুরে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের জয়দেবপুর রোডে চলাচল করতে হতো। এই দুর্ভোগ লাঘবের জন্য ফ্লাইওভারের একটি লেন খুলে দেওয়া হলো।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকল্পের প্রাথমিক সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করে। ২০১২ সালের ১ ডিসেম্বর একনেক বিআরটি প্রকল্প অনুমোদন  দেওয়া হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ৩৯  কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। কাজ  শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে। এর পর কয়েক দফা সময় বাড়ানো হয়। প্রকল্পের ব্যয়ও কয়েক দফায় বাড়িয়ে প্রায় চারগুণ করা হয়।

চীনের তিনটি এবং বাংলাদেশের একটি  কোম্পানি এই প্রকল্পের ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছে। এর মধ্যে উড়াল সড়ক ও নিচের সড়ক নির্মাণের কাজ  পেয়েছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি), জিয়াংশু প্রভিনশিয়াল ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ এবং ওয়েহেই ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড  টেকনিক্যাল  কো-অপারেটিভ। আর গাজীপুরে বিআরটির ডিপো নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে  দেশীয়  কোম্পানি  সেল-ইউডিসি।
বিআরটি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, বিআরটি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের মাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় ২৫ হাজার মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজট অনেকটাই কমে যাবে। যাতায়াতে সময় কম লাগার কারণে প্রতিটি বাস আগের তুলনায়  বেশিবার যাতায়াত করতে পারবে। এর মাধ্যমে পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের পথ সুগম হবে।

যাত্রীরা দ্রুত কর্মস্থলে পৌঁছার ফলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাবে, যা অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। পাশাপাশি যাত্রীরা অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবেন এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। এ ছাড়া ১০০টি আর্টিকুলেটেড বাসের টিকিট বিক্রির মাধ্যমে অর্জিত টাকা সরকারের রাজস্ব খাতকে শক্তিশালী করবে। বিআরটি প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বাস মালিক, ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও পথচারীরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে  যে শুল্ক প্রদান করবে তার ফলে সরকারের অর্থনৈতিক পরিধি ব্যাপক বৃদ্ধি পাবে। তা ছাড়া জাতীয় অর্থনীতি ও জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমবে।  সেইসঙ্গে যাত্রীদের চলাচলের পথ আরও সুগম হবে এদিকে নগরবিদরা বলছেন, যানজট নিরসন করতে হলে এ ধরনের একটি প্রকল্পই যথেষ্ট নয়। প্রকল্পটি ঢাকার আশপাশের  জেলা-উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরামর্শ নগর বিশেষজ্ঞদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও বিশিষ্ট নগর পরিকল্পনাবিদ ড. নুরুল ইসলাম নাজেম বলেন, গাজীপুর  থেকে  কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে রাজধানীর যানজট সমস্যার সমাধান হবে না।

যানজট নিরসনে বিআরটি প্রকল্পটি আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। গাজীপুর  থেকে নারায়ণগঞ্জ, সাভার, বুড়িগঙ্গা  পেরিয়ে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত এই রুট সম্প্রসারণ করা  গেলে সুফল মিলবে। সম্ভব হলে এই প্রকল্পটি ময়মনসিংহ-নরসিংদীসহ আশপাশের  জেলাসমূহ পর্যন্ত  নেওয়া  যেতে পারে। তিনি বলেন, বর্তমান নক্সা অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সাময়িক কিছু সুবিধা বাড়বে। 
প্রকল্প সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রকল্পটি গ্রহণ করা হলেও চীনের কোম্পানিটি অর্থায়ন সংগ্রহ করে কাজ শুরু করতে পাঁচ বছর বিলম্ব করে ফেলায় প্রকৃতপক্ষে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৭ সালে। চার বছরে প্রকল্পটির নির্মাণ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও প্রকল্প শেষ করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের ব্যয় কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের কাজের কারণে বিমানবন্দর, উত্তরা, টঙ্গী ও গাজীপুরে যাতায়াতকারী জনগণকে অবর্ণনীয় ভোগান্তি সইতে হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, আপাতত শিববাড়ী না হলেও ভোগড়া থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এই পথে ২৫টি স্টেশনের মধ্যে প্রথম দফায় ১১টি চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১১টি স্টেশনে ৫০টি বাস দিয়ে চালু হবে এই প্রকল্প। আর এই বাস আসবে চাইনিজ কোম্পানি হাইগার থেকে। পরবর্তী ধাপে আরও ৫০টি বাস যুক্ত হবে। সময় আর সক্ষমতা অনুযায়ী বাস যুক্ত হতে থাকবে।’

সর্বশেষ
জনপ্রিয়