ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পাকিস্তান থেকে সব সূচকেই এগিয়ে বাংলাদেশ

২০৩০ সালের মধ্যে ‘অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র’ হবে বাংলাদেশ

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ২৮ মে ২০২১  

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

যে পাকিস্তানকে হারিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম সেই পাকিস্তান থেকে এখন প্রায় সব সূচকেই এগিয়ে বাংলাদেশ। রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ আর্থ-সামাজিক সবখাতেই বাংলাদেশের ধারে-কাছে নেই পাকিস্তান। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বাংলাদেশ পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে দুই বছর আগে, আর মাথাপিছু জিডিপিতে ছাড়িয়েছে তিন বছর আগে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি পাকিস্তানের চেয়ে বেশি শক্তিশালী, সেটি এখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কেবল তা–ই নয়, বাংলাদেশ ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে, সব দিক থেকে পিছিয়ে পড়ছে পাকিস্তান।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের এই অগ্রগতির পেছনে আছে প্রতিটি খাতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা। সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্ব। 

১৯৬০ সালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জিডিপির আকার ছিল ১৭ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার; আর ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের জিডিপি। সে সময়ও আমাদের উৎপাদন ও অর্থনীতি সমৃদ্ধই ছিলো।  

এক দশকের অর্থনৈতিক শোষণে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে ওঠে। জিডিপি উন্নীত হয় ২৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। আর ২৬ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে পেছনে পড়ে পূর্ব পাকিস্তান। বৈষম্য থেকেই বাঙালির মুক্তির আকাঙ্খা। 
 
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা পায় বাংলাদেশ। পাকিস্তানি হানাদারদের ভয়ানক থাবায় ক্ষতবিক্ষত অর্থনীতি তখন বাংলাদেশের। শূণ্য থেকে নতুন বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রা শুরু করেন জাতির পিতা।

স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তীর বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির সত্যিকারের বিজয় হয়েছে। সব সূচকেই পাকিস্তান থেকে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৪৫ বিলিয়ন ডলার। যেখানে পকিস্তানের মাত্র ২২ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। আর মার্কিন ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশে ৮৪ টাকা পাওয়া গেলেও পাকিস্তানের গুণতে হয় প্রায় ১৬০ রুপি।

সম্প্রতি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের পাকিস্তান প্রোগ্রামের সাবেক উপদেষ্টা আবিদ হাসান। পাকিস্তান ইকোনমিক এডভাইজরি কমিটি এবং ফেডারেল বোর্ড অব রেভিনিউ ট্যাক্স রিফর্ম গ্রুপের সাবেক সদস্যও তিনি।

পাকিস্তানের বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংকের এই সাবেক উপদেষ্টা বলেছেন, দেশটির অর্থনৈতিক খাতে এই হতাশাজনক অবস্থা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের সহায়তা চাইতে হতে পারে।

বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে বিস্ময়কর গল্প আর পাকিস্তান বিপর্যয়ের গল্পে পরিণত হয়েছে, মাত্র দুই দশকে বাংলাদেশ প্রধান অর্থনৈতিক সূচকগুলোতে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে। অতীতের মতো একই হারে জিডিপি বৃদ্ধি পেলে ২০৩০ সালে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক শক্তিকেন্দ্র হতে পারে বলে উল্লেখ করেছেন তার নিবন্ধে।

তিনি বলেন, ২০ বছর আগে এটা ভাবাই যেত না। আর গত ২০ বছরে বাংলাদেশের জিডিপি মাথাপিছু ৫০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক এই উপদেষ্টা মনে করেন, রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা, রাজনীতিতে অনির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা বর্জন এবং দেশের প্রতি তাদের নেতৃত্বের একক মনোযোগের ফলেই বাংলাদেশের পক্ষে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।

পাকিস্তান প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, পাকিস্তানের পূর্বের সরকারসহ বর্তমান নেতৃত্ব ‘ভিক্ষার ঝুলি’ নিয়ে বিশ্বে ঘুরছে। দেশটির নেতারা তাদের শত্রু , আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংককে দোষারোপ করে আসছে। 

দুর্নীতি এবং সন্ত্রাসবাদের অর্থনৈতিক প্রভাবে এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অদক্ষতা, দায়িত্বহীনতা, অপ্রত্যাশিত নীতি অনুসরণ এবং আধাআধি সংস্কারের ফলে এ পর্যায়ে এসে পৌছেছে পাকিস্তান।

আবিদ হাসান বলেছেন, আমরা এখন ঋণে ডুবে যাচ্ছি। দুর্বল প্রবৃদ্ধির অক্ষে আটকে আছি। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় গভীর সংস্কার কোনো সরকারই অনুসরণ করেনি। করছেও না। ফলে আমরা এভাবেই চলতে থাকবো।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়