ঢাকা, শুক্রবার   ১০ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৬ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলাগুলোতে বাড়ছে পর্যটকের ভিড়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ১৩ জুলাই ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চলমান আষাঢ়ে বৃষ্টির মধ্যেই কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিটামইন, অষ্টগ্রাম ও নিকলী হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা হাজারো পর্যটক। সৌন্দর্য বিনোদন আর প্রশান্তির এক অনন্য ঠিকানা হয়ে ওঠেছে হাওরের মনোরম এসব স্থান।

এদিকে পর্যটন সম্ভাবনার এ বিষয়টি মাথায় রেখেই পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরেজমিনে নিকলীর বেড়িবাঁধ এলাকায় পর্যটকের ভিড় করতে দেখা গেছে। তবে এবার এখনো পুরোপুরি পানি আসেনি তাই হাওরের প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন অনেকই। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই পর্যটকরা মাথায় পলিথিন ব্যাগ মুড়িয়ে, কেউবা গামছা দিয়ে মাথা ঢেকে, ছাতা মাথায় নিয়ে ভিজতে ভিজতে বেড়িবাঁধের রাস্তায় ও নৌকায় ঘুরাঘুরি করতে দেখা গেছে। কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নিকলী হাওর।

হাওরে বর্ষার পানি ক্রমেই বাড়তে থাকায় পর্যটক বরণে সাজ সাজ রব সেখানে। পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হওয়া কিশোরগঞ্জের হাওরের প্রধান আকর্ষণ ইটনা থেকে মিঠামইন হয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা পর্যন্ত হাওরের বিশাল জলরাশির বুক চিরে নির্মিত দীর্ঘ ৩৫ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়ক। নিকটবর্তী দূরত্বেই রয়েছে করিমগঞ্জের বালিখোলা হাওর। রয়েছে হাওররাণী খ্যাত পর্যটন এলাকা নিকলীর বেড়িবাঁধ। হাওরে এক দুর্নিবার আকর্ষণের নাম হয়ে ওঠেছে- অলওয়েদার সড়ক। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন সেখানে ছুটে যান সৌন্দর্য্য আর ভ্রমণপিপাসুরা।

বর্তমানে হাওড়ের এসব স্থানে নতুন করে গড়ে ওঠেছে রিসোর্ট, রেস্টুরেন্টসহ নানা পর্যটন সেবা প্রতিষ্ঠান। অলওয়েদার সড়ক, বালিখোলা হাওর ও নিকলীর বেড়িবাঁধ ছাড়াও হাওরে পর্যটকদের দেখার মতো বেশ কিছু মনোরম জায়গা রয়েছে। মিঠামইনের কামালপুরে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের বাড়ি, মিঠামইনের প্রান্তসীমায় দিল্লীর আখড়া, অষ্টগ্রামের কুতুবশাহী মসজিদ, ইটনার শাহী মসজিদ, জয়সিদ্ধিতে র‌্যাংলার আনন্দমোহন বসুর বাড়ি, ধনপুরের গুরুদয়াল সরকারের বাড়ি, নিকলীর হাওর, ছাতিরচরের করচবন, ছেত্রার নারায়ন গোস্বামীর, গোবিন্দপুরের চন্দ্রনাথ গোস্বামীর ও লাল গোস্বামীর আখড়া, সুলতানী আমলের গুরুই মসজিদ, দ্বীপ আখড়া কানাই ভিটা, করিমগঞ্জ-মিঠামইনের হাওরে হাসানপুর সেতু, মরিচখালী হাওর, নিকলী-করিমগঞ্জ প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ সড়ক, তাড়াইলের হিজলজানি হাওর ইত্যাদি স্থানে ভিড় জমান পর্যটকেরা।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহর থেকে সবচেয়ে কাছে হাওরের স্পর্শ পাওয়া যায় করিমগঞ্জ উপজেলার বালিখোলা এলাকায়। বালিখোলা থেকে মিঠামইনে যাওয়ার পথে হাসানপুর গ্রামের পাশে গড়াভাঙ্গা নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি হাসানপুর ব্রীজ নামে পরিচিত। প্রায় ১৫৭ মিটার দীর্ঘ ব্রীজের সাথে রয়েছে ১ দশমিক ১৭ কিলোমিটার অলওয়েদার সড়ক ও ১ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার সাবমার্চেবল সড়ক। বালিখোলা ঘাট থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে অনেকেই ছুটেন হাওর ভ্রমণে। নৌকাযোগে ছুটে যান অদূরের হাসানপুর ব্রীজে। বালিখলা ও হাসানপুর ব্রীজ ছাড়াও রয়েছে বেশ কয়েকটি বেড়িবাঁধ।

এসকল বেড়িবাঁধ বা সড়কে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে তাকালে ৩০-৩৫ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো গ্রাম চোখে পড়ে না। বাঁধ বা সড়কে দাঁড়িয়ে হাওর দেখা সাগর দেখার মতোই উপভোগ্য। হাজারো দর্শণার্থী রোজ ছুটেন হাওরের নির্মল বাতাসে বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়ার পাশাপাশি হাওরের সৌন্দর্য্ উপভোগ করার জন্য। হাওরের নান্দনিক স্থানের মধ্যে দর্শনার্থীদের কাছে পছন্দের আরেকটি নাম নিকলী বেড়িবাঁধ। নিকলী উপজেলা সদরে হাওরের ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষা করতে ২০০০ সালে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই বেড়িবাঁধটি নির্মাণ করা হয়। পরে ২০১০ সালে নিকলী উপজেলা পরিষদের সামনের প্রতিরক্ষা দেওয়াল বাঁধটিকেও বেড়িবাঁধ আকারে করে এর সাথে সংযুক্ত করা হয়। এরপর থেকেই দীর্ঘ ৬ কিলোমিটারের এই হাওর রক্ষা বাঁধটিকে কেন্দ্র করে নিকলী পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

বর্ষা এলেই জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শণার্থীরা ছুটেন নিকলীতে। এছাড়া নিকলী উপজেলা সদরের সাথে রাজধানী ঢাকাসহ জেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ থাকায় সেটিও দর্শণার্থীদের আগ্রহী করছে। নিকলী বেড়িবাঁধ থেকে ইঞ্জিন চালিত নৌকা ও স্পিডবোট ভাড়ায় নিয়ে দর্শণার্থীরা হাওরের মাঝে ভেসে বেড়ানোরও সুযোগ পাচ্ছেন।

এসকল কারণে বর্ষায় হাওরের সৌন্দর্য্য অবগাহনে হাজারো পর্যটক ভিড় জমান। বালিখোলা ঘাট, মিঠামইন বাজারের লঞ্চঘাট, নিকলী বেড়িবাঁধ ইত্যাদি পয়েন্টে স্পিডবোট, ট্রলার আর ইঞ্জিনচালিত নৌকার বহর লেগেই থাকে।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়