ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৫ ১৪৩১

এক যুগে মাংস উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১০:১৪, ৩০ মার্চ ২০২৪  

এক যুগে মাংস উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ

এক যুগে মাংস উৎপাদন বেড়েছে কয়েকগুণ

মাংস উৎপাদনে সরকারের নানামুখী উদ্যোগে ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। গত কয়েক বছরে সীমান্ত দিয়ে গবাদিপশুর অবৈধ বাণিজ্য রোধ এবং ব্যাপকভাবে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগের ফলে বাংলাদেশ মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশের প্রায় ৬৮ হাজারের বেশি নিবন্ধিত খামারে দুধ ও মাংস উৎপাদন হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে এসব খামারের গবাদিপশু দিয়ে সারবছর মাংসের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি কোরবানির চাহিদাও পূরণ হচ্ছে। ফলে এখন আর ভারত থেকে গরু আমদানি করতে হয় না। এতে একদিকে যেমন খামারিরা উপকৃত হচ্ছেন, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে যেখানে দেশে মাংস উৎপাদন হয়েছিল ৩৬ লাখ ২০ হাজার টন, সেখানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ৮৭ লাখ মেট্রিক টন।

জানা গেছে, দেশের আবহাওয়া উপযোগী লেয়ার হাঁস-মুরগির জাত উন্নয়ন, গ্র্যান্ড প্যারেন্ট স্টক ও প্যারেন্ট স্টক খামার স্থাপন, বাণিজ্যিক খামার সম্প্রসারণ এবং মানসম্মত পোলট্রি খাদ্য উৎপাদনে বিনিয়োগের ফলে ডিম উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সরকার। বাংলাদেশ পোলট্রি শিল্প কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের তথ্যমতে, প্রায় এক লাখ ৬৫ হাজার মানুষ ডিম ও মাংস উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্র, দেশে এখন ৮১ হাজার ৬১৪টি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। এদিকে বিগত দশকে কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির সম্প্রসারণ, জাত উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং প্রজনন সক্ষমতা দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চাল, মাছ, মাংস ও সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মাছ উৎপাদনকারী দেশ। বর্তমানে পুরো দেশজুড়ে প্রায় ৬৮ হাজারের বেশি নিবন্ধিত খামার রয়েছে, যা থেকে দুধ ও মাংস সহজেই মিলছে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাংসের উৎপাদন বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে ‘বিফ ক্যাটেল উন্নয়ন’ প্রকল্পের মাধ্যমে মাংসল জাতের গরু উৎপাদন এবং দুধের উৎপাদন বাড়াতে কৃত্রিম প্রজনন কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও ভ্রুণ স্থানান্তর প্রযুক্তি বাস্তবায়ন করা হয় এবং মহিষ উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে। বিএলআরআই লেয়ার-২ বা ‘স্বর্ণা’ নামের একটি লেয়ার স্টেইন উদ্ভাবন করা হয়েছে। মাঠপর্যায়ে মুরগিটির উৎপাদন সক্ষমতা সংক্রান্ত মূল্যায়ন কার্যক্রম চলমান আছে। এ মুরগিটি একটানা বছরে ২৮০টি ডিম দেয়। একই সঙ্গে মাংসের চাহিদাও পূরণ করে।

জানা গেছে, বিগত সময়ে কোরবানির পশুর বাজার ছিল আমদানিনির্ভর। ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি কোরবানির পশু আমদানি হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের প্রাণিসম্পদ খাত সংশ্লিষ্টদের তৎপরতায় সরকার আমদানি বন্ধ করেছে। সরকার গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের প্রকল্পও নিয়েছে। ফলে গত চার বছরে দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দ্বারা কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়েছে।

এ খাতের উন্নয়নে সরকার পাঁচ বছর মেয়াদে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সরকার এবং বিশ^ব্যাংক যৌথভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে। প্রকল্পের চিফ টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর ড. মো. গোলাম রাব্বানী আমাদের সময়কে বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় প্রশিক্ষণ, যন্ত্রপাতি, টিকা, ঔষুধ এবং প্রণোদনা দেওয়া হয়। পণ্য ডাইভারসিফিকেশনেও কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ম্যাচিং গ্রান্টের আওতায় উদ্যোক্তাদের ফিড মিল, মিল্ক কুলিং সেন্টার, ডেইরি হাব, দুধ প্রক্রিয়াজাতকরণ, গবাদিপশুর বর্জ্য থেকে তৈরি সার ব্যবস্থাপনাসহ ৯টি খাতে প্রয়োজনীয় অর্থের প্রায় ৪০% অনুদান দেওয়া হচ্ছে।

গোলাম রাব্বানী বলেন, আগে পশু রোগাক্রান্ত হলে হাসপাতালে আনতে হতো, এখন হাসপাতালের পাশাপাশি এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ৩৬০টি উপজেলায় মোবাইল ভ্যাটেরিনারি ক্লিনিক চালু করা হয়েছে। গবাদিপশুর জাত উন্নয়নে কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন দেশ থেকে উন্নত জাতের বকনা আমদানি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৪৬৫ উপজেলায় ফিডার প্রডাকশন ইউনিট চালু করা হয়েছে।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়