ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বাংলাদেশ-শ্রীলংকা সিরিজ: টাইগারদের প্রথম সিরিজ জয়

স্পোর্টস ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ২৬ মে ২০২১  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জিতে কাজ আগেই অর্ধেক সেরে রেখেছিল বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডে ১০৩ রানে জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই প্রথমবারের মত শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজ জিতলো বাংলাদেশ।

আজকের জয়ে বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষেও উঠলো বাংলাদেশ। ৮ ম্যাচে ৫ জয় ও ৩ হারে ৫০ পয়েন্ট বাংলাদেশের। সমান ৪০ করে পয়েন্ট ইংল্যান্ডে-পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার। ইংল্যান্ডে ৯ ম্যাচে, পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ৬ ম্যাচে অংশ নিয়েছে।

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৪৮.১ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৪৬ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ।  ২৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র দেয়া ২৪৭ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কখনোই ম্যাচে লড়াইয়ে ছিল না শ্রীলংকা। ৪০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪১ রানে থামে শ্রীলংকার ইনিংস। প্রথমবারের মত সিংহদের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।

এর আগে আটবার দ্বিপাক্ষিক সিরিজে মুখোমুখি হলেও কখনো জিততে পারেনি বাংলাদেশ। লংকানদের ডেরায় দুটি সিরিজ ড্র করলেও দেশের মাটিতে সেই স্মৃতিও নেই বাংলাদেশের। ফলে শ্রীলংকার বিপক্ষে দেশের মাটিতেও এটাই  টাইগারদের প্রথম সিরিজ জয়। 

বাংলাদেশের বেঁধে দেয়া রান তাড়া করতে নামেন কুশল পেরেরা ও দানুশকা গুনাথিলাকা। শুরু থেকে দেখেশুনে খেলতে থাকেন দুজন।

ইনিংসের ষষ্ঠ ও ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারে শরিফুলের বলে তামিমের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন পেরেরা। সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেন ১৪ রান।

এরপর পাথুম নিশাংকাকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে থাকেন গুনাথিলাকা। মুস্তাফিজের করা শর্ট বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে সাকিবের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ২৪ রান করা এ ওপেনার।

সাকিবের বলে তামিমের ক্যাচে পরিণত হয়ে ২০ রানে ফেরেন নিশাংকা। এরপরই ১৫ রান করা কুশল মেন্ডিসকে আউত করে মেহেদী মিরাজ। ১০ রান করা ধনঞ্জয় ডি সিলভাকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন সাকিব। এতে মাত্র ৮৯ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে শ্রীলংকা।

নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকা শ্রীলংকার হয়ে কেউই ক্রিজে বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। দাসুন শানাকা ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা দুজনকেই ফিরিয়েছেন মিরাজ। পরের দুটি উইকেট শিকার করেন মুস্তাফিজুর রহমান।

বৃষ্টি বাধায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ৩৮ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২৬ রান করেছে তারা। ম্যাচ জিততে হলে বাকি ১২ ওভারে তাদের করতে হবে আরো ১২১ রান। কিন্তু ম্যাচের সময় শেষ হয়ে যাওয়া ডার্ক লুইস ম্যাথডে(বৃষ্টি আইন) ২ ওভারে ১১৯ রান করতে হবে শ্রীলংকার। তবে নির্ধারিত ২ ওভারে ১৫ রান করতে সক্ষম হন ইসুরু উদানা(১৮*) ও দুশমান্থ চামেরা(৪*)। এতে ১৪১ রানে থামে শ্রীলংকার ইনিংস।

টাইগারদের হয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুস্তাফিজুর রহমান ৩টি করে এবং সাকিব ২ টি উইকেট নেন।

আগে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক তামিম ইকবাল। দলের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে তার সঙ্গে নামেন লিটন দাস। ব্যাট হাতে টাইগারদের শুরুটা ছিল দারুণ। ইসুরু উদানার করা ইনিংসের প্রথম ডেলিভারিতেই চার হাঁকান তামিম। সেটি ছিল নো বল।

ফ্রি হিট বলেও চার হাঁকান দেশসেরা ওপেনার। পরবর্তী ডেলিভারি ওয়াইড দিলে দলের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১০ রান। অথচ বল ছিল মাত্র একটিই। যা বলা যায় বেশ বিরল এক ঘটনা। পরের বলে তামিম আবারো চার হাঁকালে দুই বলে টাইগারদের স্কোরবোর্ডে রান ছিল ১৪! 

প্রথম ওভার বাজে হলেও পরের ওভারেই জোড়া আঘাত হানে শ্রীলংকা। চার বলের ব্যবধানে তামিম ও সাকিব দুজনকেই লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে সাজঘরে ফেরান দুশমন্থ চামিরা। আউট হওয়ার আগে তামিম ১৩ রান করলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব। 

দ্রুত দুই উইকেট হারানোর পর সাবধানে খেলতে থাকেন লিটন ও মুশফিক। শুরুটা একটু ধীর হলেও আস্তে আস্তে রানের গতি বাড়াতে থাকেন দুজন। বাংলাদেশ যখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার অপেক্ষায়, তখনই সান্দাকানের বলে হাসারাঙ্গার হাতে ক্যাচ তুলে দেন লিটন। সাজঘরে ফেরার আগে ৪২ বলে ২৫ রান করেন এ ওপেনার।

লিটন দাস আউট হলে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন সৈকত। তিন উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলের হাল ধরে ইনিংস এগিয়ে নেয়াই তার দায়িত্ব ছিল। তবে ১০ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। সান্দাকানের বলে সাজঘরে ফেরার আগে মোটে ১২ বল ক্রিজে টিকতে পেরেছিলেন এ অলরাউন্ডার।

এই অবস্থায় দলের হাল ধরেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এরই মধ্যে মুশফিক তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪১তম ফিফটি। মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের ব্যাটে বড় সংগ্রহ দেখছিল বাংলাদেশ। তবে এক ভুল শটে ভাঙে সে স্বপ্ন।  সান্দাকানের বলে স্কুপ করতে গিয়ে কুশল পেরেরার হাতে ক্যাচ তুলে দেন মাহমুদউল্লাহ। এর আগে ৪১ রান করেন তিনি। 

আউট হওয়ার আগে আফিফ হোসেন করেন ১০ রান। অন্যদিকে দ্বিতীয় বলে ব্যক্তিগত শূন্য রানে বোল্ড হয়ে সান্দাকানের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন মেহেদী হাসান মিরাজ। এরপর বেশ লম্বা সময় ধরে মুশফিককে সঙ্গে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। 

দুশমন্থ চামিরার করা ৪৫তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গ্লান্স করে চার মেরে সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান মুশফিক। এর আগে দুইবার মাঠে নেমেও বৃষ্টির কারণে তার সেঞ্চুরি নিয়ে শঙ্কা দেখা দেয়। প্রথমে এই ব্যাটসম্যান ৮৫ রানে অপরাজিত থাকার সময় বৃষ্টি হানা দেয়।

দ্বিতীয়বার মাঠে নেমে আবার খেলা বন্ধ হওয়ার আগে মুশফিকের স্কোর ছিল ৯৬ রান। তৃতীয়বার খেলা শুরু হলে সেঞ্চুরি তুলে নিতে দেরী করেননি এই ব্যাটসম্যান। ১১৪তম বলে অনন্য মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। শেষ উইকেট হিসেবে আউট হওয়ার আগে মিস্টার ডিপেন্ডেবল ১২৭ বলে ১২৫ রান করেন। 

শ্রীলংকার হয়ে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন চামিরা ও সান্দাকান। এছাড়া উদানা দুটি ও হাসারাঙ্গা একটি উইকেট নেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়