ঢাকা, বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

সূরা বায়্যিনাহতে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪  

সূরা বায়্যিনাহতে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

সূরা বায়্যিনাহতে যে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে

সূরা বায়্যিনাহ পবিত্র কোরআনের ৯৮ নম্বর সূরা। সূরাটি পবিত্র কোরআনের ত্রিমতম পারায় অবস্থিত। এর আয়াত সংখ্যা আট। এটি একটি মাদানি সূরা।

হাদিসে সূরা বায়্যিনাহ

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, আল্লাহ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমাকে ‘লাম ইয়াকুনিল্লাযিনা কাফারু’ (সূরা) পড়ে শোনাই। উবাই ইবনে কাব বললেন, আমার নাম নিয়ে আপনাকে বলেছে? রাসূল বললেন, হ্যাঁ। উবাই ইবনে কাব তখন (খুশিতে) কেঁদে ফেললেন। (বুখারি, হাদিস, ৩৮০৮, ৪৯৫৯, মুসলিম, হাদিস, ৭৯৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস, ৩/২৭৩)

আরেক বর্ণনায় মুসনাদে আহমদ, সুনানে আবি দাউদ, সুনানে নাসাঈ এবং সহিহ মুসলিমে রয়েছে যে, একবার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াহু তায়ালা আনহুর কিরআত শুনে হজরত উবাই রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াাসল্লামের কাছে তিনি যেমনভাবে এ সূরার কিরআত শুনেছিলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াহু তায়ালা আনহু তেমনভাবে পড়েননি। 

রাগতভাবে হজরত উবাই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াহু তায়ালা আনহুকে সাথে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গমন করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুজনের কিরআত শুনে বলেন, ‘দুজনের কিরআতই বিশুদ্ধ।’ উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি এ কথা শুনে এমন সন্দেহের মধ্যে পড়ে গেলাম যে, যেন অজ্ঞতার যুগের সন্দেহ আমার সামনে এসে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ অবস্থা দেখে আমার বুকে হাত রাখলেন। আমার বুক ঘামে ভিজে গেল। আমার উপর এমন ভয় চাপলো যে, যেন আমি রাব্বল আলামীন আল্লাহকে সামনে দেখতে পাচ্ছি। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘শোনো, হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম আমার সামনে এসেছিলেন। তিনি বললেন, ‘উম্মতকে একই কিরআতে কোরআন শিক্ষা দেয়ার জন্যে আল্লাহ্ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। আমি বললাম, আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং মাগফিরাত কামনা করছি। এরপর আমাকে দু’প্রকারের কিরআতের অনুমতি প্রদান করা হলো। কিন্তু আমি আরও বাড়ানোর আবেদন জানালাম। অবশেষে সাত প্রকারের কিরআত পাঠের অনুমতি দেওয়া হলো।’ 

এরপর এ সূরা নাজিল হলো এবং এতে বলা হয়েছে,

رَسُولٌ مِّنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفًا مُّطَهَّرَةً فِيهَا كُتُبٌ قَيِّمَةٌ

 

আল্লাহর পক্ষ হতে একজন রাসূল, যে পবিত্র গ্রন্থ পড়ে শোনাবে। যাতে সরল-সঠিক বিষয় লেখা থাকবে

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানসিক দৃঢ়তার শিক্ষা দান এবং সতর্ককরণের উদ্দেশ্যে হজরত উবাই ইবনে কাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে এ সূরাটি তিলাওয়াত করে শুনিয়ে দেন। 

সূরা বায়্যিনাহ

لَمۡ یَکُنِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ وَالۡمُشۡرِکِیۡنَ مُنۡفَکِّیۡنَ حَتّٰی تَاۡتِیَہُمُ الۡبَیِّنَۃُ ۙ ١ رَسُوۡلٌ مِّنَ اللّٰہِ یَتۡلُوۡا صُحُفًا مُّطَہَّرَۃً ۙ ٢ فِیۡہَا کُتُبٌ قَیِّمَۃٌ ؕ ٣ وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡہُمُ الۡبَیِّنَۃُ ؕ ٤ وَمَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۙ  حُنَفَآءَ وَیُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَیُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ ؕ ٥ اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ وَالۡمُشۡرِکِیۡنَ فِیۡ نَارِ جَہَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا ؕ  اُولٰٓئِکَ ہُمۡ شَرُّ الۡبَرِیَّۃِ ؕ ٦ اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ۙ  اُولٰٓئِکَ ہُمۡ خَیۡرُ الۡبَرِیَّۃِ ؕ ٧ جَزَآؤُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ  رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَرَضُوۡا عَنۡہُ ؕ  ذٰلِکَ لِمَنۡ خَشِیَ رَبَّہٗ ٪ 

সূরা বায়্যিনাহর অর্থ 

যারা কুফরী করেছে সেই কিতাবী ও মুশরিকগণ ততক্ষণ পর্যন্ত নিবৃত্ত হওয়ার ছিল না, যতক্ষণ না তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসে। অর্থাৎ আল্লাহর পক্ষ হতে একজন রাসূল, যে পবিত্র গ্রন্থ পড়ে শোনাবে। যাতে সরল-সঠিক বিষয় লেখা থাকবে। যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তারা পৃথক হয়ে গিয়েছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পরই।  তাদেরকে কেবল এই আদেশই করা হয়েছিল যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করবে, আনুগত্যকে একনিষ্ঠভাবে তাঁরই জন্য খালেস রেখে এবং নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে আর এটাই সরল সঠিক উম্মতের দীন। নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে সেই কিতাবী ও মুশরিকগণ জাহান্নামের আগুনে যাবে, যেখানে তারা সর্বদা থাকবে। তারাই সৃষ্টির অধম। আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারাই সৃষ্টির সেরা। তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের পুরস্কার হল স্থায়ীবাসের জান্নাত, যার নিচে নহর প্রবাহিত থাকবে। সেখানে তারা সর্বদা থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি খুশী থাকবেন এবং তারাও আল্লাহর প্রতি খুশী থাকবে। এসব তার জন্য, যে তার প্রতিপালককে ভয় করে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়